ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও অস্থিরতায় জুলাইয়ে ব্যাংকে আমানত কমেছে ৮,২০০ কোটি টাকা
জুলাই মাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত কমেছে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আমানত কমার মূল কারণ পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, তিন দিন ব্যাংক বন্ধ থাকা ও দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রমে সাধারণ মন্দা নেমে আসা।
অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে হাতের কাছে নগদ অর্থ রাখতে চাওয়ায় আমানত কমার সঙ্গে সঙ্গে জুলাইয়ে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণও বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ে মোট আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ১৭.৪২ লাখ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে ০.৪৭ শতাংশ কম। গতবছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.৯১ শতাংশ, যা গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এরচেয়ে কম ৭.৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০২৩ সালের মার্চে।
ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কেন কমেছে জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জুলাই মাসে আমাদের ব্যাংকে (ব্যাংক এশিয়ায়) আমানত বাড়লেও পুরো ব্যাংক খাতে বাড়েনি।
'এর অন্যতম কারণ, জুলাই মাসের বেশিরভাগ দিন দেশে অস্থিরতা বিরাজ করা, ইন্টারনেট ব্লকেজ এবং সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকা। এছাড়া বেশ কিছু ব্যাংক থেকে অনিয়ম করে ঋণ বের করে নেওয়ার মতো নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হওয়ায় গ্রাহকদের একটা আস্থাহীনতাও তৈরি হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'জুলাই মাসে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা সম্ভব হলেও আমানত সেভাবে বাড়েনি। সিস্টেম থেকে আমানত যেটা বের হয়েছিল, সেটা ব্যাংকে ফেরার গতিও কমেছে।'
তবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যেতে শুরু করেছে মন্তব্য করে এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর দিকে নজর দিতে হবে।
'ইতিমধ্যে রেমিট্যান্স বাড়ার মতো কিছু পজিটিভ সিগন্যাল আমরা দেখতে পাচ্ছি। একইসঙ্গে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩০ হাজার কোটি টাকা ফিরে এসেছে। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'
মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে পূবালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী টিবিএসকে বলেন, 'জুলাইয়ে আমানত তুলে নেওয়ার কারণে ব্যাংকের বাইরে টাকা পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে শক্তিশালী ব্যাংকগুলো ভালো আমানত পাচ্ছে।'
'ব্যাংকিং খাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য,' বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই শেষে ব্যাংকের বাইরে বা মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৯১ লাখ কোটি টাকা। জুনের তুলনায় এটি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের জুলাই মাস মানুষের হাতে ২.৬৬ লাখ কোটি টাকা ছিল।
অর্থনীতিবিদদের মতে, টাকা ব্যাংকে থাকলে সেটি যে গতিতে আমানত ও ঋণ তৈরি করতে পারে, ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকলে এর গতি অনেক কম হয়। ফলে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জুলাই মাসে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা এবং মূল্যস্ফীতি থাকার কারণে মানুষ হাতে নগদ টাকা রাখতে চেয়েছে। তবে আগস্টে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের রেকর্ড ১১.৬৬ শতাংশ থেকে কমে আগস্টে ১০.৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কমেছে ১.১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট।