যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পুতিনের প্রোপাগান্ডা-ইন-চিফ; কে এই মার্গারিটা সিমোনিয়ান?
রাশিয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডে (আরটি)-এর প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমেনিয়ানের ওপর ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিবিসি'র।
৪৪ বছর বয়সি এই সাংবাদিককে ক্রেমলিনের শীর্ষ প্রচারক এবং আদর্শবাদী হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়ে থাকে তিনি নাকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের থেকেও বেশি পুতিনবাদী।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তার নাম উঠে আসে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিজের নাম দেখে মার্গারিটা তার এক্স হ্যান্ডেলে মন্তব্য করেন, "ওহ, তারা জেগে উঠেছে"। তালিকায় থাকা আরটি'র অন্য কর্মীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ওয়েল ডান, টিম"।
অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মার্গারিটা তার নেতিবাচক মনোভাব আগেও প্রকাশ করেছেন। গত মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন পঞ্চম মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, পুতিন বাদে রাশিয়ায় যোগ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রয়োজন আছে কিনা। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "প্রয়োজন কী? আমরা তোমাদের মতো নই। এবং সত্যি বলতে, তোমাদের খুব একটা পছন্দ করি না।"
মার্গারিটার জন্ম রাশিয়ার ক্রাসনোডার অঞ্চলে, একটি আর্মেনিয়ান পরিবারে। ১৯৯৫ সালে তিনি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করতে যান, কিন্তু পরে রাশিয়ায় ফিরে টিভি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল অবরোধ নিয়ে তার রিপোর্টের পর তিনি আলোচনায় আসেন। চেচেন যোদ্ধাদের এই অবরোধ তিন দিন পর রক্তাক্তভাবে শেষ হয়, যেখানে ১৮৬ জন শিশুসহ শত শত মানুষ মারা যায়। এই ঘটনার পর মার্গারিটার দ্রুত পদোন্নতি হয় এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সেই আরটি-এর প্রধান নিযুক্ত হন।
এরপর থেকে দুই দশকের মধ্যে তিনি পশ্চিমাদের কঠোর সমালোচক এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন দৃঢ় সমর্থক হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে আরটি রাশিয়ার একটি আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য তাকে পুতিনের 'প্রোপাগান্ডা-ইন-চিফ' বলে সম্বোধন করে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই সংবাদমাধ্যমে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে আরটি ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তারা ইউক্রেনের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে 'কিয়েভ শাসন' বলে উল্লেখ করতে থাকে এবং পশ্চিমাদের ২০১৪ সালের বিপ্লব উসকে দেওয়ার এবং রাশিয়াকে ধ্বংস করার চেষ্টা করার অভিযোগ তোলে।
তবে মার্গারিটা শুধু রাশিয়ার বৈদেশিক প্রোপাগান্ডার নেতৃত্বই দেননি, তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ প্রচারণাতেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত রুশ রাজনৈতিক টিভি টক শোতে অংশ নেন তিনি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযানের পর, বহু বছর ধরে হুমকি দেওয়ার পর অবশেষে যুক্তরাজ্য আরটি নিষিদ্ধ করে।
এদিকে, রাশিয়ায় যুদ্ধের বিরোধিতা করে অনেক শীর্ষ সাংবাদিক ও সম্পাদক পদত্যাগ করেন। আরটি প্রধান যুদ্ধের বিরোধিতাকারী তার সাবেক সহকর্মী ও অন্যদের 'রাশিয়ান নয়' বলে অভিযুক্ত করেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম বড় গুপ্তচর কেলেঙ্কারির ঘটনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, যেখানে তিনি জার্মান বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ এবং ইউক্রেনের পক্ষে সেগুলো ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেন।
তার বর্তমান মতাদর্শ ক্রেমলিনের নীতির সঙ্গে এতটাই মিলে গেছে যে, তিনি প্রায়শই রাশিয়ার শত্রুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানান। তার মতে, রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলে গণভোট হওয়া উচিত এবং 'মানুষ যার সঙ্গে থাকতে চায়, তার সঙ্গে থাকতে দেওয়া উচিত'। এটাকে তিনি 'ন্যায্য' বলেও আখ্যা দেন।
এছাড়াও, মার্গারিটা রাশিয়ার বিরোধী নেতাদের 'ফাঁসিতে ঝোলানোর' আহ্বান জানিয়েছেন এবং আরও দাবি করেছেন যে রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে ইউরোপের আরও গভীরে আক্রমণের জন্য পাঠানো উচিত।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন