দোহা চুক্তিই আফগান পতনের মূল কারণ: মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, আফগান পতনের সূত্রপাত হয় ট্রাম্প প্রশাসনামলের তথাকথিত দোহা চুক্তির মাধ্যমে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দোহা চুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল, মূলত সেটিই তালেবান গোষ্ঠীর শক্তি বাড়িয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি বলেন, এই চুক্তি আফগান সরকার এবং সামরিক বাহিনীর উপর "সত্যিই ক্ষতিকর প্রভাব" ফেলেছিল। তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও সম্মত হয়ে বলেন, দোহা চুক্তিই তালেবানকে "শক্তিশালী" হতে সাহায্য করেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সাক্ষ্য প্রদানে এমন মন্তব্য করেন।
দোহা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের তারিখ নির্ধারণের পাশাপাশি, আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক না রাখারও শর্ত চাপিয়েছিল তালেবানের উপর।
নির্বাচনের পর, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের করে যাওয়া চুক্তি অনুসারে, সেনা প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থাকেন। পার্থক্য শুধু একটাই ছিল এখানে; ট্রাম্প প্রশাসন চলতি বছরের মে নাগাদ সেনা প্রত্যাহারের তারিখ নির্ধারণ করেছিল, আর বাইডেন প্রশাসন সে সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ আগস্টে প্রত্যাহার কর্মসূচী শেষ করে।
কাবুল বিমানবন্দরে মার্কিন ন্যাটো বাহিনীর বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের কয়েক সপ্তাহ পরে এ শুনানি শুরু হয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাকেঞ্জি মনে করেন, দোহা চুক্তির মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারের তারিখ নির্ধারণ, আফগান সরকারের উপর একটি শক্তিশালী মানসিক প্রভাব ফেলেছিল। তাদের সকল সহায়তা বন্ধের একটি তারিখ নির্ধারণ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তারা চিন্তায় পড়ে যায়।
ম্যাকেঞ্জি বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তা করছিলেন, আমেরিকা যদি আফগানিস্তানে তার সামরিক উপদেষ্টাদের সংখ্যা আড়াই হাজারের নিচে নামিয়ে আনে, তাহলেও আফগান সরকার এবং সেনাবাহিনী অনিবার্যভাবে ভেঙে পড়বে।
দোহা চুক্তির পর, এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আদেশে আফগানিস্তানে সেনা কমানোই ছিল "কফিনের শেষ পেরেক" ঠুকে দেওয়া।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এর আগে মঙ্গলবার সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটিকে বলেন, আগস্টে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহারের আগে জেনারেল মিলি এবং জেনারেল ম্যাকেঞ্জি আফগানিস্তানে আড়াই হাজার মার্কিন সৈন্য রাখার একটি সুপারিশ করেছিলেন।
তবে এখনও আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা তালেবানরা মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে উঠতে পারতো বলেও তিনি মন্তব্য করে।
এদিকে বুধবার তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাসীকে জঙ্গিরা নিশ্চয়তা দিয়েছে, তারা আফগান মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধেই কোনো ধরনের হামলা চালাবে না।
তিনি আরও বলেন, "ইসলামিক এমিরেটস অফ আফগানিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দোহায় যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে তাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই আমেরিকান এবং তার মিত্ররাও চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুক। নেতিবাচক মন্তব্য করার চেয়ে, কূটনীতি এবং সহযোগিতার পথ বেছে নেওয়াই তাদের জন্য ভাল হবে"।
- সূত্র- বিবিসি