কোমায় থাকা রোগীদের এক চতুর্থাংশের অল্প পরিমাণে হলেও জ্ঞান থাকে: গবেষণা
স্নায়ুবিজ্ঞানী ইগনাসিও মোরগাডো কয়েক বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ২৫ বছর বয়সি এক যুবকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ঐ যুবক নিজের দৈনন্দিন কাজ (যেমন খাওয়া-দাওয়া, চলাচল, ঘুম) করতে পারতেন, তবে তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন না।
এই ঘটনার বিষয়ে ইগনাসিও বলেন, "আমি বুঝতে পারছিলাম না, লোকটি সজ্ঞানে আছেন কি না। তবে তিনি যোগাযোগ করতে পারছিলেন না, বা হয়তো অচেতন অবস্থায় ছিলেন।"
এ ধরনের সমস্যা নতুন নয়। গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার পরে অনেক সময় রোগীরা চোখ নাড়াতে পারেন, কিন্তু কেউ কথা বললে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল ২৪১ জন কোমায় থাকা রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, কোমায় থাকা প্রতি চারজনের একজনের কিছুটা হলেও জ্ঞান থাকে।
প্রায়ই দেখা যায়, কোমায় থাকা রোগীদের পরিবার জানতে চান, তাদের প্রিয়জনেরা কি তাদের কথা শুনতে বা বুঝতে পারছেন। এমনকি রোগীরা কি তাদের চিনতে পারছেন তা বোঝারও চেষ্টা করা হয়। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই করা গবেষণাটি দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত হয়েছে।
ইগনাসিও বলেন, "পরিবারগুলোকে একটি অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়—তাদের প্রিয়জনের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করা উচিত কি না।"
এ গবেষণার জন্য ছয়টি গবেষণাকেন্দ্রে কোমায় থাকা রোগীদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, রোগীদের টেনিস খেলার কথা কল্পনা করতে বলা হয়েছিল। এতে দেখা গেছে, চারজনের মধ্যে একজনের মস্তিষ্ক সুস্থ মানুষের মতোই খেলার সংকেত তৈরি করেছে। এর থেকে বোঝা যায়, তাদের কিছুটা হলেও জ্ঞান আছে।
এ ধরনের গবেষণা আগেও হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে বিজ্ঞানী আদ্রিয়ান ওয়েন কোমায় থাকা রোগীদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
ঐ গবেষণায় দেখা গেছে, স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার বাইরে কোনও কাজের ক্ষেত্রে যদি রোগীরা সাড়া দেন, তবে তাদের কিছুটা হলেও জ্ঞান রয়েছে। এই গবেষণাটি ২০০৭ সালে জার্নাল সায়েন্স-এ প্রকাশিত হয়।
তবে ২০০৭ সালের গবেষণার তুলনায় এ গবেষণায় কোমায় থাকা রোগীদের সজ্ঞানের হার কিছুটা কম এসেছে। নতুন এই গবেষণায় আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বেশি নমুনা নিয়ে আরও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ডেভিনিয়া ফার্নান্ডেজ বলেন, "আমাদের বর্তমান অনুমান অনুযায়ী, কোমায় থাকা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর কিছুটা সজ্ঞানতা থাকতে পারে। এই হার আরও বেশি হতে পারে, তবে সংখ্যাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল কথা হলো, এটি একটি উল্লেখযোগ্য শতাংশ, যা আমাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান