সাগর পাড়ে তাইজুল ঘূর্ণি
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান নাকি তাইজুল ইসলাম বনাম পাকিস্তান? হিসাবটা যদি তৃতীয় দিনের হয়, উত্তর কী হবে? নিশ্চিতভাবেই তাইজুলের নাম আসবে। দ্বিতীয় দিন দারুণ ব্যাটিং করা পাকিস্তান তৃতীয় দিন যে উল্টো পথে হেঁটেছে, সেটা বাঁহাতি এই স্পিনারের কারণেই। বাঁহাতের স্পিন ভেল্কিতে একাই পাকিস্তানের ইনিংস ধসিয়ে দেন তিনি।
চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের যবথব অবস্থায় ফেলে একের পর এক উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল। তার স্পিন ঘূর্ণির মুখে পড়েই বিনা উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ২৮৬ রানে, লিড পায় বাংলাদেশ। তাইজুলের ঝুলিতে ওঠে সাত উইকেট।
৭ উইকেট নিতে তাইজুলকে বোলিং করতে হয়েছে ৪৪.৪ ওভার, খরচা করেছেন ১১৬ রান। তাইজুলের এমন শাসন করা বোলিংয়ে পাকিস্তান যেমন দিশেহারা হয়েছে, তেমনি বাঁহাতি এই স্পিনার নাম উঠিয়ে নিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে। বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে দুবার টেস্টে সাত বা তার চেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯ রানে তাইজুলের নেওয়া ৮ উইকেট এখনও বাংলাদেশের সেরা বোলিং।
অথচ আগের দিন বল হাতে সুবিধা করতে পারেননি তাইজুল। ১৯ ওভার বোলিং করলেও মেলেনি উইকেটের দেখা। অবশ্য কেউ-ই পারেননি দলকে উইকেট এনে দিতে। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালটা আলাদা, তাই তাইজুলও লিখলেন আলাদা গল্প।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং করার দিনে ৫ উইকেট নেওয়ার সংখ্যাটাও বাড়িয়ে নিলেন তাইজুল। টেস্ট ক্যারিয়ারে ইনিংসে নবমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন তিনি। এ পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। ডানহাতি এই স্পিনার ৮ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে ২ টেস্টে ৮ উইকেট নেন তাইজুল। এরপরও জিম্বাবুয়ে সফরে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশের একাদশে উপেক্ষিত থাকেন তিনি। সেটা জবাবই যেন ৭ উইকেট নিয়ে দিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
বাংলাদেশের হয়ে ইনিংসে ৭ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা এটিসহ মাত্র পাঁচটি। দেশের পক্ষে সেরা বোলিং তাইজুলেরই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালের অক্টোবরে মিরপুরে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নেন তিনি। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র।
২০০৮ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬ রানে ৭ উইকেট নিয়ে দেশসেরা বোলিংয়ের নজির গড়েন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে ৭ উইকেট নেন মিরাজ। তিনজন একবার করে ৭ উইকেট নিয়েছেন, তাইজুল নিয়েছেন দুবার।