বিশ্বসেরা ধনীর কাতারে এখন জুম সিইও এরিক ইউয়ান
করোনাভাইরাস এমন এক মহামারী যার শুরুটা নিয়ে গতবছর অধিকাংশ মানুষ ও গণমাধ্যম তেমন ব্যস্ত হয়নি। প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা বৈশ্বিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে সেকথাও হয়তো বিশেষজ্ঞ মহলের কেউ কেউ ভেবেছেন। অন্যরা ছিলেন নিশ্চিন্ত।
চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন জীবাণুটির হুমকি সম্পর্কে নিশ্চিত করে। তারপর কেটে গেছে প্রায় এক বছর। যেসব দেশে সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন সেখানে বাড়িতে বসেই দপ্তরের কাজ সারছেন কর্মীরা। ব্যবসায়ীরা সেরে ফেলছেন বাণিজ্যিক চুক্তির আলাপ- আলোচনা। এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সভা-সেমিনার, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রশাসনিক বৈঠক সবকিছুতেই ব্যবহার বেড়েছে ভিডিওকলের।
আবার সংক্রমণ এড়াতে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রেক্ষাগ্রহ, স্টেডিয়াম বা উপাসনালয় অনেক দেশে বন্ধ, তখন ভিডিওকল হয়ে উঠেছে সামাজিক বন্ধন রক্ষার মাধ্যম।
আইসোলেশনে প্রিয়জনের সানিধ্য পেতে প্রযুক্তির অবদানটি হয় একাকীত্বের মাঝেও এক অনন্য আশীর্বাদ। এই জোয়ারে চলতি বছর সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ হয়ে ওঠে জুম, যার কথা একবারও উল্লেখ না করে চলতি মহামারীর ইতিহাস লেখাও এখন প্রায় অসম্ভব।
ভিডিওকল- নয়া কোনো প্রযুক্তি তো নয়ই, বরং বেশ পুরোনো। সিস্কো, ফেসবুক, গুগল বা মাইক্রোসফট অনেকদিন ধরেই এধরনের সেবাভিত্তিক অ্যাপ তৈরির বাজার নেতৃত্ব দেয়। জুম ছিল বৃহৎ এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে নগণ্য এক আগন্তুক।
ছোটখাট পরিধির প্রযুক্তি উদ্যোগ- জুম ভিডিও কম্যিউনিকেশন্স নামের কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য নির্বাহী চীনা বংশদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এরিক ইউয়ান। তিনি ভেবেছিলেন প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মহাকায় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই হয়তো শেষমেষ নিজ কোম্পানিটি বিক্রি করতে হবে।
কিন্তু, কথায় আছে ভাগ্য যার সহায়, তাকে আটকে রাখা দায়। মহামারীই এনে দিল বিপরীতমুখী পথচলা। লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে রাতারাতি বাড়তে থাকে অ্যাপটির ফ্রি ডাউনলোডের সংখ্যা। সঙ্গে পেইড সাবস্ক্রিপশনের গ্রাহক সংখ্যাও রূপ নেয় বাঁধভাঙ্গা স্রোতে। ভোক্তাদের এই আকস্মিক উৎসাহে কোম্পানিটির আয় বাড়ে চারগুণ, আর মুনাফা? অবিশ্বাস্য মাত্রায় বা ৯০ গুণ! পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরাও যা অনুমান করতে পারেননি।
চলতি বছর কোম্পানিটি শেয়ারের দামে ঊর্দ্ধগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখে। হয়ে ওঠে বছরের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ উৎস। কোভিড টিকা বাজারে আনা মডের্না এবং চীনের ইলেকট্রিক কার উৎপাদক নিও'র মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জুমের দরেও ৪৫০ শতাংশের প্রবৃদ্ধি আসে।
গল্পের চেয়েও চমকপ্রদ এই বাস্তবতায় ফুলেফেঁপে উঠেছেন জুমের মুখ্য নির্বাহী এরিক ইউয়ান। মেধাবী এই তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী দীর্ঘদিন সিস্কোর মতো বড় ফার্মে চাকরি করেছেন। তাদের ওয়েবেক্স ভিডিও কলের সফটওয়্যারটিও এরিকের তৈরি। মহামারীর আগেই নিজ মেধায় তিনি একজন বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন। কিন্তু মহামারীর পর চলতি বছরের শেষদিকে এসে তার সম্পদ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭শ' কোটি ডলারে। অর্থাৎ, তিনি সেরা ১০০ ধনীর তালিকার শীর্ষ একজন হয়ে উঠেছেন। মূলত জুমে তার মালিকানায় থাকা শেয়ারের মূল্যস্ফীতিই তাকে এতোটা ধনীতে পরিণত করে।
সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে বিলিয়নিয়ারদের মধ্যেও সেরা অবস্থানে ঠাই করে নেওয়া, তাও এক বছরের কম সময়ে।
প্রযুক্তি কোম্পানিকে গ্রাহকদের ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন ট্র্যাক করার ক্লাউড সফটওয়্যার সেবা দেয় কৌপা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মুখ্য নির্বাহী রব বার্নশটিন এরিকের উত্থান প্রসঙ্গে বলেন, 'সত্যিই ওর সাফল্যে আমি ভীষণ আনন্দিত।'
গত ৫ বছর ধরে জুম ব্যবহার করছে কৌপা। আর বার্নশটিন এরিকের ঘনিষ্ঠ একজন বাণিজ্যিক অংশীদার। এই সম্পর্ক আরও মজবুত হয় মহামারীর সময়ে। এখন কৌপা তাদের জুম কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট ব্যক্তিগত বৈঠকেও ব্যবহার করতে দিচ্ছে কর্মীদের।
"আনন্দিত বলার কারণ, এরিক শুরু থেকেই এটা বলে এসেছে। সে বলতো আমি এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই যা মানুষকে খুশি করবে। আর সেই লক্ষ্যে সে সফলতার শীর্ষ চূড়া ছুঁয়েছে। ওর অ্যাপটি ছাড়া ব্যবসা আর সামাজিক ভাব-বিনিময়ে মানুষের যুক্ত হওয়া হয়তো একটু বেশি কঠিন হতো," বার্নশটিন যোগ করেন।
- সূত্র: সিএনবিসি