পাহাড়িদের মুন্ডি এখন পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয়
বান্দরবানে স্থানীয়দের অন্যতম প্রিয় খাবারের নাম মুন্ডি। চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা খাবারটি মূলত পাহাড়িদের এক প্রকার স্থানীয় নুডুলস। এটি চালের গুঁড়া দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। মুন্ডি নামটি এসেছে মারমাদের কাছ থেকে। বান্দরবানের যে কোনো পাহাড়ি এলাকায় সকাল-বিকেলে খাবারের হোটেলে এ খাবার পাওয়া যায়।
স্থানীয়ভাবে ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি সবার কাছে সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এটি খেতে খুবই মজা এবং সামান্য টকমিশ্রিত ঝাল। তবে টক-ঝালের পরিমাণ নিজের মত করে দিতে পারে। শুধু পাহাড়ে নয়, বান্দরবানে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় মুন্ডি।
এ খাবারের জন্য চালের গুড়ো দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে নুডলস তৈরি করছেন মংম্যানু মারমা। এসব খাবারের জন্য নুডলস তৈরি প্রক্রিয়ার কথা বলেন এ কারিগর। তিনি জানান, পাইজাম ও মিনিকেটের মতো ভাল চাল কিনতে হয় বাজার থেকে। প্রথমে এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের মতো চালকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর গরম পানি দিয়ে ছোট ছোট দলা করা হয় ভেজানো চালকে। পরে একটি বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় নুডলস। আর এ নুডলস দিয়েই তৈরি হয় মুন্ডি।
হ্লামেচিং মারমা নামে এ তরুণ বলেন, ছোটবেলা থেকে এটি খেয়ে আসছি। আমাদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। প্রতিদিন সকালে অথবা বিকেলে একবার করে দলবেঁধে এই খাবারটা খাওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ডমেনু মারমা বলেন, ক্যাম্পাসে থাকলে সবসময় এ খাবারের কথা মনে পড়ে। ছুটিতে আসলে প্রতিদিনই খাওয়া হয়।
শহরের অদুরে শৈলপ্রপাত লাইমি বম পাড়া থেকে বিভিন্ন কাজে শহরে আসেন লালপিয়াম বম। তিনি বলেন, নানান কাজের প্রয়োজনে শহরের আসা হয়। কিন্তু একবার আসলে শহরে মধ্যম পাড়া কিংবা উজানী পাড়ার যে কোনো একটি মুন্ডি দোকানে এ খাবারটা খেতে হয়।
ছোট-বড় দোকান বানিয়ে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মতে, এখানকার মানুষের মুন্ডির খাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘ দিনের। এটি মূলত প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে বেশি চলে। সেখানকার নানান বয়সী মানুষরা প্রচুর পরিমাণে মুন্ডি খান। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা ও মেয়েরা বেশি খায়। সকাল ও বিকেলে মুন্ডি হাউসগুলোতে পাওয়া যায় এসব খাবার।
তবে এ জেলার বাইরেও মুন্ডি পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে সবার কাছে। পাহাড়ে পর্যটন শহর খ্যাত বান্দরবানে এখন পর্যটকদের প্রিয় খাবার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে এই খাবার। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বান্দরবানে বেড়াতে আসলে। মুন্ডি খেতে খুবই মজা ও সুস্বাদু এমনটি জানালেন বান্দরবানে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক।
কংরং মুন্ডি হাউসে মুন্ডি খেতে খেতে রাজধানীর গুলশান থেকে বেড়াতে আসা ইকবাল মাহমুদ দম্পতি বলেন, বান্দরবানে এ খাবারের নাম অনেকবার শুনেছি। আজকে খুব মজা করে খেয়েছি। ভাল লেগেছে।
উজানীপাড়ার বংড মুন্ডি দোকানে গিয়ে দেখা যায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একদল শিক্ষার্থী বেশ আগ্রহের সঙ্গে খাচ্ছেন এ খাবার। দলের শিমু, তামান্না ও হাসান নামের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পাহাড়ে বেড়াতে এসে সবচেয়ে ভাল লেগেছে টক-ঝালমিশ্রিত মুন্ডি খাবার। অল্প টাকায় ভাঁজা করা, চাটনি এবং জুল দিয়ে তিন প্রকারে মুন্ডি খাবার খাওয়া যায়।
বান্দরবান শহরেহ উজানী পাড়ায় একটি দোকানে মুন্ডির স্বাদ নিতে ব্যস্ত স্থানীয় ও পর্যটকহর। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড