আনারস নিয়ে দ্বন্দ্বে চীন ও তাইওয়ান
আনারস নিয়ে এর আগে এত শোরগোল বা কূটনীতি হয়েছে বলে মনে হয় না।
চীন আর তাইওয়ানের দ্বন্দ্ব পুরনো। এরই অংশ হিসেবে নতুন পদক্ষেপস্বরূপ গত মাসে চীন তাইওয়ানিজ আনারস আমদানি ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। চীনের দাবি, তাইওয়ান থেকে আসা আনারসে এক ধরনের 'ক্ষতিকারক জীব' রয়েছে যা তাদের নিজস্ব উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে!
তাইওয়ানের নেতারা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন। তারা বলেন, এর সাথে ফসলের পোকার কোনও যোগসূত্র নেই। দেশটিকে চীন সব সময় নিজেদের একটি প্রদেশ হিসাবে বিবেচনা করে আর তাই নতুন এই বাণিজ্যিক লড়াইয়ের মাধ্যমে সেখানে রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তুলতে চাইছে।
চীনের নিষেধাজ্ঞার পর তাইওয়ানের নেতারা আনারস রপ্তানির জন্য নতুন গ্রাহক খুঁজতে শুরু করেছেন। স্থানীয়দেরকেও বেশি করে আনারস খেতে উদ্বুদ্ধ করছেন।
তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এক টুইট বার্তায় লেখেন, "তাইওয়ানের আনারস যুদ্ধবিমানের চেয়ে শক্তিশালী। ভূ-রাজনৈতিক চাপ তাদের স্বাদ কমাতে পারবে না"।
তাইওয়ানের কৃষি পরিষদের তথ্যমতে, দ্বীপটি বছরে চার লাখ ২০ হাজার টন আনারস উৎপাদন করে থাকে এবং বছরে ১০ শতাংশের সামান্য বেশি রপ্তানি করে থাকে। রপ্তানির সিংহভাগ অংশই চীনে যায়।
ফলে চায়না মেইনল্যান্ডে আনারস বিক্রি বন্ধ হয়ে গেলে দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হ্যাশট্যাগ ফ্রিডম পাইনঅ্যাপল
দেশের ভেতরে বিক্রি বাড়ানোর স্বার্থে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি 'পাইনঅ্যাপল চ্যালেঞ্জ' দিয়েছেন।
এছাড়া তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ তার মন্ত্রণালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে সমমনা মানুষকে এ দ্বন্দ্বে তাইওয়ানের সাথে দাঁড়ানোর জন্য এবং 'হ্যাশট্যাগ ফ্রিডম পাইনঅ্যাপল' লিখে আনারসের মুক্তির জন্য অনুরোধ করেছেন!
তাইওয়ানে অবস্থিত আমেরিকান ইনস্টিটিউট তাদের ফেসবুক পেজ থেকে পরিচালক ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্রিস্টেনসেনের ডেস্কে তিনটি আনারস পড়ে রয়েছে।
তাইপেইতে কানাডিয়ান ট্রেড অফিসও আনারসের পিজ্জা হাতে সেখানকার কর্মীদের ছবি পোস্ট করেছে।
পোস্টে লেখা ছিল, "কানাডিয়ান অফিসের আমরা পাইনঅ্যাপল পিজ্জা খেতে পছন্দ করি, বিশেষ করে তাইওয়ানের আনারস দেয়া পিজ্জা"।
প্রেসিডেন্ট সাই জানান, সবার চেয়ে সমর্থনে এগিয়ে আছে জাপানি গ্রাহকরা। তারা ইতিমধ্যে ৫ হাজার টন আনারসের অর্ডার দিয়েছে।
অনেক জাপানি টুইটারে নিজেদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
একজন টুইটে লেখেন, "আমি গত বছর তাইওয়ানের আনারস চেখে দেখেছিলাম। এর সবচেয়ে ভেতরের অংশটিও খাওয়া যায়। আমি এর রসালো মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করি"।
বলা যায়, ভালই কাজে দিয়েছে তাইওয়ান সরকারের সামাজিক মাধ্যমভিত্তিক প্রচারণা; যে আনারস চীনে রপ্তানি করা হত, তাই মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে অন্যান্য দেশে রপ্তানির অর্ডার আসছে।
তবে এখনো ৯০% এর গ্রাহকই স্থানীয়; ফলে উৎপাদনকারীরা উলটো শঙ্কা বোধ করছেন যে, অতিরিক্ত ভক্ষণে কারো আবার আনারসের স্বাদে অরুচি না চলে আসে!
দক্ষিণ তাইওয়ানের ইয়াং ইউফান 'আনারস রাজকুমার' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি জৈব উপায়ে (অর্গানিক) আনারস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
বিবিসিকে তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ানের কৃষকরা চীনা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। কারণ সেখানকার রপ্তানি ও বিক্রয় প্রক্রিয়া জাপান কিংবা অন্যান্য দেশের চাইতে তুলনামূলক সহজ।
তবে তিনি বলেন যে, তাইওয়ানের কৃষিক্ষেত্রতে বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এর রপ্তানির বেশিরভাগই চীনের মূল ভূখণ্ডে যায়।
সূত্র-বিবিসি