চীন ও তাইওয়ানের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা ‘৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ’ অবস্থায়
চীনের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, চিউ কুও-চেং। দুই দেশের মধ্যে যেকোনো সময় দুর্ঘটনাজনিত হামলা হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
চীন পরপর চার দিন তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলে "রেকর্ড সংখ্যক" সামরিক জেট পাঠানোর পর এই মন্তব্য করলেন চিউ কুও-চেং।
তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। আর চীন তাইওয়ানকে দেখে তাদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে। তাইওয়ানকে স্থায়ীভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের অংশ করে নিতে সামরিক শক্তি ব্যাবহারের সম্ভাবনাও নাকচ করেনি বেইজিং।
চীনা জেটগুলো পুরোপুরি এই দ্বীপরাষ্ট্রের উপর দিয়ে উড়ে না গেলেও যেকোনো সময় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে "মিসফায়ার" হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। চীন ২০২৫ সালের মধ্যে এই দ্বীপে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ চালাতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ান যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে, এবং এ ব্যাপারে বেইজিং বেশ উদ্বিগ্ন। এজন্য তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে সেদিকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে সবরকম চেষ্টা করছে চীন।
তাইপেতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধজাহাজ তৈরির জন্য বহু বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ব্যয় বিল প্রস্তাব করার সময় সংসদীয় কমিটির অংশ হিসেবে এসব কথা বলেন চিউ কুও-চেং।
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করায় পর চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাইওয়ান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তাইওয়ান যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে, এবং এ ব্যাপারে বেইজিং বেশ উদ্বিগ্ন। এজন্য তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে সেদিকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে সবরকম চেষ্টা করছে চীন।
সম্প্রতি চীনের এরকম প্রকাশ্য আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাইওয়ানের বেশ কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তার চীনা সমকক্ষ শি জিনপিং "তাইওয়ান চুক্তি" মেনে চলতে সম্মত হয়েছেন।
ওয়াশিংটনের দীর্ঘস্থায়ী "এক চীন" নীতিকে ইঙ্গিত করেই এ কথা বলেছেন বাইডেন। এই নীতি অনুযায়ী তাইওয়ানকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে এক চীনের অংশ হিসেবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এই চুক্তির অধীনে তাইওয়ানের সঙ্গে একটি "শক্তিশালী অনানুষ্ঠানিক" সম্পর্ক ধরে রাখারও সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, ওয়াশিংটনের তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টের অংশ হিসেবে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের আত্মরক্ষার জন্য সব রকম সহায়তা দিবে মার্কিনীরা।
বাইডেন এবং শি দুই জনই তাদের বক্তব্যে "এক চীন" নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। এই নীতিকে চীন-মার্কিন সম্পর্কের একটি মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই নীতির বাস্তবায়নটা ভিন্ন। চীন সরকার "এক চীন" বলতে বুঝে তাইওয়ানও চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা একদিন আবার একসাথে মিলিত হবে।
বাইডেন বলেন, "আমি শি'র সঙ্গে তাইওয়ানের ব্যাপারে কথা বলেছি। এবং তাইওয়ান চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি।"
"আমরা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছি যে চুক্তি মেনে চলা ছাড়া চীন অন্য কিছু করুক সেটা চাই না আমি।"
- সূত্র: বিবিসি