জুয়েলারি ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ চায় না বাজুস
বাংলাদেশে জুয়েলারি ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। জুয়েলারি উৎপাদন ও বিপণন এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রিতে আগামী ২০ বছরের জন্য বিদেশি বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে সংগঠনটি।
বাজুসের সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত প্রস্তাবটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে জুয়েলারি পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হার কমানো ও স্বর্ণ আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালায় বাংলাদেশে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপন ও পরিচালনায় দেশিয় শিল্পের বিকাশ ও সক্ষমতা তৈরির জন্য ২০ বছর দেশীয় বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বর্ণালঙ্কার উৎপাদন ও বিক্রির ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়নি। বাজুস গোল্ড রিফাইনারির মতো জুয়েলারি ব্যবসায়ও ন্যূনতম ২০ বছর বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, স্বর্ণ নীতিমালায় গোল্ড রিফাইনারি স্থাপন ও পরিচালনায় বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই নীতিমালার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্বর্ণালঙ্কার ও বিক্রিতে বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়নি। আমরা সেটা করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।
স্বর্ণালঙ্কারের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করে বাজুস বলেছে, 'স্বর্ণ মূল্যবান ধাতু বিধায় গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বড় অংকের অর্থে পরিণত হয়। ফলে এদেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকরা ভ্যাট দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। একইভাবে উচ্চবিত্তরা উচ্চহারের এই ভ্যাট প্রত্যাখ্যান করে ডিউটি ফ্রি সুবিধায় পাশর্^বর্তী দেশ থেকে ভ্যাট ছাড়া গহনা কিনছে।'
তারা লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী হ্যান্ডমেড জুয়েলারি তৈরিতে বাংলাদেশের কারিগররা শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্বেও অতিরিক্ত ভ্যাটের কারণে একদিকে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের দোকানগুলো দিন দিন ক্রেতাশুন্য হয়ে যাচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। তাই জুয়েলারিখাতে গ্রাহক পর্যায়ে ১.৫ শতাংশ বা শুধু গহনার মজুরির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে আগারওয়ালা বলেন, দুবাইতে স্বর্ণালঙ্কারের ওপর ১ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, ভারতে এ হার ৩ শতাংশ। সাধারণত, মূল্য সংযোজনের ওপর ভ্যাট আরোপ হয়। তাই আমরা গহনার মজুরির ওপর ১৫ শতাংশ বা মোট মূল্যের ওপর ১.৫ শতাংশ ভ্যাটের প্রস্তাব করেছি।
এছাড়া, স্বর্ণ আমদানি পর্যায়ে ভরি প্রতি ২০০০ টাকা কাস্টমস ডিউটি কমিয়ে অর্ধেক করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। এ সম্পর্কে বাজুস বলেছে, কাস্টমস ডিউটির কারণে বিশ^বাজার থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কাঁচামাল পর্যায়ে বেড়ে যায়।
বাজুসের প্রস্তাব
- জুয়েলারি ব্যবসায় ২০ বছরের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা
- গ্রাহক পর্যায়ে জুয়েলারি পণ্যে ভ্যাট ৫% থেকে কমিয়ে ১.৫% আরোপ করা
- আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি ৫০% কমানো
- জুয়েলারি শিল্পে জড়িত ১৮ হাজার ব্যবসায়ী
- এ শিল্পে জড়িত ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারিগর