জুনে হওয়া বিএনপি নেতার মৃত্যুকে ছাত্র আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতা বাবুল মিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে গত ২২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এদিকে বাবুলের মৃত্যুসনদ বলছে, গত ৩ জুন স্ট্রোক করে মারা গেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী নুরুল আমীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'এসব সার্টিফিকেট জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে। তবে সে যদি আগে মারা গেছে এমন ডকুমেন্টস থাকে, তবে মামলা পরিবর্তন হবে সমস্যা নাই।'
মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার উকিল আমাকে যে তথ্য দিয়েছেন, সেইভাবে মামলা দায়ের করেছি। তার কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা এলাকায় খোঁজ নেন। কবে মৃত্যু হয়েছে এটা নিয়ে কোনা ভুল থাকলে আপনারা সেটি তুলে ধরতে পারেন সমস্যা নাই। তবে তাকে যে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই।'
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাবুল মিয়া দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি অংশ নেন । সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবুল মিয়াকে কালীবাড়ি বাজার থেকে উঠিয়ে দুপ্তারা ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও রড দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়।
এই মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে দেখা যায়, রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের ফকির নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ এবং ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদকে হত্যাকাণ্ডে অর্থযোগান দাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে অর্থ ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির এক প্রভাবশালীর নেতার ইশারায় তাদের আসামি করা হয়।
বাবুল মিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে একাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক বিএনপি নেতা জানান, বাবুল মিয়া জুন মাসে মারা গেছেন। তবে এর আগে চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তারা। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবুল মিয়া।
বাবুল মিয়ার মৃত্যু সনদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতায় এলাকায় অবস্থিত ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেড থেকে দেওয়ার মৃত্যুর সনদ অনুযায়ী, গত ৩ জুন স্ট্রোক করে ৪৯ বছর বয়সী বাবুল মিয়ার মৃত্যু হয়। বাবুলের বাবার নাম আলী হোসেন।
মামলা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এহসান উল্লাহ বলেন, 'কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমাকে নিতে হবে। সেজন্য নিয়েছি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই নিয়ে কাজ করছেন। এর পেছনে কেউ থাকলে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।'
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো. রিপন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'ঘটনাস্থলে একাধিকবার যাওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।'
বাবুল মিয়ার জুন মাসে মৃত্যু হয়েছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'মামলা নিয়েছেন ওসি স্যার। এখানে আমার কিছু করার নাই। মৃত্যুর সনদের কাগজগুলো আমিও পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আদালতের মাধ্যমে বাবুল মিয়ার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করব।'