প্রস্তুত ‘বাহুবলী’ ও ‘টুইন ব্রাউন’রা
সুঠাম দেহ, সবাই ছাড়িয়ে যাওয়া উচ্চতা আর শারীরিক শক্তিতে বাকিরা নেই আশেপাশেও। হ্যাঁ যেন তামিল ছবির নায়ক 'বাহুবলী'র মতোই তার দেহের গড়ন। ওজন ৯০০ কেজির বেশি। নিশ্চয়ই কোনো মানুষের কথা বলা হচ্ছে না। আলমগীর র্যাঞ্জের খামারের একটি ষাঁড়ের নাম হচ্ছে 'বাহুবলী'।
শাহীওয়াল জাতের এ ষাঁড়টি আলমগীর র্যাঞ্জের রংপুরের নিজস্ব খামারে লালনপালন করা হয়েছে। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে ভালুকায় আলমগীর র্যাঞ্জের আর একটি শাখাতে এনে রাখা হয়েছে এটি। কয়েকদিন পর ঢাকায় মোহাম্মদপুরের তাদের শো-রুমে ষাঁড়টিকে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হবে।
বাহুবলিকে গত বছর কোরবানীর আগে কিনে নেওয়া হয়। যখন ষাঁড়টিকে কেনা হয়েছিল তখন এর ওজন ছিল ৭০০ কেজির মতো। গত এক বছরে ষাঁড়টির ওজন বেড়েছে ২০০ কেজিরও বেশি। তবে এ ষাঁড়টিকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়েই মোটাতাজা করা হয়েছে বলে জানান খামারটিতে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার।
এ ষাঁড়টির দেহের গড়ন ভালো থাকায় এবং ষাঁড়টি বেশ শক্তিশালী হওয়ায় এর নাম বাহুবলী রাখা হয়েছে বলে জানান খামার কর্তৃপক্ষ।
এতো এতো নামের ভীড়ে এ ষাঁড়টির নাম কেন বাহুবলী রাখা হয়েছে এ প্রশ্ন সবার মাঝেই থেকে যায়। নামের বিষয়ে আলমগীর র্যাঞ্জের মোহাম্মদপুরের বছিলার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ফজলুল হক বাচ্চু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গত বছর শখ করে গরুর খামার গড়ে তোলেন এবং তার খামারে অধিকাংশ বড় গরুগুলো কিনে এক বছর ধরে লালনপালন করছেন। 'বাহুবলী' ষাঁড়টি প্রথম থেকেই সুঠাম দেহী আর অন্যসব ষাঁড় থেকে বেশ শক্তিশালী হওয়ায় এর নাম বাহুবলী রাখা হয়। আর এ ষাঁড়টির পরিচর্যাও করা হচ্ছে নিয়মিত।
'বাহুবলী'র দাম ১১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমাদের খামারের ষাঁড়গুলো প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়। এ ষাঁড়টির দাম এর ওজনের তুলনায় খুব বেশি না। ৯০০ কেজির অধিক ওজনের এ ষাঁড়টির পেছনে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ টাকা খরচ হয়। গত এক বছর ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ষাঁড়গুলোর লালনপালন করা হচ্ছে।"
ভালুকায় আলমগীর র্যাঞ্জের খামারের নিয়মিত চিকিৎসক ডা. আনিসুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এ খামারের গরুগুলোর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভ্যাক্সিন দেওয়া, ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানোসহ ষাঁড়গুলোর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে আমি আছি। সার্বক্ষণিকই গরুগুলোকে পরিচর্যা করা হচ্ছে। খাবার আমাদের নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা, ঘাসসহ প্রাকৃতিক সব খাবার খাওয়ানো হয়।"
তিনি জানান, ওষুধের মধ্যে ষাঁড়গুলোকে শুধুমাত্র ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ক্রিমির ওষুধ খাওয়ানো হয়।
আলমগীর র্যাঞ্জের বেশ কয়েকটি খামার রয়েছে রংপুর ও টাঙ্গাইলে। খামারগুলোতে প্রায় ১৫০০ টি গরু কোরবানীর জন্য মোটাতাজা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৯০০ টি গরু কোরবানীর জন্য নির্ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
ঢাকার শো-রুমে ৬৪ টি বিভিন্ন জাতের ষাঁড় রয়েছে যেগুলোর অধিকাংশই বড় আকারের। এদের মধ্যে প্রায় ৬ টি ষাঁড়ের ওজন ৮০০ কেজির বেশি।
বিশালাকার ষাঁড়গুলোর মধ্যে শাহীওয়াল জাতের 'টুইন ব্রাউন' ষাঁড় দুটিও গত এক বছর ধরে খামারে লালনপালন করা হচ্ছে। প্রতিটি ষাঁড়ের ওজন প্রায় ২২ মন করে। ষাঁড় দুটি একই রঙের (ব্রাউন) হওয়ায় তাদের ডাকা হয় 'টুইন ব্রাউন' নামে। প্রায় ৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার এ ষাঁড় দুটি যেকোন ক্রেতার নজর কাড়বে।
শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় দুটি সাধারণ মানুষজনসহ ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। ষাঁড় দুটির দাম হাঁকা হয়েছে ২০ লাখ টাকা, একেকটির দাম দশ লাখ।
খামারিরা বলেন, গত এক বছর আগে শাহীওয়াল জাতের এ ষাঁড় তিনটিকে ঢাকার হাট থেকে ক্রয় করেন। সেই থেকে কুরবানির জন্য নিজের খামারে রেখে লালন পালন করে বড় করে তুলেছেন। খামারে কুরবানির জন্য আরো ষাঁড় থাকলেও 'বাহুবলী' ও 'টুইন ব্রাউন' একটু আলাদা। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে বেড়ে উঠছে তারা।
