বাড়তি অগ্রিম আয়কর ব্যবসার খরচ বাড়াচ্ছে: অর্থমন্ত্রীকে এফবিসিসিআই
আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বর্তমানে যে বাড়তি অগ্রিম আয়কর আদায় করা হয়, তাতে ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা কমে যায় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফেডারেশন অভ বাংলাদেশ চেম্বারস অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
গত ৭ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, 'বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক লাভের তুলনায় উৎসে কর কর্তনের হার অনেক বেশি।'
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'এই অগ্রিম কর ব্যবস্থা ব্যবসা করার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকূল অবস্থানে ফেলেছে।'
বর্তমানে, আমদানি ও সরবরাহ বা স্থানীয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ০.৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত উৎসে কর কর্তন করা হয়। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কর কর্তন করে; কিছু ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাটও কর্তন করে, যা ফেরত দেওয়া বা সমন্বয় করার কথা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর, এবং অগ্রিম ভ্যাট বা অগ্রিম কর ফেরত নেওয়া যায় না। এটি সমন্বয় করার প্রক্রিয়া কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। কিছু ক্ষেত্রে জটিল প্রক্রিয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা এটি সমন্বয় করতে পারেন না, যার ফলে তাদের খরচ বেড়ে যায়।
চিঠিতে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্যবসায়ীদের প্রকৃত আয়ের অপর তাদের কাছ থেকে কর আদায় করা উচিত এনবিআরের। তবে ব্যবসায়ীদের যদি অগ্রিম কর দিতে হয়—এবং সমন্বয় প্রক্রিয়া জটিল, সময়সাপেক্ষ ও কিছু ক্ষেত্রে সম্ভব না হয়—তবে শেষ পর্যন্ত ব্যবসা করার খরচ বেড়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'এসব কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, যা ভোক্তার ওপর বর্তায়।'
চিঠিতে কর কর্তনের হার নিয়ে সমীক্ষা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
আয়কর-সংক্রান্ত অন্যান্য দাবির পাশাপাশি বাণিজ্য সংস্থাটি ভ্যাট ও শুল্ক-সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবিও উত্থাপন করেছে।
সংস্থাটি অতীতে এনবিআরের সঙ্গে পরামর্শমূলক বৈঠকে বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করলেও তার বেশিরভাগই রাজস্ব বোর্ড গ্রহণ করেনি।
অর্থমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, 'ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কখনোই জানতে পারেন না কী কারণে তাদের যৌক্তিক প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়নি।'
'আগামী কনসালটেটিভ সভাকে কার্যকর করতে প্রতিটি সভার কার্যবিবরণী করা প্রয়োজন।'
আগামী ৪ এপ্রিল এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এফবিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে, ওই সভায়ও এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।
এফবিসিসিআইয়ের ওই চিঠিতে বর্তমানে অর্থনীতিতে অন্তত ১১টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং, রিজার্ভ সংকট, রেমিট্যান্সে শ্লথগতি, রপ্তানি বৃদ্ধি ও নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা, সূদের হার ও ব্যাংক খাতের সংকট, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি, রেভিনিউ পলিসি সংস্কার এবং মনিটারি ও ফিসক্যাল পলিসির মধ্যে সমন্বয় ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে অন্তত সাতটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। এর মধ্যে রয়েছে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যমূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, স্থানীয় শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া।
চিঠিতে বিলাসদ্রব্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তালিকাভুক্ত পণ্য ও অনভিপ্রেত পণ্যের ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়। অর্থাৎ এর বাইরে অন্যান্য পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক প্রয়োগ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনে এনবিআরের কর্মকর্তাদের দেওয়া পুরস্কার বাতিলের দাবিও জানানো হয়।
'অর্থপাচার রোধে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন'
এফবিসিসিআইইয়ের চিঠিতে বহুল আলোচিত অর্থপাচার রোধে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন আলোচনায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন গত বছর বাজেট প্রস্তাবে জানিয়েছে, স্বাধীতার পর ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা।
এফবিসিসিআই বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে বিদেশি ঋণ, সাপ্লায়ারস ক্রেডিট, রেন্টাল স্কিমে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনা করে পে-ব্যাক ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব কি না, তা পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করা হয়।