বংশ পদবী: কোথা থেকে পেলাম চৌধুরী, শেখ, ফকির, বসু কিংবা তালুকদার
খুব দীর্ঘ ইতিহাস নেই বাঙালির বংশ পদবীর। পালদের আমল থেকে সেন যুগ, তারপর সুলতানি আমল থেকে ব্রিটিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে পদবীগুলো থিতু হয়েছে বলে ধরা হয়। পদবীর সঙ্গে পেশা, বসতিস্থানের যোগই বেশি। জমিজমা আর হিসাবের সঙ্গে জড়ানো পদবীর সংখ্যাও কম নয়। বল্লালসেনের আমলে যেমন ছত্রিশটি জাত সৃষ্টি করা হয়েছিল। সবগুলোর সঙ্গে পেশা আর গুণ যুক্ত। তবে সম্রাট গোপাল থেকে পাল কিন্তু বৌদ্ধদেরই অধিকারে থাকার কথা।
ঋগ্বেদের রচয়িতা মনুকে যদি ধরে নিই মনুসংহিতারও রচয়িতা। তবে গ্রন্থটির বয়স ধরা যাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছর। সমাজে 'শৃংখলা' আনতে চেয়ে বুঝি মনু নির্দিষ্ট লোকদের জন্য কিছু পেশা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তার বলে কিছু লোক বিনা হিসাবে নিচের তলায় থাকতে থাকে, কিছু লোক ওপরতলার গদি ছাড়ে না। এসব আমলে নিয়েও ঐতিহাসিকরা নিশ্চিত যে, বংশ পদবীর ইতিহাস খুব বেশিদিনের না । অথচ বংশ পদবী ধরে চাকরিতে আসন সংরক্ষণও (কোটা) করা হচ্ছে। আর এ-ও বলে রাখা ভালো, পদবীর ইতিহাস নিয়ে বেশি দূরে না যাওয়া গেলেও অতীত কিন্তু সুদূরেই পোঁতা।
গুড়কাহিনী দুঃখেভরা
বংশ পদবী নিয়ে সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা কম নয়, অসুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে সহস্রগুণ। 'শনিবারের চিঠি'তে সজনীকান্ত দাস সাহস করেই লেখকদের পদবী বিলুপ্ত করেছিলেন। পদবী যে প্রতিক্রিয়াশীলতাকে উসকানি দেয় তা সজনীকান্ত দাস পরিষ্কার দেখতে পেতেন বলেই মনে হয়। পদবীর আড়ালেই তো লুকিয়ে থাকে জাতিভেদ। যেমন করুণাময় গুড় নামে এক ব্যক্তি সকল গুণের অধিকারী হয়েই যোগ দিয়েছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে। কিন্তু অধস্তনরা তাকে মানতে নারাজ। কারণ তাদের ধারণা, গুড় মশাই নিম্ন বর্ণের। লাগল গন্ডগোল। আগেই ধোঁয়া দিয়ে রেখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার মুচিরাম গুড় তো পরিহাসেরই পাত্র। অথচ গুড় কিন্তু ব্রাহ্মণদেরই একটি পদবী।
পদবীর ধারণাটা জন্মাল যেভাবে
শৈশব থেকে পদবীর সঙ্গে আমাদের আত্মীয়তা গড়ে ওঠে বলেই এমনিতেই ধারণা হয়ে যায় যে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই পদবী অত্যন্ত প্রাচীন। পদবী কিন্তু টাকা দিয়েও কেনা হয়েছে অনেকবার। কেউ আবার এর গায়ে চড়িয়েছেন সংস্কৃতের প্রলেপ। কোর্টে গিয়ে এফিডেভিট করার ঘটনা সাম্প্রতিককালেও ঘটেছে অনেক। দাশগুপ্ত বা সেনগুপ্তের মতো যুগ্মপদবী কিন্তু রীতিমতো আধুনিক। আমাদের অভ্যাস আছে কোনো একটি অপরিচিত বা অসংস্কৃত পদবী দেখলেই তার মালিককে অন্ত্যজ শ্রেনীতে ফেলে দেওয়ার। ব্রাহ্মণদের মধ্যেই এমন বহু পদবী যেমন চৌতখন্ডি, গড়গড়ি, দিমসাই, পিপ্পলাই, ডিংসাই, তৈলবাটী ইত্যাদি, এগুলোর ভাষাকৌলীণ্য না থাকায় কেউ কেউ অন্ত্যজ পদবী মনে করে বসেন। ফলে ভারতে অন্ত্যজ শ্রেণীর (শিডিউলড কাস্ট অর্থে) জন্য সংরক্ষিত আসন নিয়ে লাগে ঝামেলা। আবার গোয়ালা, তিলি, বারুই, ছুতারের জন্য কিন্তু দেশটিতে কোনো রিজার্ভেশন নেই। নেই কুম্ভকার, ময়রা, গোপ, ধোবা প্রমুখের জন্যও।