এবারও হাটে উঠছে 'বাংলার সম্রাট'
গেল বছরের সাড়া জাগানো যশোরের মণিরামপুরের খামারি আসমত আলী গাইনের লালন-পালন করা 'বাংলার সম্রাট' নামের ষাঁড়টি এবছর কোরবানীতে গাবতলীর হাটে বিক্রির জন্য উঠতে যাচ্ছে। তবে এবছর হাসমত নয় গরুটি বিক্রির জন্য গত এক বছর ধরে লালনপালন করা হয়েছে আলমগীর র্যাঞ্জের খামারে।
২০২০ সালের কোরবানীর আগে হাসমত আলী থেকে 'বাংলার বস' ও 'বাংলার সম্রাট' নামের ষাঁড় দুটি কিনে নেন আলমগীর র্যাঞ্জের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। বাংলার বসকে কোরবানী দিলেও 'বাংলার সম্রাট'কে রেখে দেন আলমগীর। পরবর্তীতে এ ষাড়টিকে কেন্দ্র করেই তিনি গত এক বছরে গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি খামার।
'বাংলার সম্রাট' কে আলমগীর হোসেন শখের বসে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন এবং এটা দেখে বড় গরুর খামার গড়ে তোলেন। তিনি মাঝে মাঝে গরুগুলোকে নিজ হাতেও খাওয়ান উল্লেখ করে আলমগীর র্যাঞ্জের খামারিরা।
প্রতি বছরই কোরবানীর পশুর হাটে চমক হিসেবে থাকে বিশেষ কিছু গরু। ওজন, সাইজ ও দামের কারণে আলোচনায় থাকে পশুর হাটে আসা এসব পশু। এবারও আলোচনায় উঠতে যাচ্ছে আলমগীর র্যাঞ্জের 'বাংলার সম্রাট'।
ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি আলমগীর র্যাঞ্জের রংপুরের নিজস্ব খামারে লালনপালন করা হয়েছে। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে মোহাম্মদপুরের বছিলায় তাদের শো-রুমে ষাঁড়টিকে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে।
গত বছর এ ষাঁড়টিকে গাবতলির হাট থেকে ৮ লাখ টাকায় কিনে একবছর লালনপালন করা হয়েছে। ছিমছাম গড়নের এ ষাঁড়টির ওজন ১ হাজার কেজিরও বেশি।
মোহাম্মদপুরের খামারে দায়িত্বরত খামারটির এক কর্মচারী সাজু আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাংলার সম্রাটকে খাবার খাওয়াতে তেমন বেগ পোহাতে হয় না। নাম বাংলার সম্রাট হলেও আচরণ শান্ত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ষাঁড়টি দেখতে ভিড় করে তবুও এটি বিরক্ত হয়না।"
সাজু আরও বলেন, "এ খামারে বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড় রয়েছে। আমাদের কোম্পানীর চেয়ারম্যান কয়েকটি গত বছর কোরবানী দিয়েছিলেন এছাড়া কয়েকটি রেখে দিয়েছিলেন। এবছর আরও কয়েকটি ষাঁড় যুক্ত হয়েছে। আমরা সাধারণত দেখি বড় ষাঁড়গুলো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় কিন্তু আমাদের খামারে এতোগুলো বড় ষাঁড় থাকলেও কোনো ষাঁড় নিয়ে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি।"
বছিলাতে আলমগীর র্যাঞ্জের শো-রুমে ষাঁড় কিনতে আসা তাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অন্যসব খামার থেকে এখানের ষাঁড়গুলো আকারে বেশ বড়। 'বাহুবলী', 'টুইন ব্রাউন', 'বাংলার সম্রাট' ষাঁড়গুলোর নাম যেমন এগুলোর সাইজ, লুকিংও তেমন।
বছিলা প্রজেক্ট ডিরেক্টর ফজলুল হক বাচ্চু বলেন, "ষাঁড়গুলোর নাম সাধারণত এদের গড়ন, ওজন এবং লুকিং দেখেই নির্ধারণ করা হয়। আশাকরি এ বছরের কোরবানীর বাজারের বড় ষাঁড়গুলোর মধ্যে আমাদের গুলো অনন্য হবে।"
বাচ্চু আরও বলেন, "আমাদের গ্রুপের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গত বছর 'বাংলার সম্রাট'কে গাবতলির গরুর হাট থেকে কিনে নেয়। এক বছরে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ২০০ কেজি বেড়েছে। প্রতিদিন এ ষাড়টির পেছনে প্রায় ৯০০ টাকার খাবার দরকার হয়। ষাঁড়টি বেশ শান্ত এবং সহনশীল। গত এক বছরে কখনও অসুস্থ হয়নি ষাঁড়টি।"
ষাঁড়টির দাম এবছর ১২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে খামারের এ কর্মকর্তা বলেন, "বিভিন্ন খামারে একটু বড় গরু হলেই দাম কয়েক লাখ পর্যন্ত বাড়িয়ে ফেলে কিন্তু আমরা এর ওজন, গঠন অনুযায়ীই দাম নির্ধারণ করেছি।"
তবে করোনার এ পরিস্থিতিতে ষাঁড়গুলো বিক্রি হবে কিনা সেটা নিয়েও কিছুটা চিন্তিত তিনি। এছাড়া এবছর চাহিদা অনুযায়ী ষাঁড় কম থাকায় বিক্রি হবে বলে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
তিনি বলেন, "ছোট ষাঁড় বিক্রিতে সাধারনত লাভ কম হয়। বড় ষাঁড়র প্রতি মানুষের আকর্ষণও বেশি আবার চাহিদাও খারাপ না। বড় ষাঁড় বিক্রি না হলে ক্ষতিটাও বেশি হয়।"