এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে এনবিআর
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের (এমপি) মোটরচালিত গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ বিষয়ে অবগত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এ উদ্যোগ মেম্বারস অভ পার্লামেন্ট (রেমুনারেশন অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স) অর্ডার, ১৯৭৩-এর (প্রেসিডেন্টস অর্ডার) পরিপন্থি। এ আদেশের আওতায় সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা পান।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানোর পর বিষয়টি সামনে এসেছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আদেশের কারণে এমপিদের আমদানি করা গাড়ির ওপর এনবিআরের শুল্ক শাখা কোনো শুল্কারোপ করতে পারবে না।
তবে গত ১৪ মে অর্থবছরের বাজেট-সংক্রান্ত বিষয়ে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে এনবিআর এই পরিকল্পনাটি অন্তর্ভুক্ত করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এই আইনি সমস্যার কারণে এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকতে পারে। আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি যাচাই করেনি।
রাষ্ট্রপতির আদেশে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য তার কার্যকালের পুরো মেয়াদে শুল্কমুক্ত (মূল্য সংযোজন কর), উন্নয়ন সারচার্জ ও আমদানি পারমিট ফি-মুক্ত একটি গাড়ি (কার, জিপ, অথবা মাইক্রোবাস) আমদানি করতে পারবেন।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, এই 'সদস্য'-এর মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, বিরোধী দলের উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, এবং সংসদ সদস্য উপমন্ত্রীরা।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য একই শর্তে তার শেষ আমদানির তারিখ থেকে পাঁচ বছর পর আরেকটি নতুন কার, জিপ বা মাইক্রোবাস আমদানি করতে পারবেন।
অন্যান্য নাগরিকেরা কী পরিমাণ শুল্ক দেন?
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার মোটরচালিত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছিল। ২,০০১ সিসি থেকে ৩,০০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ২০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ৩,০০১ সিসি থেকে ৪,০০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়িগুলোর আমদানি শুল্ক ৩৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হয়েছে।
৪,০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়িতে আমদানি শুল্ক আগের ৫০০ শতাংশই রয়ে গেছে।
এছাড়া চলতি অর্থবছরে এনবিআর একাধিক গাড়ির মালিকদের জন্য পরিবেশগত সারচার্জ চালু করেছে, যা কার্বন কর নামেও পরিচিত।
এই করের আওতায় ১,৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াট ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির মালিকদের পরিবেশগত সারচার্জ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ১,৫০১ সিসি থেকে ২,০০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াট থেকে ১০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির জন্য এই সারচার্জের পরিমাণ দ্বিগুণ—অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা।
যারা ২,০০১ সিসি থেকে ২,৫০০ সিসি বা ১০১ কিলোওয়াট থেকে ১২৫ কিলোওয়াট ইঞ্জিন ক্ষমতার দ্বিতীয় গাড়ির মালিক, তাদের জন্য সারচার্জ বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করেছে। ২,৫০১ সিসি থেকে ৩,০০০ সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াট থেকে ১৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতার একাধিক গাড়ির মালিকদের ১.৫ লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হবে।
৩,০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হবে। আর ৩,৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াট বা তার বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির জন্য সারচার্জ দিতে হবে ৩.৫ লাখ টাকা ।