চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল হোসেন (৩০) নামের এক যুবক নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন, ফজলুল হক মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া (২৫), মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২১), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল। গ্রেপ্তার আরেক শিক্ষার্থীর নাম আহসান উল্লাহ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি বলেন, নিহতের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তাদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) টিমও কাজ করছে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারা ঘটিয়েছে এবং কী কারণে ঘটিয়েছে সেটি তদন্তের বিষয়। আশা করি তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
এর আগে আজ দুপুরে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ (৩২)।
মামলার বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন শাহীন নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এক যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেইটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল। তখন কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যায়। এর পর মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ এনে ওই যুবককে এলোপাথারি চর থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারা হয়।
পরবর্তী সময়ে ওই যুবক মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। এর পর উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র আবারও হলের দক্ষিণ ভবনে গেস্ট রুমে নিয়ে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক ওই যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাত পৌনে ১টায় চিকিৎসক ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে চোর সন্দেহে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জলকে দফায় দফায় মারধর করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে।
হল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে হলের মাঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা চলাকালীন ৬টা মোবাইল চুরি হয়। পরে তোফাজ্জল হলে ঢুকলে তাকে আটক করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা, তোফাজ্জলই ফোন চুরি করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মেরেছে জালাল, সুমন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ, ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের মোত্তাকিন সাকিন। তারা সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।
আরেকটি সূত্র জানায়, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতান প্রথমে চোর সন্দেহে তাকে গেস্টরুমে নিয়ে আসেন। সূত্রটির তথ্যমতে, মারধরে জড়িত ছিলেন- মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের রাশেদ কামাল অনিক, গণিত বিভাগের রাব্বি এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল। এছাড়া সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মারধরের ঘটনায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সেশনের শিক্ষার্থীরা জড়িয়েছে।