আকবরকে দাদা, ইমনকে বার্গার নামে ডাকে বন্ধুরা
মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আমূল পাল্টে গেছে আকবর আলীর জীবন। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি শুধুই বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন। আকবরের আগে আরও ১১ জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার এই সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু সপ্তাহ কয়েকের ব্যবধানে আকবর আর অন্য ১১ জনের মতো নন; তিনি এখন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। তার নাম উঠে গেছে ইতিহাসের অমোচনীয় অধ্যায়ে।
বিশ্ব জয়ের লম্বা এই সফরে নেতা আকবরের সুরে সুর মিলিয়ে অন্যদের সঙ্গে লড়ে গেছেন পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিম হাসান তামিমরা। আকবরের মতো এই দুই ক্রিকেটারও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে উঠে এসেছেন। প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানে তারা এখন মহানায়ক। এখানকার সতীর্থদের কাছে আকবর, ইমন, সাকিবরা এখন অনুপ্রেরণার নাম।
আকবররা যাদের কাছে এখন আইডল, তাদের সঙ্গে কেমন ছিল আকবরদের বিকেএসপির জীবন; সেই গল্পের সন্ধানে ছিল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। বিশ্বজয়ীদের বিকেএসপির বন্ধু, টিমমেট, রুমমেটদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেক অজানা কথা। যে কথায় জড়িয়ে আছে অনেক ভালো লাগা, মজার সব স্মৃতি। যেমন, আকবর আলী এখানে সতীর্থদের কাছে দাদা। তাকে দাদা বলে ডাকেন সিনিয়ররা। আবার ইমনকে বার্গার বলে ডাকে তার বিকেএসপির বন্ধুরা।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের গন্ডি পেরিয়ে প্রিমিয়ার লিগসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে নাম লেখানো আবু নাসের ও হুমায়ুনের সঙ্গে একই রুমে থেকেছেন আকবর। খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেল আবু নাসেরকে। আকবরের সম্পর্কে জানতে চাইতেই মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বলতে শুরু করে দিলেন নাসের।
আগামী প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে খেলতে যাওয়া নাসের বলেন, ‘আকবর খুব শান্তশিষ্ট এবং চৌকস একটি ছেলে। ও অনেক বিচক্ষণ। জীবনের সিদ্ধান্তগুলো সব সময় ঠাণ্ডা মাথায় নেয়। যা কিছু করে, নিয়মের মধ্যে করার চেষ্টা করে। কিছু না বুঝলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে। স্যার বা সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।’
বিচক্ষণতার কারণেই সিনিয়র হয়েও আকবরকে দাদা ডাকেন নাসের। বিশ্বজয়ী অনুজকে নিয়ে বিকেএসপির এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আকবরকে আমরা দাদা বলে ডাকি। ওর ম্যাচুরিটি এমন লেভেলের যে ওকে এখনও আমরা ডাকি। কখনোই আকবর নামে ডাকি না। দাদা, দাদু, মুরুব্বি এমন সব নামে ডাকি ওকে। এখনও কল করলে আকবর বলি না, বলি দাদু কী খবর।’
নাসেরের সঙ্গে বিকেএসপির ছাত্রাবাসে অসংখ্য রাত কেটেছে আকবরের। অনেক মজার স্মৃতি তাদের। এর মধ্যে একটি তিনি স্মরণ করলেন, ‘আকবর ঘুম থেকে ওঠে খুব সকালে, ছুটির দিনেও। আমরা ছুটি কম পাই। সপ্তাহে যে শুক্রবারে ছুটি পাই, সেদিনও সবার আগে ঘুম থেকে উঠত সে। উঠে কার লকারে কী খাবার আছে, সেটা খেয়ে ফেলত। ওর জন্য মাঝে মধ্যে খাবার লুকিয়ে রাখতাম।’
আকবর যেমন সবার কাছে দাদা, তেমনি পারভেজ হোসেন ইমনকে বার্গার নামে ডাকে তার সতীর্থরা। ইমনের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৭ খেলা মাহমুদুল বলেন, ‘ইমন ছোট থেকে একটু মোটা ছিল। ও অনেক মজার। ওকে বার্গার বলে ডাকতাম আমরা। ওর চেহারা বার্গারের মতো দেখতে। বার্গার বলে ডাকলেও সে খেপতো না, মজা করতো।’
আকবর, ইমনদের দেখে আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত মাহমুদুল নিজেও কিছু করে দেখাতে চান, ‘ওদের এই সাফল্য আমাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয় আমার ব্যাচমেটরা বিশ্বকাপ জিতেছে, কিন্তু আমি পারছি না। আমাকে এখন আরও ভালোভাবে চেষ্টা করতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কী কারণে পিছিয়ে পড়েছি, সেসব বের করতে হবে।’
আকবরকে গত ছয় মাস ধরে সতীর্থ হিসেবে পাওয়া জাহিদুল ইসলাম মেহেদীও বাড়াতে চান স্বপ্নের পথে দৌড়ানোর গতি, ‘আমি আর আকবর একই ফ্লোরে থাকি। সতীর্থের এমন সাফল্য দেখলে অনুপ্রেরণা মেলে। কিছুদিন আগে এক সাথেই ছিলাম। আমাদের সামনেই হাফ প্যান্ট পরে খালি গায় ঘুরেছে সে। তখন এক রকম আর এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। তাকে দেখে অনেক কিছু মনে আসে, অনুপ্রেরণা কাজ করে।’
শুধু মাহমুদুল, জাহিদুলরাই নন, বাংলাদেশ যুবাদের সাফল্য দেখে বিকেএসপির সব খেলোয়াড়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন গতি। যে গতিতে স্বপ্নের পথ মাড়িয়ে বিশ্বজয় করতে চান তারাও।