নির্বাচন আদায়ে মার্চ-এপ্রিলে আন্দোলনে নামছে বিএনপি
অন্তর্বতী সরকারের মেয়াদ ৩ মাস পেরোলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে 'নির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ'- এর কোন ধরণের ঘোষণা না আসায় আশাহত হচ্ছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠকে এসব দাবি করে সাড়া না পাওয়ায় — দলটি কিছুটা সন্দেহও পোষণ করছে সরকারের প্রতি। তাই এবার নির্বাচন আদায়ে ও সরকারকে চাপে রাখতে আন্দোলন নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি — দলীয় একাধিক সূত্র এমনটি নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়, সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ভার্চুয়ালি অংশ নেন। দলের সর্বোচ্চ এ ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবেন। সেটি নাহলে মার্চ-এপ্রিলের দিকে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা দলটির। তবে দলের দুই-একজন সদস্য আরো একটু ধীরে চলা নীতিতে এগোনোর পক্ষেও মতামত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা টিবিএসকে জানান, সরকার প্রথমদিকে যেভাবে বিএনপির কথা শুনতো তা দিনেদিনে কম শোনার প্রবণতার দিকে যাচ্ছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি গঠনের আগেও বিএনপিকে জানায়নি। এছাড়া সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার কথায় মনে হচ্ছে, তারা বিএনপির বিপরীতে আরেকটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য নির্বাচনে কালক্ষেপণ করছেন।
গত কয়েক মাস বিএনপির কর্মসূচি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়; এ সরকারের প্রথম মাসে বিএনপিকে যেমন নির্ভার মেজাজে দেখা গেছে- তা কিছুটা কম দেখা গেছে গত দুই মাসে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনের জোট শরীকদের সাথে কিছুটা যোগাযোগ কমিয়ে দিলেও – এখন আবার তা জোরদার করেছে, দফায় দফায় মিটিং করছে ছোট দলগুলোর সঙ্গে। ইতোমধ্যে ছোট দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ১৮ জনকে বিভিন্ন আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে আগাম মনোনয়ন দিয়ে সাথে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সালাহ উদ্দিন আহমেদও সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামির দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে দুই দলের একসাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও কিছুদিন আগেই উভয় দলের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এসব কিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে বিএনপি সবাইকে নিয়ে নির্বাচন আদায়ে মাঠে থাকতে চাইছে, এবং কোনমতেই জোটছুট হতে চাচ্ছে না এ পরিস্থিতিতে।
গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর বলেন, ''২০০৭ সালে ১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বিরাজনীতিকরণে এবং মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল।
সেই পথ অনুসরণ করার কথা চিন্তাও করা উচিত নয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপিকে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নানাভাবে ভাঙার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতেও পারবে না," বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা অপ্রত্যাশিত ও অযাচিত মন্তব্য করে বলেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে অস্থির। 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তার মতো কোনো ব্যক্তি এ ধরনের মন্তব্য করবেন তা আমরা আশা করি না'।