আমড়ার ভাসমান হাট: এগিয়ে নিচ্ছে ঝালকাঠির অর্থনীতিকে
দেশে চলমান বিভিন্ন অস্থিরতার প্রভাবে ঝালকাঠির ভিমরুলী ভাসমান হাটে পেয়ারার দামে ধস নেমেছিল। সেই ধস কাটিয়ে মৌসুমের শুরুতেই জমজমাট হয়ে উঠেছে আমড়ার হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমজমাট থাকে ভিমরুলীসহ আশপাশের বাজার।
ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমড়া বিক্রি হবে এই হাটে— যা গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে।
শুধু ভিমরুলীই নয়— সদর উপজেলার শতদশকাঠি, ডুমুরিয়া, আতাসহ আশেপাশের কমপক্ষে দশটি গ্রামে আমড়ার ভাসমান বাজারের বিস্তার ঘটেছে। সাধারণত ভাদ্র মাসের শুরুতেই জমতে থাকে আমড়ার বাজার। চলে টানা দুইমাস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৪৭০ জন কৃষক ৬০২ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ করেছেন। এই আবাদে অন্তত ৪ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে।
স্বাদ ও মানসম্মত আকৃতির কারণে দেশজুড়ে ঝালকাঠির আমড়া বেশ বিখ্যাত। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমড়া চাষ হয় এই জেলায়। অনেকেই ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে আমড়া চাষ করে সফল হয়েছেন।
তেমনি একজন ভিমরুলীর গোপাল হালদার। তিনি জানান, "এ বছর পেয়ারা বিক্রি করে কোনো লাভই তুলতে পারিনি। তারচেয়ে বর্তমানে আমড়ার বাজার সন্তোষজনক। প্রতিমণ আমড়া বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা দরে। এই দাম সামনে আরো বাড়তে পারে।
আরেক চাষী বরুণ কুমার বলেন, "পেয়ারায় ফলন ভালো পাচ্ছি না। পাতায় ছত্রাক ধরেছে। ফল সাইজে ছোট হয়ে গেছে। এজন্য পেয়ারা গাছ কেটে আমড়া চাষ করেছি বছর পাঁচেক হলো। ইতোমধ্যে ফলন পেতে শুরু করেছি।"
তিনি আরও জানান, পেয়ারার চেয়ে আমড়ার ভালো দিক হলো– এই ফল দ্রুত পঁচে যায় না। ২০-২৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। যে কারণে পঁচে যাওয়ার ভয়ে চাষীদের বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয় না।
শ্রমিক শাহীন বলেন, "বড় বাগান থেকে আমড়া পড়তে লোক লাগে। আমার বাড়ি পিরোজপুরে হলেও পেয়ারা-আমড়ার মৌসুমে ভিমরুলী, আটঘরম কুড়িআনা এলাকায় থাকি। দৈনিক মজুরিতে ফল পেড়ে দেই গাছ থেকে।"
এদিকে, ভিমরুলী বাজারের পাইকারী ক্রেতা মামুন বলেন, "পেয়ারার বাজার এ বছর তুলনামূলক কমে গেছে। কিন্তু আমড়ায় চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। পরিপক্ব ভালো সাইজের আমড়ার মণ ১৪/১৫শ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। এত দাম দিয়ে কিনে পরিবহন খরচ দিয়ে আমরা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে কীভাবে লাভ করবো?"
আবুল কালাম নামে আরেক চাষী বলেন, "অন্য ফসলের তুলনায় আমড়া চাষে খরচ কম। একবার গাছ টিকে গেলে ৫/৭ বছর ধরে ভালো ফলন আসে। তখন শুধু পরিচর্যা করলেই হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আরও সহজ হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের আমড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতে।"
তিনি বলেন, সারাদেশেই দক্ষিণাঞ্চলের আমড়ার চাহিদা খুব বেশি।
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, "আমড়ার চাষ ঝালকাঠিতে দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ বছর জেলায় ৬০২ হেক্টর জমিতে আমড়ার আবাদ হয়েছে। আবাদি জমি থেকে ৪ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন আমড়া উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।"
তিনি বলেন, "গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ফসল হচ্ছে ঝালকাঠির আমড়া। এই জেলার ভাসমান বাজারকে ঘিরে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার খুলেছে, তাতে আমড়া চাষ ভালো ভূমিকা রাখছে।"
"কিছুদিন আগেও পেয়ারা ছিল। এখন আমড়ার মৌসুম। দিনে দিনে অনেক স্থানে আমড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা," যোগ করেন তিনি।