বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার করায় কালো টাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ কমেছে
কালো টাকা সাদা করতে সরকারের দেওয়া এক বছরের বিশেষ সুবিধা চলতি অর্থবছরে শেষ হওয়ার পর, মূলধারার অর্থনীতিতে এই টাকা যুক্ত হওয়ার পরিমাণ কমে গেছে ব্যাপক হারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স পেয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। তবে, ২০২১-২২ করবর্ষের রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ায় এ অর্থবছরের পরবর্তী মাসগুলোতে কালো টাকা সাদা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে, আগের অর্থবছর ২০২০-২১-এ ১ হাজার ৯৮১ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছিল। অর্থাৎ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত অর্থবছরের ৫ শতাংশেরও কম টাকা মূল স্রোতের অর্থনীতিতে এসেছে।
মূলত ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হওয়ায় এবার এ খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে বলে কর বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান।
কালো সাদা হওয়া কমে গেলেও বিশেষ এই সুযোগ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রকৃত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এমন বিশেষ সুযোগ দেওয়ার চাইতে কালো টাকার উৎসমুখ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
২০২০ সালের আগের অর্থবছরগুলোতেও অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ ছিল। তবে আইন অনুযায়ী কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিলনা। আর কেউ অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে কর (ওই সময়ে ১০ শতংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ) দেওয়ার পর ওই করের ওপর আরো ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হতো। এছাড়া ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে কর বিভাগ প্রশ্ন না তুললেও অন্যান্য সংস্থার প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল। ফলে মানুষের মধ্যে কালো টাকা সাদা করার আগ্রহও ছিল কম।
তবে ২০২০ সালে কোভিডের আঘাতে বসে যাওয়া অর্থনীতিকে টেনে তোলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। সেইসঙ্গে, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি কেনা ও বাড়ি বানানোর নির্দিষ্ট করের বিনিময়ে টাকা সাদা করার সুযোগও দেওয়া হয়।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন আনা হয় তা হল, টাকার উৎস নিয়ে কর বিভাগ তো নয়ই, অন্য কোনো সংস্থাও প্রশ্ন তুলতো পারবে না। অর্থাৎ, অবৈধ টাকার মালিকরা বিনাপ্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পেয়ে যান।
এ সুযোগ পেয়ে আলোচ্য অর্থবছরে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কালো টাকা সাদা করেন।
তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয় অনেক। পরের বছর সরকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করে দেন। কিন্তু অন্য কোন সংস্থার প্রশ্ন না করার সুযোগ অবশ্য রয়েই যায়।
সম্প্রতি বাজেট আলোচনায় দেশের পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতের উদ্যোক্তাসহ আরও একাধিক খাতের পক্ষ থেকে আগের বছরের বিশেষ সুযোগ আগামী অর্থবছরেও রাখার আহ্বান জানানো হয় এনবিআরের কাছে।
জবাবে এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, "অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পর আমাদের বিরুদ্ধে (এনবিআর) যখন সমালোচনা হয়, তখন তো আপনারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান না।"
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান টিবিএসকে বলেন, "কালো টাকা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, অর্থনৈতিকভাবেও যুক্তিযুক্ত নয় এবং এটি কমপ্লায়েন্ট করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। এজন্য এই সুযোগ থাকা উচিত নয়।"
"এরচেয়ে বরং কর আদায়ে ন্যায্যতা ও কালো টাকার উৎসমুখ বন্ধ করা উচিত", যোগ করেন তিনি।