আবার জাতি হিসাবে বাঙালী হওয়ায় আমাদের কতই না গর্ব, অথচ হরিয়ানায় বাঙালী একটি তফসিলি জাতি। আবার অনেক পদবী একাধিক জাতিতেও প্রচলিত যেমন নন্দী, কুন্ডু, পাল বা দাস। এগুলো বর্ণহিন্দু জাতির মধ্যেই দেখা যায়। আবার কায়স্থদের মধ্যেও প্রচলিত। নন্দী যেমন ব্রাহ্মণদের একটি আদি পদবী। মাঝি বা মাজি বর্ণহিন্দুদের পদবী। ব্রিটিশ আমলে কোম্পানির মুনশিকেও মাঝি বলা হতো। নদী পারাপারকারী ব্যক্তিদের তো মাঝি বলাই হয়। অনেক গাঞি মানে গাইয়া নাম যে পদবী হিসাবে ব্যবহৃত হয় তার নজির কিন্তু এখনো আছে , যেমন বটব্যাল, কুশারী, ভট্টশালী ইত্যাদি।
আবার বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় যে বসত এলাকা থেকে এসেছে তা নিয়ে কারুরই ধন্দ নেই। আসলে কোনো পদবী অধিক সংখ্যায় দেখা গেলে সেটি স্বীকৃতি পায়। কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির বিচিত্র পদবীও কিন্তু অপাঙক্তেয় থাকে না। পদবী আসলে নানা বিচিত্র পথে সৃষ্টি হয়।এই যেমন, কুশো গ্রাম থেকে সৃষ্ট পদবী কুশারী লোকমুখে ঠাকুর পদবীতে রূপান্তরীত হয়েছে। রম্য লেখক পরশুরাম কারফর্মা, পতিতুন্ড ইত্যাদি পদবীকে পরিহাসরসে সিঞ্চিত করে গেছেন। কিন্তু ইতিহাস বলে, বাঙালির সমস্ত আদি পদবীই সমান হাস্যকর। তাই 'নামের বড়াই কোরো না' কথাটির ভালোই গুরুত্ব আছে মানতে হয়।
মোগল ও অন্যান্য মুসলিম শাসনামলে বাঙারি মুসলমানদের নামেও যুক্ত হয়েছে নানা পদবী: ভূঁইয়া, তালুকদার, মুন্সী, বেপারী, বাহাদুর, লস্কর, সর্দার, দেওয়ান, দফাদার, হাওলাদার, মহুরী, খোন্দকার, মাতবর, সওদাগর, খলিফা, সৈয়দ, পাটোয়ারী ইত্যাদি।
খ্রিস্টান সমাজে পদবী এসেছে বিচিত্রভাবে। ডিকস্টা যেমন পর্তুগীজ ধর্মযাজকদেও দ্বারা ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানদের বোঝায়। আবার ডি রোজারিও বোঝায় রোজারিও দ্বীপ থেকে আগত ধর্ম যাজক দ্বারা ধর্মান্তরিত ব্যক্তি। ডি মানে আসলে দ্বীপ। এবার আসা যাক কিছু নির্দিষ্ট বংশ পদবীর কথায়।
চৌধুরী: অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর নাম কে না জানে। চঞ্চল শব্দের মানেও আমাদের অজানা নয় তবে চৌধুরীর ইতিহাস জানার কৌত'হল বুঝি অনেকের মেটেনি। মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এ পদবী ব্যবহার করেন। উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই সম্ভ্রান্ত অনুভব হয় শ্রোতার মনে। সংস্কৃত চতুর্ধর, ভেঙে চতুর+ধর হয়ে চৌধুরী এসেছে। গোড়ার দিকে মুঘল সম্রাটরা এ পদবী দিয়ে সম্মানিত করতেন কোনো ব্যক্তিকে। ব্যক্তিটিকে বোঝাতে চর্তুসীমানার শাসক। তাই দেখতে পাই বাংলা অধিকাংশ শাসকদের পদবী চৌধুরী। তবে কেউ কেউ মনে করেন চৌথহারী মানে এক চতুর্থাংশ রাজস্ব আদায়কারীর উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে চৌধুরী এসেছে। তাহলে ধরতে হয় চৌধুরী বাংলা মুল্লুকেরই নিজস্ব শব্দ। ওদিকে বঙ্গীয় শব্দকোষ জানাচ্ছে চতুর মানে তাকিয়া বা মসনদ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর মানে ধারক আর দুয়ে মিলে হয়েছে চৌধরি শেষে চৌধুরী। সেক্ষত্রে তা হিন্দি ও মারাঠি শব্দ। ব্রিটিশ আমলে চৌধুরী ব্যপকভাবেই হয়ে ওঠে সামন্ত রাজার পদবী। আরো একদিকের খবর হলো, ক্ষত্রিয়দের মধ্যে চৌধুরীর প্রচলন ছিল। যে সেনা কর্মকর্তা চারটি বাহিনী মানে নৌ, পদাতিক, অশ^ারোহী বাহিনী এবং হস্তি বাহিনী পরিচালনা করতেন তাকে বলা হতো চৌধুরী। তবে লোকশ্রুতি ছাড়া এর খুব বেশি ভিত্তি নেই।
শেখ: ভালোবেসে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা বঙ্গবন্ধু ডাকি। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। শেখ সোজা আরবী থেকে আসা পদবী। এ দিয়ে সম্ভ্রান্ত মুসলমানদেরই বোঝায়। আরবদেশে গোত্র প্রধান বা গোত্রের বয়স্ক লোকদের শেখ বলে ডাকা হতো। নবীজি (স:) যাকে বা যাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন তিনি বা তাঁদের বংশধরও শেখ পদবী লাভ করতেন। বাংলাদেশের শেখরা অবশ্য ধারণা পোষণ করেন না যে তাঁদের পূর্ব পুরুষ সৌদী আরব থেকে এসেছে। অধিকাংশ সৈয়দরা যেমনটি করে থাকেন। তবে নেপথ্যে কিন্তু ওই একই চেতনা। নবীজির হাতে মুসলমান না হলেও বাংলায় ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে যারা নতুন ধর্মকে গ্রহণ করে নেন, প্রাচীন ও মধ্যযুগে তারা শেখ পদবী ধারণ করে ছিলেন। এমনিতেও কিন্তু অন্য ধর্মের লোকেরা মুসলমান বলতে শেখ বা সেক বুঝে থাকেন।
বিশ্বাস: বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এ পদবী অনেক দেখা যায়। কায়স্থরাই বেশি ব্যবহার করে। নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের মধ্যেও এর প্রচলন দেখা যায়। মুসলমান ও খ্রিস্টান বাঙালির মধ্যেও আছে কিছু। বিশ্বাসের অর্থ আস্থা বা বিশ্বস্ততা। বাংলা মুলুকে সরকারি প্রশাসনিক পরিষেবায় যারা অবদান রেখেছেন তাদের পদবী বিশ্বাস। মানে প্রাপ্তি এবং ব্যয়ের কাজে নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্মানিত করতে এ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এ পদবীর একজন এখন আমাদের খুব চেনা, নাম অপু বিশ্বাস। তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
দাস বা দাশ: গবেষকরা মনে করেন দাশ যারা লেখেন তাঁরা এসেছেন ধীবর সম্প্রদায় থেকে। কবি জীবননান্দ দাশের কথা এখানে মনে পড়ছে। ওদিকে ভারতের উড়িষ্যার বৈদিক ব্রামহণরা দাবী করেন তাঁরা দশসংস্কার নৈপুণ্যে দাশ উপাধি পেয়েছিলেন। অন্যদিকে দাস এসেছে ভৃত্যশ্রেণী থেকে। কিন্তু অযোধ্যার পুরোহিতরা এটা মানতে নারাজ। তাঁরা নিজেদের বলেন ভগবানের দাস। আরেকটু খতিয়ে দেখলে, ভারতে জেলেদের পদবী হলো জলদাস আর মুচিদের রবিদাস। সেক্ষেত্রে নিম্নবর্গের প্রসঙ্গটি আবার সামনে আসে। বেনী মাধব দাস ব্রিটিশ ভারতের একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। চট্টগ্রাম জেলায় তাঁর জন্ম ১৮৬৬ সালে। শরৎচন্দ্রবসুসহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির গুরু তিনি।
ফকির: মুসলমানদের পদবীটি এসেছে সন্ন্যাসবৃত্তি থেকেই। মরমী সাধকরা ফকির পদবী গ্রহণ করতেন। আরবী এ শব্দের আসল অর্থ নিঃস্ব। দরবেশ যারা এদেশে এসেছিলেন তাঁরা ফকির নামেই পরিচিতি পেয়েছেন। এছাড়া বিশেষ কোনো ধর্মেও অনুসারী না হয়ে যার সকল ধর্মেও মূলনীতি নিয়ে আত্মতত্ত্ব সন্ধান করেন তাদের পদবী ফকির। আবার সুফি বা বাউল তত্ত্ব বিশ^াসীরাও ফকির। ফকির বিদ্রোহের নেতা মজনু শাহের কথা আমাদের জানা। ফকির আলমগীরও আমাদের অনেক পরিচিত।
তালুকদার: খুব পরিচিত একটি পদবী আমাদের দেশে। মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব ও ভ'মি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যেসব পদবীর উৎপত্তি তার মধ্যে তালুকদার অন্যতম। তালুক শব্দটি থেকেই এর ভিতরের কথা টের পাওয়া যায়। আরবি শব্দ তা'আল্লুকের অর্থ হচ্ছে ভ'-সম্পত্তি আর এর সঙ্গে যুক্ত হলো ফারসি দার। আসলে যিদি তালুকদার তিনি জমির বন্দোবস্ত নিতেন সরকারের কাছ থেকে যেমন, তেমনি জমিদারের কাছ থেকেও। ফলে তিনি হতেন উপজমিদার, তালুকদার এসেছে সে অর্থেই।
মণ্ডল: এটি বেশ পুরোনো পদবী ধারণা করা চলে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজেই এর প্রচলন দেখা যায়। সাধারণভাবে অনানুষ্ঠানিক গ্রাম-প্রধানকেই মণ্ডল বলা হয়। তাঁরা আগে বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। মন্ডলীয় কাজ করে তাঁরা অনেক অধিকার ভোগ করতেন। খাজনা আদায়কারী ও রায়তদের মধ্যস্থতা করা অথবা গ্রামীণ বিবাদ আপোস মীমাংসা করতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতেন। তাঁদের অধীনেক পাটোয়ারি, তহসিলদার, চৌকিদাররাও কাজ করতেন। সরকার ও প্রজাদের মধ্যকার মানুষ আসলে মণ্ডল।
বসু: সম্ভ্রান্ত হিন্দু বাঙালি পদবী বসু। সংস্কৃত বাসু থেকে এর উৎপত্তি। এটি বিষ্্নুর একটি নাম যার অর্থ সবের মধ্যেই বসবাস। অনেকে আবার একে মহাদেব বা শিবেরও এক নাম বলে উল্লেখ করেছেন। বাসু শব্দের সঙ্গে সম্পদ, রত্ন ইত্যাদিরও যোগ আছে। মূলত কায়স্থরা এ পদবীর অধিকারী। পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকে বাংলায় কায়স্থদের উত্থান। তাঁরা গৌতম গোত্রের কুলীন কায়স্থ, ঘোষেরা, মিত্ররা আর গুহরা যেমন। কলকাতার বাগবাজারের বসুবাটি খুব বিখ্যাত। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু এই বাড়ির সন্তান। শ্রী রামকৃষ্ন নন্দলালের সংগৃহীত দেবতাদের ছবি দেখতে এ বাড়িতে এসেছিলেন ।
সেন: সংস্কৃত সেনা থেকে সেন পদবী এসেছে বলেই বেশিরভাগের মত। ইংরেজী আর্মিকে আমরা বাংলায়ও সেনা বলছি। এটা আসলে সংস্কৃত শব্দ। ব্রাম্মন রাজপুরুষরা সেন পদবটি প্রথম গ্রহণ করেন। নিজেদের তাঁরা উঁচুজাতের ক্ষত্রিয় দাবী করতেন । মজার ব্যাপার হলো সেন পদবীধারী লোক সুইজারল্যান্ডেও মেলে। চীনেও সেনরা আছেন। তবে বানান লেখা হয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। চীন প্রজাতন্ত্রেও প্রথম রাষ্ট্রপতি সান ইয়াত সেনকে অনেকেই চিনবেন। তিনি মাঞ্চু রাজবংশের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের কথাও এখানে অবধারিতভাবেই আসে।
এমন অনেক পদবী ধরে আছে বাঙালি। কেউ কেউ বংশ ধরে খোঁটাও দেন, আবার বংশ নিয়ে ভাবও দেখান অনেকে। খান, মোগল, পাঠান, গাজী, কাজী কিন্তু সরাসরি বিদেশি পদবী। খান পদবী যেমন আফগান মুল্লুক থেকেই এসেছে। চেঙ্গিস খানের সঙ্গেও একে জড়ান অনেকে। হাজরা, হাজারী, মোড়ল, মল্লিক, সরকার, পোদ্দার কিন্তু জমি-জমা বিষয়ক পদবীই। ওদিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় আর মুখোপাধ্যায় কিন্তু কতগুলি গ্রাম গোত্র থেকেই এসেছে। যেমন বন্দ্যঘটি গ্রামের কুলীন ব্রাম্মনহরা শুরু করেছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় পদবীর। আবার চটুতি বা চট্ট থেকে উদ্ভুত চট্টোপাধ্যায়। গাঙ্গুর বা গঙ্গ গ্রামের বসতি থেকে এসেছে গঙ্গোপাধ্যায় এবং মুকুটি বা মুখটি অঞ্চলের বসতি থেকে ছড়িয়েছে মুখোপাধ্যায়। এছাড়া বাদর গ্রাম থেকে ভাদুড়ী পদবীর জন্ম।