কুষ্টিয়ায় প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন, বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
কুষ্টিয়ায় টানা চার দিনের প্রবল বর্ষণে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। সকাল-সন্ধ্যা বিরামহীন ঝরছে বৃষ্টি, এতে করে নাকাল হয়ে পড়ছে কুষ্টিয়াবাসী। বিশেষ করে, খেটে খাওয়া মানুষ ও দিনমজুরেরা পড়েছে চরম বিপাকে। সেইসাথে অফিসগামী সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগও অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা চার দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে কুষ্টিয়ায়।
গত শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টিতে আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া, কোর্টপাড়া, আড়ুয়াপাড়া, কুঠিপাড়া, আমলাপাড়া, বড় বাজার, মিলপাড়াসহ প্রভৃতি এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। আদালত চত্বরসহ সরকারি দপ্তরে প্রবেশ করতে পারছেন না ভুক্তভোগী ও সেবাপ্রত্যাশীরা। ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে, গরু-ছাগল নিয়েও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে কৃষকেরা।
শহর ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে, দোকানের সামনের রাস্তাগুলোতে পানি থাকায় মানুষের চলাচল কম। শহরের এন এস রোডের বেশ কয়েকজন দোকানদারের সাথে কথাও হয়। তারা জানান, প্রবল বর্ষণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে, বেচাকেনাও নেই – তাই দোকানপাট বন্ধ রেখেছি।
আব্দুল আলিম নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস হচ্ছে। সকালে গাড়ি নিয়ে বাইরে আসলাম ভাড়ার উদ্দেশ্যে। তবে রাস্তায় তেমন একটা মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মিরপুর এলাকার রফিক নামের একজন বলেন, বৃষ্টির কারণে গরু-ছাগলের জন্য কাঁচা খাবার আনতে পারছি না। ঠিকমতো খাবারও দিতে পারছি না।
কুমারখালী উপজেলা শিলাইদহ ইউনিয়নের কৃষক আজিজ মিয়া জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে তাদের এলাকার ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়েছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা চার দিন ধরে কুষ্টিয়ায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার বেলা ১২টা থেকে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত জেলায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। কিন্তু সেটিও অতিক্রম করে রোববার বেলা ১২টা থেকে সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ১২৮.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এটি এই বছরে (কুষ্টিয়ায়) সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে চলতি বছরের ১২ জুলাই সর্বোচ্চ ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
এদিকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনও তেমন উন্নত হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থাও একেবারেই দুর্বল, ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে পানি উঠে আসে রাস্তায়।
পানি উঠে গেছে স্কুল-কলেজগুলোতেও – ফলে শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না। প্রবল বর্ষণে মাঠ-ঘাট ডুবে যাওয়ায় চাষিরাও বেকায়দায় আছেন।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে কলা, তুলা, মরিচ, সবজি ও কলাই ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পেয়েছি।