বেসিক ব্যাংকে ৩,৫০০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি, ৫৯ মামলার বিচার শুরুর অপেক্ষা
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৯টি মামলায় গত বছরের জুলাইয়ে ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলা এখন আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
৫৯টি মামলার মধ্যে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান—এবং এসব কেলেঙ্কারির মূল হোতা—আব্দুল হাই বাচ্চুকে ৫৮ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও মামলাগুলোর অভিযোগপত্রে ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণের বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানায় দুদক।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এই মামলাগুলোর আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় বলে জানিয়েছে দুদক।
২০০৯ সালে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
তার নিয়োগের পর থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটির গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পরপরই অনুসন্ধানে নামে দুদক। ২০১৪ সালে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বাচ্চুকে।
ঋণের কাগজপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ব্যাংক থেকে প্রায় ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
২০১৫ সালে ৫৬টি এবং ২০১৯ সালে আরও দুটি মামলা করে দুদক। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন করার পর আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৮ জনে।
দীর্ঘদিন এসব মামলার তদন্ত সম্পন্ন না করায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় জাতীয় সংসদ ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে।
এছাড়াও মামলা দায়েরর সময় আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
এই মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করতে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় চার দফায় তিন মাস করে সময় বেঁধে দেন হাইকোর্টের তিনটি পৃথক বেঞ্চ।
আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর এসব কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে পরিচিত বাচ্চুকে গ্রেপ্তারে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানায় দুদক। এরপরও এখন পর্যন্ত বাচ্চুকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বাচ্চু যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠিও লেখে দুদক।
দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই বাচ্চু দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাই এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির এই মূল হোতা।