তিন বছরেও প্রস্তুত হয়নি গার্মেন্টস ভিলেজ, আগ্রহ হারিয়েছেন বহু শিল্প উদ্যোক্তা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের গার্মেন্টস ভিলেজে সাড়ে তিন বছরেও জমি বরাদ্দের কাজ শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
২০১৮ সালের ২১ মার্চ বেজা ও বিজিএমইএ'র (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) মধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৫০০ একর জমিতে গার্মেন্টস ভিলেজ করার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এই চুক্তি সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হতে চললেও বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত মাত্র ৪১টি কারখানা ২৩৯ একর জমি ইজারা চুক্তি করেছে। বাকি জমি নেওয়ায় গার্মেন্টস মালিকদের আগ্রহ কম।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান টিবিএসকে বলেন, 'যদিও বেজা বলছে জায়গা রেডি হয়েছে, তবে আমরা মনে করি ফ্যাক্টরি করার মতো অতটা প্রস্তুত হয়নি। এটা অনেক বড় প্রজেক্ট।'
'অবকাঠামো যদি আরও উন্নত না হয়, তাহলে ফ্যাক্টরি চালু করা এবং পরবর্তী সময়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কাজ আরেকটু না আগালে মালিকরা ওখানে যাওয়ার সাহস করছে না,' যোগ করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, 'রাস্তা পুরোপুরি রেডি হতে হবে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন- এই কাজগুলো এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এসব কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে।'
তবে বেজা বলছে, 'তারা জমি স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত। গার্মেন্ট ভিলেজের ভৌত অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণসহ গ্যাস, পানি-বিদ্যুৎতের কাজও অনেকটা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, এমন দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'আমরা যখন জমি বরাদ্দ দেই, তখন আমাদের কিছু কমিটমেন্ট থাকে। আমাদের তরফ থেকে কমিটমেন্ট পূর্ণ করার পরও অনেক শিল্প উদ্যোক্তা তাদের কমিটমেন্ট পূর্ণ করেন না।'
"বিজিএমইএ'কে আমরা প্রচুর জায়গা দিয়েছি। ইতোমধ্যেই ৪১ জন মালিক আমাদের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন। ১২০ ফুট রাস্তার পাশে যে সকল প্লট, সেগুলোর কাজ শুরু করে দিতে বলেছি। কিন্তু ওনারা তা করছেন না," যোগ করেন তিনি।
শেখ ইউসুফ হারুন আরও বলেন, 'পুরো গার্মেন্টস ভিলেজটা প্রস্তুত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আপনাদের কাজ শুরু করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, বেজা অগ্রাধিকার ভিক্তিতে করে দিবে। বেজা চায় সবার সহযোগিতায় পরিকল্পিত শিল্পায়ন হোক।'
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল টিবিএসকে বলেন, "৪১টি কারখানা ২৩৯ একর জমি ইজারা চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় বিজিএমইএ'র সদস্য উদ্যোক্তারা বেজাকে ২০৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা জমি নেওয়ার ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এবং জায়গাটি যাতে দ্রুত প্রস্তুত হয়, এজন্য বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে বেজাকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। চিঠির মাধ্যমে ইউটিলিটি কাজ, রাস্তার ও ড্রেনেজ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।"
এদিকে, এ মাসেই গার্মেন্টস ভিলেজ পরিদর্শনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজিএমইএ। একটি টিম প্রকল্প ঘুরে এসে বিজিএমইএ'র কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'আমাদের একটি টিম সেপ্টেম্বরে সেখানে যাবে। তারা রিপোর্ট দিলে আমরা বেজাকে বরাদ্দকৃত জমিগুলো অক্টোবর থেকে মালিকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলব। আমাদের অনেক সদস্য টাকা পরিশোধ করেছে। তারা কাজও দ্রুত শুরু করতে চায়।'
বলে রাখা ভালো, ৩০ হাজার একর জায়গাজুড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫০০ একর জায়গা নিয়ে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের জন্য গড়ে উঠতে যাচ্ছে বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজ।
এই ভিলেজ গড়ে উঠলে এখানে প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রস্তাবিত বিনিয়োগ সম্ভবনা ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
পুরোদমে চলছে অন্য শিল্পের কাজ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ইতোমধ্যেই শিল্প স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করেছে চীনের জুজু জিনিয়ুয়ান কেমিক্যাল কো. লিমিটেড, জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, বার্জার পেইন্টসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বেজা বলছে, এ সকল প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারলে পোশাক শিল্প মালিকরাও কাজ শুরু করতে পারবেন। কারণ দ্রুত কাজ শুরু না করলে উৎপাদনে যেতে অনেক সময় প্রয়োজন হবে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে মোট ১২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বেজার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদনে যাবে।'
২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল।