চট্টগ্রামে মন্দির পুনঃনির্মাণের মহতী উদ্যোগ মোস্তফা হাকিম গ্রুপের
শতাব্দী পুরোনো মন্দির শ্রী শ্রী মগধেশ্বরী। ছোট একটি টিনের চালায় কোনোমতে নিজেদের প্রার্থনাটা চালিয়ে নিচ্ছিলেন স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীরা। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৯৭ বছর পর সেই মন্দির পুনঃনির্মাণে এগিয়ে এল মোস্তফা হাকিম গ্রুপ । ছোট্ট ঝুপড়ির সেই মন্দির আজ তিনতলা ভবনের রূপ পেয়েছে। প্রতিনিয়ত পুণ্যার্থীরা আসছেন প্রার্থনা দিতে।
১৯১০ সালে নির্মিত বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের শ্রী শ্রী মগধেশ্বরী মন্দিরকে পুনঃনির্মাণের পর নাম দেওয়া হয়েছে শ্রী শ্রী সেবাখোলা ও বৈকুণ্ঠধাম মন্দির। ২০০৭ সালে এই মন্দিরের ভিত্তির কাজ শুরু হয়, বর্তমানে এটি তিনতলা ভবন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্দির। যার পুরোটা জুড়েই অবদান রেখেছেন শিল্প গ্রুপ মোস্তফা-হাকিম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।
মন্দিরের উপদেষ্টা রতন তালুকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সেই বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠা পায় শ্রী শ্রী মগধেশ্বরী মন্দির। ছোট একটি টিনের চালায় কোনোমতে প্রার্থনা চলছিল। ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে আমাদের এলাকায় আসেন ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর এম মনজুর আলম। এসময় আমরা স্থানীয়রা সবাই মিলে মঞ্জু সাহেবকে মন্দিরের দুরবস্থার কথা বলি।"
"এরপর এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হলো না। হঠাৎ একদিন সকালে দেখলাম মন্দিরের সামনে খোলা জায়গায় ইট-বালি আর লোহার রড নিয়ে হাজির কয়েকটি ট্রাক। যেটা কল্পনাও করিনি, তাই গড়ে দিলেন এম মনজুর আলম। নিজ হাতে গড়ে দিলেন আজকের বৈকুণ্ঠধাম মন্দিরের ভিত্তিটা। শুধু তাই নয়, তার অবদানেই আমাদের মন্দির আজ তিনতলা ভবনে রূপ পেয়েছে," বলেন রতন।
মন্দিরের বর্তমান সভাপতি অলোক সেন বলেন, "মন্দিরের ভিত্তি, দ্বিতীয় তলার পুরোটাই এবং তৃতীয় তলার বেশ কিছু কাজ তারা করে দিয়েছে। এর বাইরে হিন্দু ফাউন্ডেশন ও স্থানীয়দের কিছু অনুদান আমরা পেয়েছিলাম।"
"তবে এখনো আমাদের কিছু অপূর্ণতা রয়েছে। বিশেষ করে মন্দিরের খোলা কোনো জায়গা না থাকায় মহোৎসবসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় মঞ্জু সাহেবের মত কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এগিয়ে আসেন তাহলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব," যোগ করেন সেন।
শত বছরের পুরোনো চিতায় জ্বলছে আগুন
"শ্রী শ্রী মগধেশ্বরী মন্দিরের মতই শত বছর আগে উত্তর কাট্টলীর সমুদ্র সৈকতে গড়ে উঠেছিলো সনদ দত্ত শ্মশান। কালের পরিক্রমায় যেটি হারিয়ে গিয়েছিলো সমুদ্রগর্ভে। ত্রিশ বছর আগে সমুদ্র আবারো ফিরিয়ে দেয় সেই জমি, উপকূলে জেগে উঠে চর। যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই শ্মশানে মরদেহ দাহ করার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।১৯৯৮ সালে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে শ্রী শ্রী সার্বজনীন সনদ দত্ত মহা-শ্মশান," বলেন শ্মশান কমিটির সভাপতি সুভাষ দাশ। তিনি জানান, পরবর্তিতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয়বারের মত শ্মশানের সংস্কার করেন তারা।
২০২০ সালে করোনা মহামারীতে মৃত ব্যক্তিদের দাহ করতে যখন বিভিন্ন শ্মশান মরদেহ ফিরিয়ে দিচ্ছেল, এই শ্মশানে তখন মরদেহ দাহ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু বর্ষায় অতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো শ্মশান এলাকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে কোমর পানিতে মরদেহ দাহের ছবি, উঠে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এবারও এগিয়ে আসে মোস্তফা-হাকিম গ্রুপ। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করে দেন শ্মশানের সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
সুভাষ দাশ বলেন, "ওই শ্মশানে মাঝে মধ্যে একটি বা দুটি মরদেহ যেত। কিন্তু করোনা মহামারীতে বিভিন্ন শ্মশানে দাহ করতে না পেরে এখানে লাশ দাহের পরিমাণ বাড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক প্রকৌশলী কৃষ্ণ ভজন আচার্য বলেন, "করোনাকালে এই শ্মশানে ৭২টি মরদেহ দাহ করা হয়।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের সন্তান ও মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সারওয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের পরিবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। আমার বাবা যখন কাউন্সিলর ছিলেন তখন এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ছোট মন্দিরটির পাশে একটি বড় মন্দির দাবি করে। বাবা সেসময় নিজস্ব অর্থায়নে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। সাথে শ্মশানটিও সংস্কার করে দিয়েছেন। ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আমরা একে অপরের সঙ্গী।"