উচ্চ কর, ব্যবসার সঠিক পরিবেশের অভাবে কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগ
করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপি নতুন বিনিয়োগ কমেছে। তবে চীন, জাপান ও ইউরোপের অনেক বিনিয়োগ রিলোকেটেড হয়েছে এ সময়ে। প্রতিযোগী দেশগুলো এসব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করলেও বাংলাদেশ তা পারেনি।
২০২০ সালের বিদেশী বিনিয়োগ পর্যালোচনায় এমন তথ্য দিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। উচ্চ করহার, দুর্বল অবকাঠামো, সঠিক ব্যবসায় পরিবেশ না থাকা এবং উদ্যোক্তাদের ইনসেনটিভ দিতে না পারায় বাংলাদেশ পিছিয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি। 'এফডিআই ইন অ্যা পোস্ট-কোভিড ওয়ার্ল্ড: নিউ রিয়েলিটিজ অ্যান্ড রিফর্ম প্রায়োরিটিজ ফর বাংলাদেশ' শীর্ষক এ ওয়েবিনারটির আয়োজন করে এফআইসিসিআই।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ এর চেয়ারময়ান ড. মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, করোনার সময়ে বিশ্বের সব জায়গায় এফডিআই কমেছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে কম এফডিআই পেয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালীন ২০২০ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে আগের বছেরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে এফডিআই কমেছে ১৯.৫ শতাংশ। একই সমযে আমাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনামের এফডিআই কমেছে মাত্র ৩.২ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়ার কমেছে ৫.১ শতাংশ। যদিও ডেভেলপিং কান্ট্রিগুলোতে এফডিআই কমার হার গড়ে ১২ শতাংশ করে।
বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে জানিয়ে মূল প্রবন্ধে মাশরুর রিয়াজ বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস দেশের ১৯০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮টি। ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বার্ডেন অফ গর্ভনমেন্ট রেগুলেশন সূচকে ৬৯, এফিশিয়েন্সি অফ লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক সূচকে ৮৪ এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গভার্ন্যান্স ইন্ডিকেটরস এ বাংলাদেশ মাইনাস ০.৮২ পয়েন্ট।
এসব সুচক বিদেশী বিনিয়োগ না আসার ক্ষেত্রে বাধা হযে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
করোনার কারণে চীন ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আকৃষ্ট করার সুযোগ ছিল। এ সুযোগ বাংলাদেশ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি বলে মনে করছেন এইচএসবিসি ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. মাহবুব উর রহমান।
তিনি বলেন, করোনার এ সময়ে বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারত একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। তারা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনেক বেশি ইনসেনটিভও দিয়েছে দেশটি।
মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আমরা অনেক ইনসেনটিভ দিয়েছি। বিডা একগুচ্ছ সুযোগ অপরচুনিটি দিয়েছে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে। বন্দর, সড়ক ব্যবস্থার যোগাযোগ উন্নয়ন করা হয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ ইউলিটি ব্যাপক উন্নতি করা হয়েছে। তবে ভারতের কনজুমার মার্কেট বড় হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আমাদের চেয়ে তাদেরকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে।
সালমান এফ রহমান আরো বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ নিযে একটি বড় অভিযোগ ছিল আমলাতান্ত্রিক সমস্যা। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। পরিস্থিতি খুব দ্রুতই উন্নতি ঘটেছে। বিডার ওয়েব সাইট সিমলেস করা হয়েছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। ইনসেনটিভের ক্ষেত্রে দেশি কোম্পানিকে বেশি দেয়া হচ্ছে না। সবাইকে সমানভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে করপোরেট করহার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি উল্লেখ করে মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। ভারতে করপোরেট কর হার ৩০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ। আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ। এ ছাড়া মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭ শতাংশ করপোরেট কর বিদ্যমান রয়েছে।
কোম্পানি করহার ছাড়াও উচ্চ ভ্যাটহার ও কর এবং ভ্যাট আইনের জটিলতাও দেশে বিনিয়োগের জন্য বাধা বলে মনে জানিয়েছেন তিনি।
করহারের পাশাপাশি আয়কর আইনের ধারাবাহিকতা না থাকা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মনে করছেন ফিকি সভাপতি রুপালি চৌধুরী।
বাংলাদেশ কর সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জটিলতা রয়েছে জানিয়েছেন সালমান এফ রহমানও ।
তিনি বলেন, এনবিআর ছাড়া সরকারের প্রায় সব দফতরের সমস্যাগুলো আমরা সমাধানের পথে রয়েছি। আমাদের কর জিডিপি অনুপাত প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় কম। করনেট সম্প্রসারণ না করার কারণে লক্ষ্যপূরণের তাগিদে বিদ্যমান করদাতের ওপর চাপ দেয় এনবিআর। এ সমস্যা থেকে বের হতে হবে।
তিনি বলেন, ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের সাথে আমার কথা হয়েছে। কর প্রদানের সব কাজ ডিজিটাল করাসহ বেশ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিভাগের সমস্যাটিও সমাধানের পথে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ফিকির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউলিভার বাংলাদেশের সিইও কেদার লেলে বলেন, কর্মসংস্বান বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্যালেন্ট ম্যানপাওয়ার তৈরির ক্ষেত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেবার ফোর্সের কারণে এখানে বিদেশী বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। তবে দুর্বল অবকাঠামো, রেগুলেটরি প্রবলেম, দুর্বল লিঙ্কেজ কানেটিভিটি ও ভালো ইনসেনটিভ না থাকায় বিদেশী প্রতিষ্ঠান আসছে না।