সিটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমানের শেষ উদ্যোগে অধিগ্রহণ হলো বেঙ্গল এলপিজির
বেঙ্গল গ্রুপের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান– বেঙ্গল এলপিজি অধিগ্রহণ করেছে সিটি গ্রুপ। দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমানের শেষ বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগ ছিল এটি।
সিটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান মারা যান ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর, তার আগেই ১৯ অক্টোবর সম্পন্ন হয় এ অধিগ্রহণ। বর্তমানে সিটি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০টি।
অগ্রণী ব্যবসায়ীক গোষ্ঠী হিসেবে, বাংলাদেশের এলপি গ্যাসের বাজারে বড় ভূমিকা রয়েছে সিটি গ্রুপের। এখাতে তাদের বিনিয়োগ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তার সঙ্গে যুক্ত হলো– মোংলায় বেঙ্গল এলপিজির ৫ হাজার টন ধারণ সক্ষমতার (স্টোরেজ ক্যাপাসিটি) প্ল্যান্ট। এর মধ্যে দিয়ে, সিটি গ্রুপের মোট সংরক্ষণ সক্ষমতা ২১ হাজার ৫০০ টনে উন্নীত হলো।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিটি গ্রুপের এলপিজি প্ল্যান্ট রয়েছে। যেটির সংরক্ষণ সক্ষমতা ৯ হাজার টন। তিনটি জাহাজ মিলে রয়েছে বাকি সাড়ে ৭ হাজার টন সক্ষমতা। এমনটাই জানান, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ- এর পরিচালক (পরিকল্পনা ও ব্যবসা উন্নয়ন) ইমরান উদ্দিন।
সিটি এলপিজি'র একজন পরিচালক ফিরোজ আহমেদ টিবিএসকে জানান, সিটি গ্রুপ এ বছরের মার্চে তাদের ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ড 'তীর'-এর অধীনে এলপিজি পণ্য বাজারজাত করার পরিকল্পনা করেছে। এজন্য দেশব্যাপী পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটার) নিয়োগ দিতে চায়। ব্যবসার এই সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের এলপি গ্যাসের বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায় সিটি গ্রুপ।
অধিগ্রহণের আগে– খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী-সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১০০ পরিবেশক ছিল বেঙ্গল এলপিজির। বিদ্যমান এই পরিবেশক নেটওয়ার্কের সুবাদে এসব এলাকায় ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে এগিয়ে থাকবে সিটি গ্রুপ, যোগ করেন তিনি।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, বাসাবাড়ির গৃহস্থালি চাহিদা (রান্নার গ্যাস সরবরাহ), শিল্প প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ এলপি গ্যাস ব্যবসার সকল খাতে সিটি গ্রুপ নেতৃত্ব দিতে চায়। "সিটি গ্রুপের এলপিজি কিনতে আগ্রহী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের আলোচনা চলছে।"
এই বিক্রির পেছনের কারণ জানতে বেঙ্গল গ্রুপের অফিসে যান টিবিএসের প্রতিবেদক, তবে কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবহার
এলপিজি একটি বহুমুখী জ্বালানি হওয়ায়– হিটিং, ডায়িং এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন শিল্পকাজে ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়ার সাথে অভিযোজনযোগ্যতা থাকায় এটি বিশ্বজুড়ে নানান শিল্পের জন্য একটি সুবিধাজনক জ্বালানি। দেশের এলপিজি অপারেটররা বলছেন, এসব সুবিধাই বাংলাদেশে শিল্প-জ্বালানি হিসেবে এলপিজির প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখছে।
এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওবি) এর তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ব্যবহৃত প্রাথমিক জ্বালানির মধ্যে এলপি গ্যাসের অংশ ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ১ শতাংশ।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-র একটি প্রাক্কলন উদ্ধৃত করে এলওবি জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসাবে সমস্ত নতুন এবং বিদ্যমান পারিবারিক গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজি চালু করার সরকারি নীতির কারণে– ২০৩২ সালের মধ্যে এলপিজির চাহিদা বার্ষিক ৬০ লাখ টন বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এলওবির তথ্যমতে, দেশে মোট ২৭টি এলপিজি অপারেটর রয়েছে। এদের মধ্যে নয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের মোট এলপিজি চাহিদার ৮০ শতাংশেরও বেশি পূরণ করে।
দেশের এলপি গ্যাসের বাজারে বড় ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা রয়েছে– ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, নাভানা, বিএম ও ওরিয়ন- এর, এখাতে যাদের মোট বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সিটি গ্রুপ এলপি গ্যাসের বাজারে সাম্প্রতিকতম প্রবেশকারী।
এলওএবি জানায়, ১৮ লাখ টনে পৌঁছেছে বাংলাদেশের বার্ষিক এলপিজি ব্যবহারের পরিমাণ, এরমধ্যে ১৩ শতাংশই করছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। মাত্র পাঁচ বছর আগের ২ শতাংশের তুলনায় যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এর আগে ২০২২ সালে ১০ কোটি ডলারে পেট্রোম্যাক্স এলপিজি এবং পেট্রোম্যাক্স সিলিন্ডার্স অধিগ্রহণের মধ্যে দিয়ে- নেদারল্যান্ডসের এসএইচভি এনার্জি বাংলাদেশের এলপিজি বাজারে প্রবেশ করে।