জন্মহার কমায় কমছে শিশু, বাড়ছে প্রবীণ; চীনে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন
জন্মহার কমে যাওয়ায় চীনে কমছে শিশুর সংখ্যার। ফলে নতুন শিক্ষার্থী না পাওয়ায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। গত বছর দেশটিতে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৫ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে চীনে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮০৮টি কমে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০-তে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর দেশটিতে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা কমল।
একইসঙ্গে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা তৃতীয়বারের মতো কমে গেছে। গত বছরে দেশটিতে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ১১.৫৫ শতাংশ বা ৫.৩৫ মিলিয়ন কমে ৪০.৯ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালে চীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও ৫ হাজার ৬৪৫টি কমে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০টিতে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩.৮ শতাংশ কম।
চীনের জন্মহার ও মোট জনসংখ্যা দুটোই কমার কারণে নতুন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার কারণে দেশটির ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গুরুতর হুমকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ছে।
গত বছর চীনের জনসংখ্যা দ্বিতীয়বারের মতো কমে ১.৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ২ মিলিয়নেরও বেশি কমেছে দেশটির জনসংখ্যা। ২০২৩ সালে চীনে মাত্র ৯ মিলিয়ন শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ১৯৪৯ সালে রেকর্ড রাখতে শুরু করার পর সর্বনিম্ন।
চীন জনসংখ্যা ও উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রজনন হার ২০২২ সালে ১.০৯-এ নেমে এসেছে। জনতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, এ হার গত বছর ১.০-এর নিচে নেমে গেছে, যদিও কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই।
প্রজনন হার হচ্ছে মহিলাপ্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার। কোনো দেশের জনসংখ্যাকে স্থির রাখতে প্রয়োজনীয় প্রজনন হার ধরা হয় ২.১।
২০২৩ সালে চীনের অন্যতম ধনী শহর সাংহাইয়ে মোট প্রজনন হার ০.৬-এ নেমে এসেছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীনে নবজাতক ও শিশু আছে, এমন ৩০ শতাংশেরও বেশি পরিবারের চাইল্ড কেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ৫.৫ শতাংশ পরিবার তাদের সন্তানকে নার্সারি বা প্রি-কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করেছে।
এদিকে দিন দিন শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাওয়ায় একের পর এক কিন্ডারগার্টেন প্রবীণ নাগরিকদের কেয়ার সেন্টারে রূপান্তরিত হচ্ছে। এসব স্কুলের অনেক কর্মী চাকরি বদলে এখন বয়স্কদের সেবা করছেন।
বাড়ির চড়া দাম, সন্তান লালনপালনের চড়া খরচ, ভালো স্কুল-কলেজে ভর্তি এবং চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা, এবং অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চীনের পরিবারগুলো দিন দিন সন্তান নিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি পূর্ব চীনের নিংবো শহরের গর্ভধারণযোগ্য বয়সের নারীদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক সিঙ্গেল, নিঃসন্তান নারীরা একটি সন্তান নেবার পক্ষে। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নারী কোনো সন্তানই নিতে চান না। ১৫ শতাংশ নারী দুটি সন্তান চান এবং ১ শতাংশেরও কম নারী এরচেয়ে বেশি সন্তান নিতে আগ্রহী।
আরও দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৫৬ শতাংশ নারী বিয়েকে ঐচ্ছিক ব্যাপার মনে করেন এবং প্রায় ৬ শতাংশ নারী বিয়ে করার কোনো প্রয়োজনীয়তাই দেখেন না।