ট্রাম্পের স্বাস্থ্যের ইতিবাচক অগ্রগতির রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা
চীনের করোনাযুদ্ধের সম্মুখসারির চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোভিড-১৯ সংক্রমণে গুরুতর শারীরিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এব্যাপারে ট্রাম্পের চিকিৎসক দল যে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা শুনিয়েছেন, তা নিয়েও দৃঢ় সন্দেহ রয়েছে চীনা বিশেষজ্ঞদের।
ইতোপূর্বে, গত সোমবার ওয়াল্টার রিড সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই গাড়িতে করে ভ্রমণে বের হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার স্বাস্থ্যের অগ্রগতির বিষয়ে নিয়মিত খবরা-খবর রাখা নেটিজেনরা এ ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রপতির এ ভ্রমণ খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই তীব্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা; অসুস্থ হলেও জনসম্মুখে আসার মধ্য দিয়ে- তিনি নিজের স্বাস্থ্য উন্নতির দিকে এবং পুনঃনির্বাচিত হওয়ার মতো সবল আছেন, এমন রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছেন।
তবে এ ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন এবং তার আশেপাশের লোকদের জীবনও হুমকিতে ফেলেছেন, বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন।
তাছাড়া, প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে ট্রাম্পের নিজস্ব চিকিৎসক দল যে খবর দিচ্ছেন, তাতে হিতে-বিপরীত হতে পারে। ইতোমধ্যেই, হোয়াইট হাউজের দেওয়া পরস্পর বিরোধী বিবৃতিতে মার্কিন জনতার মাঝে ট্রাম্পের সংক্রমণ এবং চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু বিশেষ ইয়াং ঝংকিউ চীনের রাস্ট্রায়ত্ত ইংরেজি ভাষার দৈনিক গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, '' ট্রাম্পের বয়স ৭৪ বছর। তার ওজন অনেকটা বেশি। এমন অবস্থায় কেউ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হলে- তার জন্য ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। ইতোমধ্যেই তার দেহে ডেক্সামেথাসোন স্টেরয়েড (এক ধরনের হরমোন জাতীয় ওষুধ) দেওয়া হয়েছে। সাধারণত গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীদেরকেই এটি দেওয়া হয়। তাই যা বলা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তার চাইতেও ট্রাম্পের সংক্রমণ যে গুরুতর অবনতির শিকার হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।''
তিনি জানান, ''উহানেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ডেক্সামেথাসোন দেওয়া হয়েছিল, যা সঙ্কটাপন্নদের প্রাণ বাঁচাতে অনেকটা সফল হয়। পাশপাশি তাদের অক্সিজেন দেওয়া হয় বা ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। অনেক ধরনের হরমোনের মিশ্রণ থাকায় এটি মৃদু আক্রান্ত রোগীকে দেওয়া হয় না।''
ইয়াং মনে করেন, হোয়াইট হাউজ তথ্য গোপন করার কারণেই মার্কিন নাগরিকদের মনে প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, শনিবার ওয়াল্টার রিড হাসপাতাল থেকে ট্রাম্প যে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন, সেটি থেকে সম্পাদনার মাধ্যমে কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষ করেছেন চীনের ফিল্ম এডিটররা। তারা জানান, 'থেরাপিউটিক্স' শব্দটি উচ্চারণের সময় ট্রাম্প কাশি লুকানোর চেষ্টা করেছেন, যা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
টুইটারে এক চীনা ফিল্ম এডিটর লেখেন, এতে করে বোঝা যায়; ট্রাম্প নিজের সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে মার্কিন নাগরিকদের নিশ্চিত করতে চাইছেন।
তবে গত শুক্রবার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত পতনের প্রেক্ষিতেই ট্রাম্পকে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এদিন তাকে অতিরিক্ত অক্সিজেনও দেওয়া হয়।
এব্যাপারে ইয়াং বলেন, সংক্রমণের প্রভাব মৃদু হলে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে হোয়াইট হাউজেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হতো। এখন নিউক্লিক এসিড টেস্ট না করে তাকে সেখান থেকে ছাড়াও হবে না। তাই অচিরেই তিনি হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন, বলে ট্রাম্পের মেডিকেল টিম যে আশাবাদী কথা শুনিয়েছে- তা বাস্তবে রুপ নেবে না।
ফলশ্রুতিতে, জনগণের কাছে আরেকদফা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সঙ্কটে পড়বেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি।
- সূত্র: গ্লোবাল টাইমস