টুইটার কি আইনগতভাবে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করতে পারে? আমেরিকার আইন বলছে “হ্যাঁ”
সামাজিক গণমাধ্যমে সহিংস বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করে টুইটার। রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলি ট্রাম্পের মতো নির্বাচনী ফল অস্বীকার করায়, তার লেখা এক বই প্রকাশেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার।
গণতন্ত্র রক্ষার নামে এসব পদক্ষেপ মুক্তমতে বাঁধা দেওয়ার প্রক্রিয়া কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাইমন অ্যান্ড শুস্টার যখন এ সপ্তাহে সিনেটর জশ হাওলির বই প্রকাশ বাতিলের ঘোষণা দেয় তখন তিনি পদক্ষেপকে মার্কিন সংবিধানের "প্রথম সংশোধনীর উপর সরাসরি আক্রমণ" বলে অভিহিত করেন। সংবিধানের এ ধারাটি মার্কিন নাগরিকদের দিয়েছে; ইচ্ছেনুসারে ধর্ম পালন, মতপ্রকাশ এবং সরকারি নীতি নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার।
আর গত শুক্রবার যখন টুইটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তখনও ট্রাম্প পরিবার এবং সমর্থকেরা কথা বলেছিল জশ হাওলির সুরেই। প্রেসিডেন্ট পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র টুইটারে লেখেন, "আমরা বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েলের বই '1984' –এ বর্ণিত নিয়ন্ত্রিত সময়ে বসবাস করছি। আমেরিকায় বাক-স্বাধীনতার আর কোন অস্তিত্ব নেই।"
প্রথম সংশোধনী অধ্যয়নকারী বিশেষজ্ঞদের মতে, টুইটার ও সাইমন অ্যান্ড শুস্টারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক হতে পারে, তবে তা ছিল পুরোপুরি আইনসিদ্ধ। কারণ প্রথম সংশোধনীতে বাতিল হয় গণমাধ্যমে সরকারি সেন্সরশিপ। বেসরকারি ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য তা মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়।
উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রনেল এন্ডারসন জোন্স বলেন, প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন না করেই প্রথম সংশোধনীতে যে মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে- তা অবশ্যই লঙ্ঘন করা সম্ভব। কিন্তু, মৌলিক আইনি প্রশ্ন তো আর এতো সোজা হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, হাওলির সাথে কিছুতেই এটা করা উচিৎ হয়নি। কারণ, তিনি কিনা ইয়েল ল' স্কুল থেকে স্নাতক করেছেন এবং বিচারপতি জন জি রবার্টস জুনিয়রের আইনী কেরানি হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি আইনের ন্যায্যতা ভালো করেই জানেন।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, "ব্যাপারটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- এমনকি যারা এই আইন বিস্তরভাবে জানে, তারাও যেকারো বক্তব্যকে চিহ্নিত করে 'প্রথম সংশোধনী ইস্যু' হিসেবে। 'কিন্তু প্রথম সংশোধনী' শুধুমাত্র সরকার সংশ্লিষ্টদের মাঝে সীমাবদ্ধ। কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বইয়ের প্রকাশক সংস্থা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তবে নিজ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা কী প্রকাশযোগ্য আর কী নয়- সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনী অনুসারে তাদের আইনি অধিকার ভোগ করছে।"
কিন্তু আইনি পেশার অনেকেই সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে অস্বস্তি বোধ করছেন। তাদের শঙ্কা পারতপক্ষে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার বাইরে থাকা মুষ্টিমেয় কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানি বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের অসীম যে ক্ষমতা দেখিয়েছে তা নিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায়শ'ই নির্বাহী পরিবর্তন হয়, তাই বিষেশজ্ঞদের শঙ্কা এরফলে শীর্ষপদে পরিবর্তন আসার সঙ্গেসঙ্গে আগামীদিনে তাদের প্রকাশনা নীতিও বদলে যেতে পারে।
সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক গ্রেগরি পি মাগারিয়ান বলেন, "আমি বিভিন্ন ধরনের ধারণা চাই। এমনকি যাদের আমি ঘৃণা করি- তাদের কথাও শুনতে চাই এবং আমি মনে করি টুইটার উন্মুক্ত আলোচনায় নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে রাখে।"
তবে অধ্যাপক মাগারিয়ানের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অথবা হাওলি অভিযোগ করার মতো তেমন একটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন না।
তিনি জানান, প্রথম সংশোধনীতে কারো বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য কোন ব্যক্তিগত ফোরামের প্রয়োজন নেই। প্রথম সংশোধনী মেনে চলায় টুইটার বা সাইমন এবং শুস্টারেরও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ট্রাম্প এবং হাওলির মতো ব্যক্তি এবং তারা যে মতাদর্শ প্রচার করেন, তা কখনো বিপুল সংখ্যক মার্কিন জনতার কাছে অর্থহীন হবে এমন ভাবনা সত্যিই উদ্ভট। তাই বাকস্বাধীনতার উপর প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিয়ে আমাদের এখন থেকেই চিন্তা করা উচিৎ। প্রেসিডেন্ট এবং সিনেটরদের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ কেবলমাত্র অতি-জরুরি মুহূর্তেই করার কথা ভাবতে হবে।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নও বলেছে যে, ট্রাম্পের টুইটার একাউন্ট স্থগিত করার সাথে বাক-স্বাধীনতার স্বার্থ জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা খোঁজা জটিল বিষয়।
আইনজীবী কেট রুয়েন বলেন, আমরা বুঝতে পারছি ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা সবাইকে উদ্বিগ্ন করবে। আজকের দিনে, ফেসবুক এবং টুইটারের মত প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি মানুষের বক্তব্য প্রকাশের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এবং এগুলো এমন প্ল্যাটফর্ম যা যেকোনো মানুষকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ধারণ করে।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস