বৃন্দা’স কিচেন: নিরামিষ খাবারের এক অনন্য আশ্রয়
ঢাকা শহরে নিরামিষ খাবারের কথা উঠলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে শাঁখারিবাজার কিংবা তাঁতিবাজারের কথা। বাহারি নিরামিষের গন্ধে মুখরিত শাঁখারিবাজার কিংবা তাঁতিবাজারকেই ধরা হয় নিরামিষ খাবারের পীঠস্থান হিসেবে। অথচ পুরান ঢাকার বাইরেও যে নিরামিষ খাবারের আখড়া রয়েছে তা অনেক নিরামিষপ্রেমীরই অজানা। আর এসবের অবস্থান যদি গুলশানের নিকটবর্তী ভাটারা কিংবা ফার্মগেট কিংবা মতিঝিলের মতো জায়গায় হয়, তাহলে তো কথাই নেই। নিরামিষপ্রেমীদের আহ্লাদে আটখানা হওয়ার সুযোগ দিতেই পুরান ঢাকার বাইরে বিশুদ্ধ নিরামিষ খাবারের ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়েছে 'বৃন্দা'স কিচেন'।
নিরামিষ খাবারের তো নানা ধরন হয়। সহজ ভাষায় 'নিরামিষ' বলতে অনেকে বুঝে থাকেন পাঁচ রকম ভাজা, শাক, ডাল, লাবড়া, কোফতাকারী কিংবা পনিরকে। বিশেষ করে শহরতলীর নিরামিষ খাবারের দোকানে ঢুকলেই এই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এই জায়গা থেকে বৃন্দা'স কিচেন একেবারে ভিন্ন। নিরামিষ খাবারেরও যে নানা রূপ হয়, একেও যে নানান ঢংয়ে পরিবেশন করা যায় তার প্রমাণ বৃন্দা'স কিচেন।
যেমন ধরুন রেজালার কথা। রেজালা বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ঝাল করে রান্না করা লাল মাংস। কিন্তু বৃন্দা'স কিচেনের রেজালা একেবারে আলাদা। পনির দিয়ে সুস্বাদুভাবে এখানে তৈরি করা হয় কাশ্মিরী রেজালা। আবার রোস্টের কথাই ধরা যাক, রোস্ট বললেই মাথায় আসে মুরগির রোস্টের কথা। কিন্তু বৃন্দা'স কিচেনে এসে মুরগির নামগন্ধও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেখানে কাশ্মিরী রোস্টের নামে পাওয়া যাবে পনিরের রোস্ট। এগুলো স্বাদে যেমন অতুলনীয় তেমনি গন্ধেও খাসা। একইভাবে সর্ষে দিয়ে ব্রোকলি কিংবা কলার মোচার রসা- নিরামিষ খাবারে নতুনত্ব নিয়ে আসাই বৃন্দা'স কিচেনের লক্ষ্য।
বৃন্দা'স কিচেনের আড়ালে যে মানুষটি রয়েছেন- তিনি হলেন চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। তার হাত ধরে নিরামিষ পিজ্জা দিয়ে শুরু হওয়া বৃন্দা'স কিচেনে এখন পাওয়া যায় ১১০ থেকে ১৩০ পদের খাবার। ২০১৯ সালের শেষের দিকে শুরু হয়েছিলো বৃন্দা'স কিচেনের পথচলা। তবে কিচেনের কাজ করতে গিয়ে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে চন্দনাঙ্গকে। অনেক পরিশ্রমের পর ঢাকার তিনটি স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বৃন্দা'স কিচেনের শাখা।
বৃন্দা'স কিচেনের ভাটারা শাখায় যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে ভাটারা থানার কাছে নতুনবাজার পর্যন্ত। এরপর থানার পাশ দিয়ে রিকশা ধরে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত স্থানে। এছাড়া ফার্মগেটের লায়ন শপিং কমপ্লেক্সের দোতলাতেই পাওয়া যাবে বৃন্দা'স কিচেনের আরেকটি শাখা। আর কে মিশন রোডের নীড় ছায়াবীথি শপিং কমপ্লেক্সে পাওয়া যাবে মতিঝিল শাখার সন্ধান।
নিরামিষ খাবারের সংকট থেকেই সূত্রপাত!
পেশাগত জীবনে চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস ছিলেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। গাজীপুরে অফিস হওয়ার কারণে নিয়মিত ঢাকা-গাজীপুর যাতায়াত করতে হতো তাকে। তার উপর ২০১৫ সালের শেষের দিকে ইসকনের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে আমিষ খাবারের সাথেও করতে হয় আড়ি। চাকরিসূত্রে যেহেতু অনেকটা সময় চন্দনাঙ্গকে বাড়ির বাইরে থাকতে হতো, তাই নিরামিষ খাবার নিয়েও তাকে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এই শহরে নিরামিষ খাবারের দোকানের আধিক্য না থাকায় যেদিন বাসা থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে যেতে পারতেন না, সেদিন অভুক্ত থাকতে হতো তাকে। কোনো কোনোদিন কেবল ফল খেয়েই দুপুর কাটিয়ে দিতেন।
চন্দনাঙ্গ জানান, 'ঢাকা শহরে যেসব ইসকন ভক্তরা (নিরামিষ ভোজী) চাকরি করেন, তাদের যে অনেক সমস্যা হয়- সেটা নিজের জীবন থেকেই অনুভব করি ওই সময়টায়। অফিস শেষে বাসায় ফিরতে রাত ৮টা/৯টা বেজে যেত। তার উপর দীর্ঘক্ষণ ফল খেয়ে কাটালে গ্যাস্ট্রিক ধরে যেত। তাছাড়া বাইরের রুটিও আমরা খাই না। তখন মনে হলো এমন কোনো খাবারের জায়গা থাকলে ভালো হতো যেখানে নিরামিষ খাবার পাওয়া যাবে।'
সেসময় আরেক নিরামিষ আহারী কলিগের সাথে আলোচনা করে এমন একটি খাবারের দোকানের পরিকল্পনা করেন।
পিজ্জা দিয়ে শুভ সূচনা
বৃন্দা'স কিচেনের সূচনা হয়েছিলো পিজ্জা দিয়ে। এতকিছু থাকতে পিজ্জা কেন? এই গল্প বলতে গিয়ে চন্দনাঙ্গ বলেন, 'আমি কখনো সেভাবে পিজ্জা খাইনি। পিজ্জা খেতে আমার তেমন একটা ভালো লাগতো না। লকডাউন শুরুর আগে ভারতের মায়াপুরে গিয়ে প্রথম পিজ্জা খাই। সেখানে গিয়ে দেখি ওরা এক টুকরা হাই ক্যালরি যুক্ত পিজ্জা খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারে। সেখানে পিজ্জা খেয়ে দেখলাম ভালোই তো লাগে খেতে। তখন মনে হলো এই খাবারটা কেন আমরা খাই না?'
দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকরির পাশাপাশি নানান রঙের শাকসবজি দিয়ে 'চিজি পিজ্জা' প্রস্তুত করবেন নিরামিষপ্রেমীদের জন্য। ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারকে বেছে নিয়ে শুরু করেন নতুন যাত্রা। ২২০০ টাকা বিনিয়োগ করে গুলশান থেকে চিজ, ক্যাপসিকাম ও ময়দা কিনে এনে নেন পিজ্জা তৈরির প্রস্তুতি। ইউটিউব থেকে প্রাথমিক সহযোগিতা নিয়ে পিজ্জার ডো প্রস্তুত করে তৈরি করে ফেলেন দুটি পিজ্জা। এর মধ্যে একটি বাসায় রাখেন, আরেকটি উত্তরায় কলিগের বাসায় পাঠান। দুই জায়গা থেকেই চন্দনাঙ্গ ভীষণ সাড়া পান। আর এটিই তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
প্রাথমিক অবস্থায় পরিকল্পনা ছিল বাসা থেকেই অনলাইনে পেজের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করবেন। গোটা সপ্তাহজুড়ে অর্ডার নিয়ে শুক্র ও শনিবারে পিজ্জা ডেলিভারি দেবেন- এমন ভাবনা দিয়েই শুরু হয়েছিলো সবটা। অনলাইনে কাজ করার জন্য সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন- সেটি হলো ফেসবুক পেজ খোলা। কিন্তু পেজ খোলার পর কী নাম দেবেন তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যান চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। কারণ এ শহরে নিরামিষ খাবারের দোকানের কথা উঠলে নামের তালিকায় কৃষ্ণ, গোবিন্দ, জগন্নাথ এগুলোই থাকে। তাই চন্দনাঙ্গ এমন একটি নাম খুঁজছিলেন, যেটি আসলে সব মানুষের মিলনমেলা হবে।
চন্দনাঙ্গ বলেন, "হঠাৎ মাথায় আসলো বিন্দাস নামে একটি শব্দ। মানে খুব উৎফুল্ল, আনন্দ ভাব থাকবে যেখানে। এরপর মনে হলো শব্দটা কি বিন্দাস হবে নাকি অন্য কিছু। তখন মাথায় খেললো 'বৃন্দা' বলে শব্দটি। বৃন্দা দেবী তুলশীর আরেক নাম। সেসময়ই নামটা পছন্দ করে ফেললাম। বৃন্দাবনের বানান অনুসরণ করে নাম রাখলাম বৃন্দা'স কিচেন।"
অনলাইনের পাশাপাশি বৃন্দা'স কিচেনের প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাসকে। বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বৃন্দা'স কিচেন। ঝুঁকি তো ছিলোই, তাও নিজেকে শান্ত রেখে বদ্ধপরিকর হয়ে বৃন্দা'স কিচেন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আমিষের আয়নায় নিরামিষ রান্না!
চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাসের মতে, তার সবচেয়ে বড় গুণ হলো- খাবার আস্বাদ নিলে তিনি বুঝতে পারেন কী মশলা ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া খাবার রান্নার সময় নজর সেদিকে থাকায় গন্ধ শুঁকেই বুঝে যান খাবারের কোন মশলাটি কম-বেশি হয়েছে। তবে ছোটবেলা থেকে অল্পবিস্তর রান্নার চর্চা থাকায় বৃন্দা'স কিচেন নিয়ে এগোতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া রান্নায় প্রতিনিয়ত ভিন্নতা আনতে তিনি ভালোবাসেন। তিনি বলেন, 'আমিষের রান্নার ধারাটাকে আমি নিরামিষের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। নিরামিষ বলতেই আমরা দেখেছি গতানুগতিক রান্না। সেই গতানুগতিক ভাবের বদল আনার চেষ্টা করেছি আমি।'
প্রকৃতি থেকেই নতুন নতুন রান্নার অনুপ্রেরণা পান চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। চন্দনাঙ্গের ভাষ্যে গ্রামীণ ঘরোয়া রান্নাকে নতুনভাবে তুলে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তেলাকুচা পাতার কথা। লতানো তেলাকুচা পাতা ডায়াবেটিস, জন্ডিস সহ আরো অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তিনি গ্রামে লোক পাঠিয়ে ডাঁটাবিহীন তেলাকুচা পাতা আনান এবং ভর্তা হিসেবে খাবারের তালিকায় উপস্থাপন করেন। একইভাবে উল্লেখ করেন খারমান/ খারকোন/ খারকান কচুর কথা। সেটিকেও নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রান্না করায় থাকে কচুর ভীষণ চাহিদা।
কচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কচুকে চাক চাক করে কেটে যেভাবে রান্না করার কথা সেভাবেই রান্না করি। কিছুটা রেসিপিতে এদিক সেদিক করে, এমনভাবে তৈরি করি যে সবাই ভালোবেসে খেতে বাধ্য হয়।'
তাছাড়া আমিষ খাবারের আদলে নিরামিষ খাবারের উপস্থাপন দেখে অনেকে কী খেতে যাচ্ছেন- সেটা প্রথমে বুঝতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন পেটি কাশ্মেরীর কথা। যেটি আসলে বেগুন আর লাউপাতা দিয়ে তৈরি করা একটি পদ। বেগুন ও লাউপাতা দিয়ে মোড়া খাবারটি এমনভাবে সাজানো থাকে, যেটি দূর থেকে দেখে যে কেউ শোল মাছ ভেবে ভুল করতে পারেন।
একইভাবে দৈনন্দিন জীবনের খাবারগুলোকে ভিন্ন ভাবে পরিবেশন করাও চন্দনাঙ্গের অন্যতম পছন্দের কাজ। তিনি বলেন, 'কলার মোচা আমরা সাধারণত কুচি কুচি করে কেটে খাই কিংবা আলু, নারকেল দিয়ে ঘণ্ট বানিয়ে খাই। কিন্তু আমরা এখানে ব্যতিক্রম করি। আমরা কখনোই মোচাকে কুচি কুচি করি না, ফুলটা যেভাবে আছে সেভাবেই রাঁধি। প্রথমে কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে ভাজি এরপর রসা করি। একটু ব্যতিক্রমভাবে করার চেষ্টা করি আর স্বাদও আসে ভালোই।'
সবসময় মিলে টাটকা খাবার
বৃন্দা'স কিচেনে সকলে সবধরনের কাজ করেন। খাবার রান্না থেকে পরিবেশন- সবেতেই থাকে কর্মীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ। মোট ১৫ জন কর্মী কাজ করেন এখানে। সবাইকেই চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস হাতে ধরে রান্না শিখিয়েছেন। তবে খাবারের মানের ক্ষেত্রে কোনো রকমের ছাড় দেন না তিনি। সবসময় টাটকা শাকসবজি, মশলা, বাদাম ব্যবহার করেন খাবারে। তাছাড়া কর্মীরা সবসময় চুল ঢেকে রাখেন ক্যাপ দিয়ে, যাতে খাবারে চুল না পড়ে। পরিমিত পরিমাণ তেল মশলা দিয়ে শুদ্ধভাবে রান্না করা হয় নিরামিষ পদ। রান্নায় বাদাম বাটা ব্যবহার করা বৃন্দা'স কিচেনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান তারা সংগ্রহ করেন গুলশান থেকে।
সাধারণ দিন ও একাদশীর দিনে মেনুতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার রাখেন চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। সাধারণ দিনে কেউ দুপুরে খেতে গেলে তারা প্রথমে আপ্যায়ন করেন জলজিরা দিয়ে। এরপর পরিবেশন করেন অন্যান্য খাবার।
সকালের খাবারের তালিকায় সাধারণত পরোটা, ডাল, সবজি থাকে। এমনিতে দুপুরের তালিকায় থাকে কাঁচা কাঁঠালের বিরিয়ানি, কাশ্মিরী পুষ্পান্ন, বাঁধাকপির পাকোড়া, মিষ্টি কুমড়া বিচির পনির, কাশ্মেরী রেজালা, কাঁঠাল আলু রসা, পটলের দোলমা, পেটি কাশ্মেরী, পোলাও চালের সাদা অন্ন, লাউ পাতার ভর্তা, মিষ্টি কুমড়া ডাটা আলুর ঘ্যাট, সয়াবিন আলু রসা, টমেটো মুগ ডাল, কাঁচা আমের টক ডাল, পায়েস, চাটনি প্রভৃতি খাবার।
একাদশীর দিনে থাকে ভিন্ন খাবার। একাদশীর দিনে দুপুরে পাওয়া যায় একাদশীর সরমালাই, পুষ্প সাগু, কাঁঠাল সাগুর পাকোড়া, একাদশীর চটপটি, পনির আলু রসা, মিষ্টি কুমড়ার বিচি পনির, পনির ভাপা, কাঁঠালের রসা, মিক্সড সবজি, আলুর দম, বাদাম ভুনা, গাজর সাগুর পায়েস প্রভৃতি।
বিকেলে পাওয়া যায় নিরামিষ পিজ্জা, পাস্তা, বার্গার, কেক, নুডুলস প্রভৃতি। আম, মালটা, আপেল, আনারসের মতো বিভিন্ন টাটকা ফলের জুসও এখানে পাওয়া যায়। কোন দিন কী খাবার পাওয়া যাবে তা সেদিন সকালেই ফেসবুক পেজে উল্লেখ করে দেন তারা। বৃন্দা'স কিচেনে বসে খাওয়া ছাড়াও হোম ডেলিভারির সুযোগ রয়েছে। ঢাকা শহরের যেকোনো এলাকা থেকেই অর্ডার করা যাবে তাদের কাছে। তবে স্থান ভেদে ডেলিভারি চার্জের জন্য গুণতে হবে ৬০ থেকে ১২০ টাকা।
পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে চাকরি ছেড়ে বৃন্দা'স কিচেনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। চাকরি ছাড়ার কারণে পরিবারের সবার প্রথমে আপত্তি থাকলেও এখন সে সমস্যা আর নেই। সবাই ভালোবেসে পাশে থাকছে বৃন্দা'স কিচেনের।
পৌঁছে যেতে চান সবার কাছে
বৃন্দা'স কিচেন নিয়ে মজার ঘটনা বলতে গিয়ে চন্দনাঙ্গ উল্লেখ করেন এক পতুর্গিজ নারীর বিয়েতে রান্নার অর্ডারের গল্প। বছর কয়েক আগে পর্তুগালের বংশোদ্ভুত একজন নারী বাংলাদেশী ছেলেকে বিয়ের জন্য এই দেশে আসেন। সেই বিয়েতে কনেপক্ষ হিসেবে দক্ষিণ ভারত ও পর্তুগালের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রান্নার দায়িত্ব পান চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস।
তিনি বলেন, 'বিয়ের রান্নাতে শর্ত ছিলো, কোনো মরিচ ব্যবহার করা যাবে না। এটা শুনে রান্নার প্রভুকে বললাম মরিচ ছাড়া রান্না সম্ভব না। একটা হলেও মরিচ ব্যবহার করতে হবে। পরে সেখান থেকে বললো, ১০টা আইটেমের মধ্যে ১০টা মরিচ ব্যবহার করা যাবে। এমনও হয়েছিলো যে সেই বিয়েতে ক্যাপসিকাম দিয়ে পনির রান্না করেছিলাম। এটাকে সাধারণত চিলি পনির বলে। যখন ওখান থেকে খাবারের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলো, তখন চিলি পনিরের নাম শুনেই ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। পরে ওদের বুঝিয়ে বললাম যে এটা ঝাল নয়। এরপর ওরা বুঝে খেয়েছে। মোট কথা, ওরা মরিচকে বাঘের মতো ভয় পায়।'
এই মুহূর্তে দামের কারণে সব ধরনের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও বৃন্দা'স কিচেন অচিরেই সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে- এমনটাই প্রত্যাশা চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাশের।
প্রতিদিন ১৫০ জনের রান্না হয় বৃন্দা'স কিচেনে। রান্নার কাজ প্রধানত ভাটারা শাখাতেই হয়ে থাকে। সেখান থেকে অন্যান্য শাখায় খাবার যায়। খাবারের বাড়তি দাম নিয়ে অনেকের মধ্যে আক্ষেপ থাকলেও এক্ষেত্রে দাম কমাতে অপারগ চন্দনাঙ্গ চৈতন্য দাস। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, সেখানে ইচ্ছা থাকলেও দাম কমাতে পারছেন না তারা। তবে দাম যেমনই হোক, মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো খাবারকেই গুরুত্ব দেন তিনি।