বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমলেও এখনও স্বস্তিকর পর্যায়ে আসেনি
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সামান্য কমলেও ভোক্তাকে এখনও চড়া দামেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে।
গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, আটা, মসুরু ডাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আলু, সবজিসহ প্রায় ১৫টি পণ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রধান ব্যতিক্রম দেখা গেছে চাল ও বিশেষ করে দেশীয় পেঁয়াজের দামে। দুটি পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বেশি।
ঢাকার প্রধান বাজারগুলোতে গতকাল (১ নভেম্বর) ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৫৫–১৬০ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০–১৩৫ টাকায়।
ঢাকার কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর, হাতিরপুল, শ্যামবাজার ও শেওড়াপাড়াসহ প্রধান বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় সবজির দাম প্রায় ১০ টাকা কমেছে। তবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রায় গত বছরের মতোই।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, কিছু পণ্যের দামে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও সামগ্রিক ওঠানামা খুব একটা হয়নি।
বছর ব্যবধানে কমেছে ডিম, আমদানি করা পেঁয়াজ, রুই মাছ, কাঁচামরিচের দাম।
তবে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মাঝারি বিআর আটাশ চাল এখন ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয় সহকারী আলী হোসেন জানাছেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে আটাশ চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহম্মদ নজরুল বলেন, শীতের সবজি আসায় সবজির দাম কমেছে কিছুটা। তবে চাল ও দেশি পেঁয়াজের দাম অব্যাহতভাবে বেড়েছে।
তিনি বলেন, 'সরকারকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। আমরা বাজারে সেভাবে দৃশ্যমান মনিটরিং দেখছিন না।'
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার আমদানি পর্যায়ে চিনি, সয়াবিন তেল, পাম তেল ও ডিমের শুল্কহার কমিয়েছে।
এছাড়া বৃহম্পতিবার চাল আমদানিতেও শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে সরকার। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে মনিটরিং বাড়াতে হবে।
গত বছর এই সময়ের টিবিএসে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় বাজারের বেশিরভাগ সবজির দামে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। যেমন, বরবটি, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, পটল, ঝিঙা, করলা ইত্যাদি এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ৬০–৮০ টাকার মধ্যে ছিল।
বর্তমানে প্রতি কেজি শিম ১০০–১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের সমান। ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ টাকা ও লাউ ৩৫–৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ আব্বাস বলেন, দেশি পেঁয়াজের মধ্যে পাবনার পেঁয়াজ সবচেয়ে ভালো। 'দুই সপ্তাহ আগে ১৩৪ টাকা করে বিক্রি করেছি এই পেঁয়াজ। এখন সেটা ১৫৫ টাকা।'
ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আলুর দাম ৬০ টাকা কেজিতে স্থিতিশীল রয়েছে।
পাইকারি বাজারে দেশি দ্বিতীয় গ্রেডের পেঁয়াজ ১২০–১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে ব্যাবধানে এই মানের দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ২০ টাকা বেড়েছে।
শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহাম্মদ আব্দুল মজেদ বলেন, স্থানীয় মজুদ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের সংকট থাকায় দাম প্রতি বছরই বাড়ে। আমদানি করায় এখন বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯২ টাকায়।'
মাজেদ বলেন, আর কয়েক দিন পর 'মুড়িকাটা' পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এর আগপর্যন্ত আমদানি করতে হবে।
'পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম তেমন বাড়েনি। আর কয়েকদিন পর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে,' বলেন তিনি।
এ সময় দেশীয় মজুতের সংকট পূরণে আমদানি করা পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
'আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা, দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করা, নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষেকে স্বস্তি দেওয়া এগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের,' বলেন তিনি।