বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহতের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাল ঢাকা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে স্বর্ণা দাস নামের এক কিশোরী নিহতের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিহত স্বর্ণা মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। গত ১ সেপ্টেম্বর সে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনে প্রতিবাদ লিপি দেওয়া হয়েছে। যেখানে এই নৃশংসতার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবাদ লিপিতে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, সীমান্ত হত্যার এসব ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অযৌক্তিক, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ গাইডলাইন, ১৯৭৫ এর বিধান লঙ্ঘন করে।
তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এই ধরনের জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে, সব সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, গত রোববার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা। পরে তার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়। এর ৪৫ ঘণ্টা পর তার মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারত।
স্বর্ণার বাবা পরেন্দ্র দাস গণমাধ্যমকে জানান, তাদের চার ছেলে-মেয়ে। এক ছেলে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ত্রিপুরায় থাকেন। ছেলেকে দেখতে তার স্ত্রী সঞ্জিতা ছোট মেয়ে স্বর্ণাকে সঙ্গে নিয়ে রোববার রাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালারচক সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের এক দম্পতিও ছিলেন। রাত ৯টার দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, "তাদের সঙ্গে থাকা দম্পতিও আহত হন। গুলি থামার পর সঞ্জিতাসহ বাকিরা লালারচক গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। পরে আহত দম্পতিকে চিকিৎসার জন্য সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।"
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় জানান, 'আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বর্ণার মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এর ৪৬ ব্যাটালিয়নের লালারচক বর্ডার ফাঁড়ির (বিওপি) টহল কমান্ডার নায়েক ওবায়েদ বলেন, 'খবর পাওয়ার পর বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। এরপর ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে বিজিবি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে স্বর্ণার মরদেহ হস্তান্তর করে।'