বাজারে বেশিরভাগ সবজির কেজি এখন ১০০ টাকা
গত দেড় মাসের ব্যবধানে কাঁচবাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে প্রতিকেজি এখন ১০০ টাকা বা তারচেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমেছে। পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজিও এই সময়ে অনেকে চাষ করতে পারেননি; আবার যারা করেছেন, তাদেরও ক্ষতি হয়েছে— এটিও দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশ দিয়ে প্রায় ৪ ধরনের সবজি কিনে হেঁটে যাচ্ছিলেন মোহম্মদ আনিসুর।
প্রতিকেজি সবজি কত টাকা দিয়ে কিনেছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সব সবজির কেজিই ১০০ টাকা করে।"
এ সময় রাস্তার পাশের সবজি বিক্রেতা মোহম্মদ মনির জানালেন, পেঁপের কেজি ৩৫ টাকা, আলু ৬০ টাকা, আর মুলার কেজি ৯০ টাকা ছাড়া বাকি সব সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে।
"প্রতিকেজি কাঁকরোল , লম্বা বেগুন, পটল, ঢেঁড়স— সব সজির কেজি ১০০ টাকা," জানালেন এই বিক্রেতা।
দাম বাড়ার কারণে সীমিত আয়ের মানুষেরা এখন সবজি কম কিনছেন বলে জানান তিনি। যার এককেজি প্রয়োজন, তিনি হয়তো নিচ্ছেন আধাকেজি।
শুক্রবার কল্যাণপুর ও কারওয়ান বাজারে ৮ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা সবাই জানান, সবজির সরবরাহে ঘটতি রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের খুবচার বিক্রেতা মোহম্মদ আজাদ বলেন, "স্বাভাবিকের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির ট্রাক ৫০ শতাংশ কম প্রবেশ করছে। ট্রাক কম, কিন্তু পাইকারি ক্রেতা বেশি তাই— চাহিদা থাকায় দামও বেশি হচ্ছে।"
আজাদ বলেন, সারাদেশে বৃষ্টি ও বন্যায় সবজি নষ্ট হয়েছে। এর ফলে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, "শীতের সবজি কিছু আগাম আসতো। তবে অতি বৃষ্টিতে এবার শিমের ফুল পড়ে গেছে। পানিতে অনেক শিম গাছ মরে গেছে। তাই এখন যে শিম আসছে, সেটি প্রতিকেজি ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছি।"
"পেঁপে ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম ১০০ টাকা কেজি। করলা, গোলবেগুন, ঝিঙা, চিচিঙা ও ধুন্দল— এসব সবজির দর কেজিতে ১০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগের তুলনা কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে দাম। আর দেড় মাসের হিসাব করলে এসব সবজির দাম দ্বিগুণ বেড়ে ১০০ টাকা কেজি হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা মোহম্মদ সুমন বলেন, "বৃষ্টি হওয়ায় পানি জমে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।"
বাংলাদেশ পাইকারি কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, "অতি বৃষ্টিতে নিচু এলাকার অনেক সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। তাই সবজি উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেশি।"
শীতকালীন সবজি যেমন— ফুলকপি, বাঁধাকপি ও শিম— বেশি হয় উত্তরবঙ্গ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও খুলনা অঞ্চলে। কিন্তু সেসব এলাকার নিচু জমিতে বন্যা ও বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় সবজি চাষ করা যায়নি। তাই সার্বিকভাবে উৎপাদন কম হাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি।
এখনও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ডিম-মুরগির দাম বেশি
এদিকে, ডিমের দাম কিছুটা কমলেও সরকার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরেই বিক্রি হচ্ছে ডিম।
ডিম ও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা দরে বিক্রি হবে। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা করে। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়বে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর, হাতিরপুল বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০-১৭০ টাকায়— যা গত সপ্তাহের শুরুতে ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
আর ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২০৫ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় ক্রেতা সুভাস সাহার সঙ্গে। ষাটোর্ধ্ব এই ক্রেতা বলেন, "বর্তমান সরকার মুখেই বলছে নিত্যপণ্যর দাম কমাবে বাজারে, কিন্তু আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাজার মনিটরিংয়ের কথা শুনেছি, কিন্তু কোথায় তারা? আমরাতো বাজারে তাদের দেখছিনা।"
তিনি বলেন, "বেসরকারি চাকরি করি, আমাদের বেতন তো বাড়ছে না। কিন্তু খচর বেড়েই যাচ্ছে। তাই খরচ বাঁচতে যেখানে এককেজি বেগুন কিনতাম, সেখানে এখন আধাকেজি কিনছি। ডিম সপ্তাহে ২টি খেতাম, এখন ১টি খাচ্ছি। খুব হিমশিম যাচ্ছে আমাদের।"
পাশে থেকে আরেক ক্রেতা মোহম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, "যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে, তাহলে সব ঠিক হবে বলে আশা করি। আমরা শুধু অযুহাত দেই। এখন বলছি বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম, তাই ডিমের দাম বেশি। একটা না একটা অযুহাত থাকবেই। অন্য দেশগুলোতে তো এমন লাফ দিয়ে পণ্যর দাম বাড়তে শুনি না কখনও।"
এদিকে, ভারত রপ্তানির শর্ত শিথিল করায় দেশের বন্দরগুলো দিয়ে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। তারপরও দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা দরে।
এদিকে শুক্রবার, অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, "ব্যবসায়ীরা দাবি করেছিলেন, ডিমের সংকট আছে। পরে আমদানির খবরে ডিমের দাম কিছুটা কমে গেল। এতেই বোঝা যায়, ডিমের যে দাম বৃদ্ধি– সেটা কারসাজি। কোনো ধরনের কারসাজি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।"
উপদেষ্টা আরও বলেন, "কিছু মৌসুমে প্রাকৃতিক কারণেও ডিমের উৎপাদন কমে যায়। রমজানে ডিমের ব্যবহার কমে যায়। তাই মজুদ নয়, চাহিদার আলোকে কোল্ডস্টোরেজ করার চিন্তা করতে হবে।"
"এছাড়া, ডিমকে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে," যোগ করেন তিনি।