মার্চের প্রথম সপ্তাহে ১.১ বিলিয়ন ডলারের আকুর বিল পরিশোধ
মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) আমদানির প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ নেমে আসবে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা- এসিইউ সদস্য এই দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে দুই মাস পর পর টাকা পরিশোধ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এসিইউ এর সদস্য বেশিরভাগ দেশ থেকে করা আমদানি ও রপ্তানি গত জুলাই মাস থেকেই কমছে। সে ধারাবাহিকতা মার্চে হওয়া জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির পেমেন্টেও বজায় আছে।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে এই দেশগুলো থেকে আমদানি বাবদ পেমেন্ট করতে হয়েছিল প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায়, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এসিইউ পেমেন্ট ছিল ১.৩২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মে-জুন সময়ে আমদানির এসিইউ বিল ছিল ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা জুলাই-আগস্টে কমে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "দেশের রিজার্ভ বাড়া-কমার মধ্যে থাকবে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ পরিবর্তিত হয়। তেমনই মার্চে আকু পেমেন্টও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি রুটিন কাজ। এটি নিয়ে আলাদা করে আলোচনার কিছু নেই।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনশেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩২.৩৩ বিলিয়ন ডলার। আকু পেমেন্ট করা শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামবে। ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ৩১ বিলিয়ন ডলার পার করেছিল এটি।
২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল দেশের রিজার্ভ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। গ্রস রিজার্ভের হিসাবে এখনো বাংলাদেশের ৫ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধের সক্ষমতা আছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ফরমুলা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংককে গ্রস রিজার্ভ থেকে মোট ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে।
সে হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেট রিজার্ভ থাকবে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই হিসাব ধরলেও অন্তত ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের, যেটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডকে সমর্থন করে।
রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করাও রিজার্ভ কমার একটি কারণ। ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কাজটি করে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে রিজার্ভ থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। অবশ্য মহামারির মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হ্রাস এবং উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'সারাবিশ্বেই এখন মন্দার শঙ্কা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ দেশের রিজার্ভই এতে কমছে। এখন পর্যন্ত আমরা বেশ ভালোভাবেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। আশা করছি, সামনের মাসগুলোতেও আমরা ভালো থাকবো।'
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি পেমেন্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, 'গত অর্থবছরের একই সময়ে আমাদের আরো ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি পেমেন্ট করতে হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানিতে লাগাম টানা গেছে। উল্টোদিকে, আমাদের রপ্তানি আগের সময়ে তুলনায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়েছে। এর বাইরে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১০.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। সবদিক মিলিয়ে রিজার্ভ এখনো শঙ্কার জায়গায় যায়নি।'
এর আগে বাংলাদেশের এক্সটার্নাল সেক্টরগুলোর দ্রুত পুনরুদ্ধারের আশা করে আইএমএফ পূর্বাভাস দেয় যে, ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫৩.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।