এক ভাস্কর্যের ভেঙে পড়ায় মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তোলপাড়
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র রাজ্যে ১৭শ শতকের এক শাসকের বিশাল ভাস্কর্য ভেঙে পড়ায় রাজ্যে বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ভাস্কর্যটি ছিল ছত্রপতি শিবাজীর যিনি মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তার সময়েই সাহসী রাজা ও নায়ক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। রাজ্যে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু আইকন হিসেবে সম্মান করা হয়।
রাজ্যে নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগেই ভাস্কর্য ভেঙে পড়ার ঘটনা রাজ্যের শাসক জোটকে সমস্যায় ফেলেছে এবং বিরোধী দলগুলোকে একটি শক্তিশালী ইস্যু প্রদান করেছে।
এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি ডিসেম্বরে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন এবং তার দল বিজেপি মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের অংশ।
মোদি শুক্রবার ক্ষমা চাওয়ার সময় বলেন, "আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই যারা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে তাদের পূজিত দেবতা হিসেবে সম্মান করেন। আমি জানি তাদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।"
শিব সেনা এবং ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) বিভক্ত অংশের সাথে মিলে বিজেপি একটি জোটের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার চালায়।
গত সপ্তাহে এনসিপির সদস্যরা ভাস্কর্য ভেঙে পড়ার ঘটনায় "নীরব প্রতিবাদ" করেছেন এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
৩৫ ফুট (১০.৬ মিটার) উঁচু ভাস্কর্যটি ২৬ আগস্ট সিন্দুদুর্গ জেলায় ভারী বর্ষণের কারণে ভেঙে পড়ে। এর নির্মাণ খরচ ছিল ২৩.৬ মিলিয়ন রুপি।
বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের পদত্যাগ দাবি করেছেন এবং ভাস্কর্যটির নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বিরোধী নেতা শরদ পাওয়ার এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, "রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিবাজী ভাস্কর্য এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু শুধু নতুনভাবে স্থাপন করা ভাস্কর্যটি ধসে পড়েছে।"
"ভাস্কর্যটি স্থাপন করার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করা হয়েছে। এটি ছত্রপতি মহারাজের প্রতি অপমান," তিনি অভিযোগ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ভাস্কর্যটি উপকূলীয় শহরে প্রবল বাতাসের কারণে ভেঙে পড়েছে।
রাজ্যমন্ত্রী রবীন্দ্র চৌহান বলেছেন, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (তিনি এ বিভাগের প্রধান) ইতোমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীকে (যারা ভাস্কর্যটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল) জানিয়েছিল, ভাস্কর্যটি নাট-বল্টুতে জং ধরা পড়েছিল।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি আশীষ শেলারও জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং বলেছেন, ভুলটি সংশোধন করা হবে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। পুলিশ একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যিনি প্রকল্পের কাঠামোগত পরামর্শদাতা ছিলেন এবং ভাস্করকে খোঁজার চেষ্টা করছে।
শিবাজীকে ১৬৭৪ সালে রাজকোট দুর্গে ছত্রপতি (সংস্কৃতে রাজা) খেতাবে ভূষিত করা হয়েছিল। সেখানেই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। তিনি পশ্চিম, কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশ নিয়ে মারাঠা রাজ্য শাসন করেছিলেন। তাকে একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে দেখা হয়, যিনি তার সময়ের শাসক শক্তির সাথে সফলভাবে জোট তৈরি করেছেন বা সামরিকভাবে প্রতিরোধ করেছেন।
শিবাজী বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন এবং কোনো রাজনৈতিক দল তাকে অবজ্ঞা করতে বা অপমানের অভিযোগ থেকে বাঁচতে পারে না। শিবাজীর জাতের মারাঠারা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রাধান্য বিস্তার করেছে– রাজ্য গঠনের পর ২০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই মারাঠা ছিলেন।
রাজনীতিবিদরা মারাঠা সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করতে চান না, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা দাবি করে বারবার প্রতিবাদ করেছে।
বিরোধীরা আশা করছে, তারা এই বিষয়টিকে রাজ্য ও মারাঠা গর্বের অপমান হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে।
মহা বিকাশ আঘাদি (এমভিএ) নামক বিরোধী জোট রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ আয়োজন করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি পাল্টা প্রতিবাদ করেছে। এমভিএকে এই ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।