এলএনজি আমদানির বকেয়া বিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ও মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরন থেকে কেনা গ্যাসের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০৭ মিলিয়ন ডলার।
জ্বালানি বিভাগের তথ্য বলছে, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির বিল ছাড়াও স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা এলএনজির জুলাই-আগস্টের বিলও বকেয়া রয়েছে।
৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল ৬৩৩ মিলিয়ন ডলার। ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি কাতার এনার্জিকে ২৫.৬১ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে সরকার।
এতে বকেয়া কমে ৬০৭.৩৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
কর্মকর্তারা জানান, ডলার সরবরাহের মাধ্যমে এসব বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে জ্বালানি বিভাগ।
বর্তমাসে দেশে গ্যাসের সংকট বেড়েছে। ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানির বকেয়া বাড়ার কারণ ছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক না হওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির অনুমোদন আটকে ছিল।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকটও প্রকট রূপ ধারণ করছে। কারণ, অনেক প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঠিকমতো পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে কক্সবাজারের দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) মধ্যে একটি অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে আমদানি করা এলএনজি খালাসের সক্ষমতাও অর্ধেকে নেমে আসে।
১১ সেপ্টেম্বর থেকে দু'টি এফএসআরইউ সচল হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এ দুটি এফএসআরইউয়ের মাধ্যমে দৈনিক ১,১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'বকেয়ার পরিমাণ বেশি থাকায় গত ২ সেপ্টেম্বর ও ৯ সেপ্টেম্বর দুই কার্গো এলএনজি খালাস না করে সরবরাহকারী দেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। জ্বালানি বিভাগ জরুরিভাবে অনুরোধ করে তা খালাস করার ব্যবস্থা করেছে।'
ওই কর্মকর্তা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্রতর হলে জুলাই ও আগস্টের শুরুতে ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদেশের সঙ্গে লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বর্তমানে বকেয়া দায় পরিশোধের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানি শেভনের সরবরাহ করা গ্যাসের বিল বাবদ ২২৪.৮২ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে। পরদিন কোম্পানিটিকে সর্বশেষ ৩.৪২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে শেভরনের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২২১.৪০ মিলিয়ন ডলার।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত শেভরনের মোট সাতটি বিল বকেয়া পড়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার অনুরোধ করেছেন শেভরনের কর্মকর্তারা।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাতার এনার্জির বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৪ মিলিয়ন ডলার ও ওমান ওকিউটির বকেয়া দাঁড়ায় ১০০ মিলিয়ন ডলার। ১০ সেপ্টেম্বর সরকার কাতার এনার্জিকে ৬.১৯ মিলিয়ন ডলার ও ওমানকে ৩ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।
এছাড়া ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ঋণ নিয়ে কাতার এনার্জির দুটি বিল গত মে ও জুলাই মাসে পরিশোধ করে জ্বালানি বিভাগ। মে মাসে আইটিএফসির সেই ঋণের একটি কিস্তিও বকেয়া পড়েছে।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া, গানভর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড ও এক্সেলারেট এনার্জির মাধ্যমে গ্যাস কিনেছে জ্বালানি বিভাগ। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা গ্যাসের ৮৭.২০ মিলিয়ন ডলার এখনও বকেয়া রয়েছে।