বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপে গেল বছর বসন্তেও জ্বালানি ছিল বেশ সস্তা; চাহিদাও ছিল কম।
তবে চলতি বছরে বিশ্বে সব দেশেই অর্থনীতি কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ায় জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে জ্বালানির দামও।
২০২০ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৪০ ডলার, যা বৃদ্ধি পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১২০ ডলারে। প্রায় সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সোমবার (১১ অক্টোবর) দেশটিতে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে তেলের দাম ৮০ ডলারের উপরে পৌঁছেছিল ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর।
আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (এএএ)-এর তথ্য অনুসারে, সোমবার পেট্রোলের গড় মূল্যও বিগত সাত বছরে হয়েছে সর্বোচ্চ। শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই পেট্রোলের দাম ৭ সেন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যালন প্রতি ৩.২৭ ডলারে। গত বছরের এপ্রিলে প্রতি গ্যালনের দাম ছিল ১.৭৭ ডলার, যা এ বছরে এসে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলার!
সোমবার মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান সিটিগ্রুপ তার পূর্বাভাসে, ব্রেন্ট অয়েলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার পর্যন্ত উন্নীত করেছে এবং আরও জানিয়েছে, চলতি বছরের বাকি সময়টুকুতে অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এদিকে, ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংক বলছে, এই শীতে জ্বলানির দাম হবে আকাশচুম্বী; প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে এই চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। ফলে গ্যাসের চেয়ে তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিটিগ্রুপ আরও আশঙ্কা করছে, সামনের শীতে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ইউরোপে গ্যাসের সংকট দেখা দিতে পারে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে তেল দীর্ঘদিন ধরেই আছে। তবে, কিছুদিন আগ পর্যন্তও, এর তেমন অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল না। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ছিল খুবই কম। ফলে গ্যাসের তুলনায় জ্বালানি হিসেবে তেল ছিল ব্যয়বহুল।
এদিকে ইউরোপে, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত বছর প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ ছিল ২ ডলারেরও কম; অথচ এই শরৎ-এ তা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে প্রায় ৫৫ ডলারের কাছাকাছি। এটি ব্যারেল প্রতি ৩২০ ডলার তেলের দামের সমতুল্য।
চীনে কয়লার দাম সর্বোচ্চ
শুধু গ্যাসের দামই বৃদ্ধি পায়নি, চীনে কয়লার দামও হয়েছে আকাশচুম্বী।
চীনের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে কয়েক ডজন কয়লা খনি বন্ধ রাখতে হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী কয়লার দামকেও নিয়ে গেছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। চীনে শক্তির প্রধান উৎস কয়লা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, ইস্পাত তৈরিসহ প্রায় সব শিল্পেই এর ব্যবহার রয়েছে। ফলে চীনে সরকার এখন বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে।
এসব কারণেই মূলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রোলের দামও বেড়েই চলেছে।
ওপেকের ভূমিকা
তেলের চাহিদা ব্যাপক হলেও, সরবরাহ এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
করোনা মহামারির চাপ কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে তেলের উৎপাদন বাড়াতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; এমনকি তেলের দাম বাড়তে থাকলেও। অনেক মার্কিন তেল কোম্পানি আবারও বাজারে বাড়তি সরবরাহ দিতে চায় এবং তারা গত দশকে অর্থ হারাতে থাকা শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ ফেরত দিতেও অনেক বেশি মনোযোগী।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউজ ওপেক এবং তার মিত্রদের উল্লেখযোগ্যভাবে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানালেও, গোষ্ঠীটি কেবল ২০২০ সালের শুরুর তুলনায় উৎপাদন কিছুটা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষক কেপলারস স্মিথ বলেন, "উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা সবসময়ই দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল; তবে এই মুহূর্তে বাজার ধরে রাখার ক্ষমতা তাদের হাতে।"
- সূত্র: সিএনএন