১৯৫০ সালের পর প্রথমবারের মতো অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বাড়ালো চীন
চীন ১৯৫০ সালের পর থেকে প্রথমবারের মতো ধীরে ধীরে দেশটির নাগরিকদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং পেনশন তহবিল সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চীনের শীর্ষ আইনসভা থেকে নারী কর্মীদের জন্য অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে, শারীরিক শ্রমনির্ভর কাজে নিয়োজিত নারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫০ থেকে ৫৫ এবং দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৫ থেকে ৫৮ বছর করা হবে। পুরুষদের জন্য অবসর গ্রহণের বয়স ৬০ থেকে ৬৩ বছর করা হবে।
চীনের বর্তমান অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বিশ্বে অন্যতম সর্বনিম্ন।
শুক্রবার পাস হওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ পরিবর্তিত বয়সসীমা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। আগামী ১৫ বছরে ধাপে ধাপে কয়েক মাস পরপর অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানো হবে বলে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, নির্ধারিত বয়সের আগে অবসর গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে, কেউ চাইলে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত অবসর গ্রহণ বিলম্বিত করতে পারবেন।
২০৩০ সাল থেকে কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে আরো বেশি অবদান রাখতে হবে, যাতে তারা পেনশন পেতে পারেন। ২০৩৯ সালের মধ্যে পেনশন পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ বছর ধরে এই তহবিলে অবদান রাখতে হবে।
২০১৯ সালে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত সোশ্যাল সায়েন্স একাডেমি জানিয়েছিল, দেশের প্রধান পেনশন তহবিল ২০৩৫ সালের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল কোভিড ১৯ মহামারির আগে, যা চীনের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেয়।
অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানো এবং পেনশন নীতিতে পরিবর্তনের পরিকল্পনা "চীনের গড় আয়ু, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, জনসংখ্যার গঠন, শিক্ষার স্তর এবং কর্মশক্তির সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে" বলে শিনহুয়া জানিয়েছে।
তবে এই ঘোষণা দেশটির বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে কিছু সংশয় এবং অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। একজন ব্যক্তি চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে লিখেছেন, "আগামী ১০ বছরের মধ্যে আবারও একটি বিল আসবে, যা অবসর গ্রহণের বয়স ৮০ পর্যন্ত বাড়াবে।"
অন্য এক ব্যক্তি হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন, "কী দুর্দশার বছর! মধ্যবয়সী কর্মীরা বেতন কর্তন ও অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে। আর যারা বেকার, তাদের জন্য চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।"
চীনের বিশাল জনসংখ্যা ২০২৩ সালে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমেছে কারণ দেশটির জন্মহার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে, চীনে গড় আয়ু বেড়ে ৭৮.২ বছরে পৌঁছেছে বলে এই বছরের শুরুর দিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ৪০২ মিলিয়ন মানুষ ৬০ বছর বা তার বেশী বয়সী হবে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৫৪ মিলিয়ন।
জনসংখ্যা সংক্রান্ত সংকটের উদ্ভব
চীনের অর্থনীতির ধীরগতি, সরকারি সুবিধা কমে যাওয়া এবং দীর্ঘদিনের 'এক সন্তান' নীতির ফলে দেশটি ধীরে ধীরে একটি মারাত্মক জনসংখ্যা সংক্রান্ত সংকটের মুখে পড়ছে বলে চীনা সংবাদদাতা লরা বিকার এ বছরের শুরুতে লিখেছিলেন।
চীনের পেনশন তহবিল দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং বৃদ্ধদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠনের সময় ফুরিয়ে আসছে। আগামী এক দশকে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ দেশটির কর্মশক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। এটি চীনের সবচেয়ে বড় বয়স্ক গোষ্ঠী হতে যাচ্ছে, যা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমান।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়