১.১ বিলিয়ন ডলারের আকু বিল পরিশোধিত হবে কাল, রিজার্ভ নামবে ৩০ বিলিয়নে
চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)- এর ১.১ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে চলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আকু'র বিল পরিশোধিত হবে বুধবার (৫ জুলাই)।
৩০ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩১.১৯ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে, বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ থাকবে ৩০ বিলিয়নের কিছু বেশি।
গত মে মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তার কারণে তা আবারও বাড়ে।
নয়টি সদস্য দেশের আঞ্চলিক আমদানির আর্থিক লেনদেনের কাজ করা হয় আকু পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। প্রতি দুই মাস অন্তর এ বিল পরিশোধ করা হয়।
এর আগে মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আকু'র ১.১৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে, যার ফলে রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আকু'র সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানি-রপ্তানির বিল প্রতি দুই মাস অন্তর পরিশোধ করা হয়। সে অনুযায়ী, মে ও জুন মাসে আমদানি-রপ্তানির বিল চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
"আমরা খুব জলদিই এ অর্থ পরিশোধ করবো। অনেকে বলে যে, আমরা পেমেন্ট করতে দেরি করে ফেলেছি বা কোনো সমস্যা আছে। এটি একটি ভুল ধারণা। কান্ট্রি-টু-কান্ট্রি পেমেন্টে কোনও ডিফল্ট নেই। আমরা সবসময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেমেন্ট সম্পন্ন করি," যোগ করেন তিনি।
আমদানি হ্রাসের কারণে আকু'তে অর্থপ্রদানের পরিমাণ কমছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, "বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আমদানির বিল প্রদান করত। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চলতি বছরের মে মাসে বিল পরিশোধের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।"
"আমরা আকু পেমেন্টের ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। গত বছরের মে-জুন মাসে আমদানির জন্য আকু পেমেন্টে আমাদের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছিল। আমদানি কমে আসায় এই বছরের একই সময় আমাদের ১ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।"
২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। এরপর করোনা থেকে পুনরুদ্ধারের সময়টায় ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কমতে থাকা রেমিট্যান্সের কারণে ধীরে ধীরে কমে যায় রিজার্ভ। এসবের মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়।
এদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে সরকার গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, ফলে এলসি খোলার পরিমাণ কমে আসে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মে) এলসি খোলার পরিমাণ ২৫% এর চেয়েও কমে দাঁড়ায় ৬২.৪ বিলিয়ন ডলার; যেখানে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "যদিও আমাদের আমদানি ২০২৩ অর্থবছর জুড়ে কমেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের অতিরিক্ত আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।"
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬.৬৭% বেড়ে ৫৫.৫৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময় ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে; যা আগের অর্থবছরের ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের তুলনায় ২.৭৫% বেশি।