২,০০০ টাকা ন্যূনতম কর আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
কর রিটার্ন দাখিল করেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তিদের ওপর ২,০০০ টাকা ন্যূনতম কর ধার্যের বাজেট প্রস্তাব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, "টেক্সপেয়ারস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) ধারকদের স্বস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ন্যূনতম কর আদায়ের প্রস্তাব বাতিল করতে বলেছেন বলে জানায় মন্ত্রণালয় সূত্র।
প্রস্তাবিত ন্যূনতম কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি শিগগিরই অর্থ বিলে প্রতিফলিত হবে বলে ইঙ্গিত দেন তারা।
২০২৩-২৪ অর্থছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, করযোগ্য আয় নেই, কিন্তু সরকারি পরিষেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের ওপর ন্যূনতম ২,০০০ টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন।
এই অংশগ্রহণকে সরকারি কল্যাণমূলক কাজে প্রচার করা হবে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, "একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হল ন্যূনতম কর প্রদানের মাধ্যমে সরকারের কল্যাণমূলক কাজে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।"
তবে অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি আপাতত অযৌক্তিক হবে। 'ন্যূনতম করের ধারণাটি করের নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ' জানিয়ে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এফবিসিসিআই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়। এতে ন্যূনতম কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি করমুক্ত সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, এর পরের ৩ লাখের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখের ওপর ১৫ শতাংশ, তার পরের ৫ লাখের জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অঙ্কের ওপর ২৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হবে।
বাজেটের নথি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যক্তির ওপর ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে; ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য শহরে ৪ হাজার টাকা এবং পৌরসভা এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতে, দেশে বর্তমানে ৮৮ লাখ টিআইএন ধারক রয়েছেন; তাদের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় ৩২ লাখ।
ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে, প্রায় ৮ লাখের গড়ে করযোগ্য আয় নেই। এই ৮ লাখ ব্যক্তি প্রস্তাবিত ন্যূনতম ২,০০০ টাকা কর পরিশোধ করলে সরকার অতিরিক্ত ১৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে বলে হিসাব করেছে এনবিআর।
যারা ইতোমধ্যেই কর প্রদান করছেন, তারা ব্যতীত সমস্ত টিআইএন হোল্ডারদের ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা হলে প্রায় ১,২৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে বলে জানায় সংস্থাটি।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুসারে, মোট ৪৪টি সরকারি পরিষেবা পেতে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে; যেমন- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে, কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেতে, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাটের দলিল করার ক্ষেত্রে, ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনের সময়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করতে গেলে এবং সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।