টেস্ট নাকি টি-টোয়েন্টি খেলছে বাংলাদেশ?
ব্যাপারটা যেন পাড়ার ক্রিকেট দলের মতো। বৃষ্টি হলেই হয়তো ভালো ছিল! কখনও কখনও ম্যাচ বাঁচাতে ছোটখাটো দলগুলো যেভাবে ভাবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও হয়তো সেভাবে ভাবছে এখন। মিরপুর টেস্টে প্রথম দিন ৫৭ ওভার ও দ্বিতীয় দিন ৬.২ ওভারের খেলা হয়। বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিন একটা বলও মাঠে গড়ায়নি। চতুর্থ দিন ৬১.১ ওভারের খেলা হতেই হারের শঙ্কায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
৪ উইকেটে ৩০০ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে শুরু থেকেই উল্টো পথে হাঁটা বাংলাদেশ ২৬ ওভার ব্যাটিং করেছে, ৭৬ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়েছে ঘরের মাঠের দলটি। এর মধ্যে ৬টিই নিয়েছেন পাকিস্তানের অফ স্পিনার সাজিদ খান। অপরাজিত থেকে চুতর্থ দিনের খেলা শেষ করেন সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম।
৭ উইকেট চলে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে ফলো অনে পড়ার শঙ্কা। ফলো অন এড়াতে এখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৫ রান। ফলো অন এড়াতে না পারলে যে পুরো এক দিন ব্যাটিং করে ম্যাচ বাঁচানোর কাজটা কঠিন হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারছে স্বাগতিক শিবির। সব মিলিয়ে চাপের পাহাড় মাথায় নিয়েই কাল মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টের প্রথম সেশনটা কেবল নিজেদের মতো করে রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলাম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আবদুল্লাহ শফিককে। এরপর বেড়ে বৃষ্টির দাপট, মাঝে মাঝে যে খেলা হয়েছে সেখানে দাপট দেখিয়েছে পাকিস্তান।
চতুর্থ দিন ১০টা ৫০ মিনিটে খেলা শুরু হয়। সময় বিবেচনায় দ্রুত রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। বাকি থাকা সময়েই বাংলাদেশকে বাজিয়ে জয় তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা বাবর আজমের দলের। এই পথে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই যেন পাকিস্তানকে সাহায্য করে চলেছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে টেস্ট নাকি টি-টোয়েন্টি খেলা চলছে।
বাংলাদেশের যাওয়া সাত উইকেটের মধ্যে কেবল অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর আউটটি ছিল স্বাভাবিক। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন, শান্ত এলবিডব্লিউ হন। এ ছাড়া বাকি উইকেটগুলো ছিল আত্মাহুতির শামিল। রীতিমতো শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন সাদমান ইসলাম অনিক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাসরা।
অধিনায়ক মুমিনুল হক আবার রান তোলার তাড়ায় রান আউট হয়ে ফেরেন। মেহেদী হাসান মিরাজও খেলেছেন তেড়েফুঁরে। তাতে ফল ওই ব্যর্থতাই। সাকিব আল হাসান যে ২৩ রান করেও অপরাজিত আছেন, তিনিও খেলেছেন মারকুটে মেজাজে। ৩২ বলে ৩টি চারে এই রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে কয়েকটি শট ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলেন তিনি।
কোন ফরম্যাটে কী ব্যাটিং করতে হবে, সেটায় বরাবরই অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে বাংলাদেশ। আবারও তেমনই দেখা গেল। তবে এমন দ্রুততার সঙ্গে ব্যাট চালানোর কৌশল যে দলেরই ছিল, সেটা সহজেই বোঝা গেছে। পিচ কঠিন হয়ে ওঠায় উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে হয়তো বাংলাদেশের এই কৌশল। কিন্তু এই কৌশলে মেলেনি সাফল্য, উল্টো জেঁকে ধরেছে হারের শঙ্কা।
সাদমান ৩, জয় ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬ ও মিরাজ ০ রান করেন। ইতোমধ্যে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করে ফেলা সাজিদ খান ৩৫ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট। মুমিনুল রান আউট না হলে পাকিস্তানের ডানহাতি এই অফ স্পিনারের সাতে সাতই হতে পারতো।