বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকা পেলে টিকাদান কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে
এখন পর্যন্ত দেশে শুধু অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে আগামী ১০ মের মধ্যে দেশে চীনের কোম্পানি সিনোফার্মের টিকা দেশে আসবে। কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকাও আসতে পারে এ মাসে। রাশিয়ার টিকা কেনারও চেষ্টা করছে সরকার। একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির টিকা দেশে আসলে টিকাদান কার্যক্রমের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এখনই টিকা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিভিন্ন ধরনের টিকা দেয়া হলে টিকা ব্যবস্থাপনায় আরো দক্ষতা লাগবে। কারণ একেক টিকার কোল্ড চেইন একেক রকম, ডোজের মেয়াদও ভিন্ন। সেসব বিষয়ে এখনই প্রস্তুতি প্রয়োজন'।
সায়েদুর রহমান বলেন, 'কোন কেন্দ্রে কোন টিকা দেয়া হবে সেটি আগেই ঠিক করতে হবে। একই কেন্দ্রে বিভিন্ন কোম্পানির টিকা রাখলে ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকবে'।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, 'টিকার পছন্দ-অপছন্দের বিভাজন করলে ঝামেলা বাড়বে। লটারির মাধ্যমে যে কেন্দ্রে যে টিকা থাকবে ওই কেন্দ্রে নিবন্ধনকারীরা সেই টিকা পাবেন। সে বিষয়ে এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। সবাই যাতে টিকা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে'।
কোন টিকা কোথায় বা কাদের দেয়া, কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেসব বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সরকারের টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক টিবিএসকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকাদান কার্যক্রম চলছে। টিকা হাতে পেলে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে। টিকা ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে। সেখান থেকে যেভাবে পরিকল্পনা করা হবে, সেভাবেই আমরা কাজ করব। এখনো কোন টিকা কবে আসবে, সেটা ঠিক হয়নি'।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান। ভারত থেকে টিকা আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
'যারা টিকার প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছেন তবে এখনও পাননি, তারা নতুন চালান আসার পরে তা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন', স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এ কথা জানান।
আগামী ১০ মে চীনা সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের পাঁচ লাখ ডোজের চালান দেশে এসে পৌঁছাবে।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'আমাদের নিজস্ব জাহাজে দেশে আসবে টিকা, কেনা ভ্যাকসিনের দাম ও কত ডোজ আনা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে'।
চীনের টিকা বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে ১ হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করে তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর গণটিকাদান কার্যক্রমে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে। দুই ডোজের এ টিকা ২৮ দিনের ব্যবধানে দেয়া হবে।
মর্ডানা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন আনতে চায় রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মর্ডানা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস। টিকা আমদানির বিষয়টি একদমই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেনেটার কর্মকর্তারা।
রেনাটা লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মো. জোবায়ের আলম বলেন, 'আমরা দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন দিলে তখন আমাদের সঙ্গে পরবর্তী ধাপে যাবে। আমরা দুটো প্রতিষ্ঠানের টিকা আমদানির অনুমোদনের জন্যই আবেদন করেছি'।
তিনি বলেন, 'টিকা কিভাবে আসবে, দাম কত হবে, কতদিনের মধ্যে আসবে, কোল্ড চেইন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এসব সিদ্ধান্ত হয়নি। টিকার পরিমাণ নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার অনুমোদন দিলে তাদের সঙ্গে চুক্তিতে যাব'।
ভ্যাকসিন দুটি বাংলাদেশে আমদানির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছে কোম্পানিটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, 'মডার্নার টিকা আনার জন্য রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস আবেদন করেছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএস) পাঠানো হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন, ওই কোম্পানির সক্ষমতা আছে কি না, তারা আনতে পারবেন কি না।'
মডার্নার ভ্যাকসিন জিরো ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে ডিজি বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমাদের সক্ষমতায় আমরা এটা ঢাকায় রাখতে পারব। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই টিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।'
গত সপ্তাহে চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনের জরুরী অনুমোদনের অনুমতি দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
তবে বেসরকারিভাবে টিকা আনার কারণে সরকারিভাবে টিকা কার্যক্রমের ওপর যেন কোন প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান বলেন, 'এখন সরকারিভাবে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি টিকার তৈরিতে সরকারি সরবরাহ যেন কমে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে'।