জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে কোভিড টিকা আবিষ্কার হলেই
আগামীবছর জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে, নিজস্ব পূর্বাভাসে এমন আশাবাদ ধরে রেখেছে গোল্ডম্যান স্যাক্স। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ এ বিনিয়োগ ব্যাংকটির অনুমান, ২০২১ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক প্রান্তিক শেষে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা সরবরাহের উদ্যোগ গতিশীলতা লাভ করবে।
২০২১ সালের আলোচিত মেয়াদে একটি সফল ও কার্যকর টিকা বাজারে আসলে, তা যাত্রীদের আকাশপথে ভ্রমণ উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন পরিবহনেও দরকার হবে অনেক বিমান ও জেট ফুয়েলের, নিঃসন্দেহে যা জ্বালানি বাজারে বড় প্রভাব যোগ করবে।
''বিমানের জ্বালানি চাহিদার স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ আছে, তারপরও ২০২১ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে সকল প্রকার জ্বালানি তেলের বাজারদর নিয়ে আমরা গঠনমূলক প্রত্যাশা করি। টিকা সহজলভ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিও উত্তরণের পথে হাঁটবে। পাশাপাশি ওপেক বহির্ভূত দেশ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অব্যাহত চালান বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে।'' আজ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক বিশ্লেষণী নোটে একথা জানিয়েছেন ব্যাংকটির শীর্ষ বিশেষজ্ঞরা।
গোল্ডম্যানের পূর্বাভাস অনুসারে, জেট ফুয়েলের চাহিদায় ভর করে আগামী বছর বৈশ্বিক তেলের বাজার ফিরবে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায়। তাছাড়া, ইতোমধ্যেই নিম্ন দরের কারণে ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোর তেল উত্তোলনের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও নন-ওপেক দেশ থেকে অতিরিক্ত সরবরাহের ঝুঁকি দেখছে না ওয়ালস্ট্রিটের ব্যাংকটি।
তাছাড়া, হালকা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারসূচক- ব্রেন্ট ফিউচার্স নিয়ে নিজেদের বাস্তবসম্মত অনুমানের কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন গোল্ডম্যান বিশ্লেষকরা। তারা জানান, ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্ত নাগাদ ব্যারেল প্রতি দর ৬৫ মার্কিন ডলার হবে। বর্তমানে এটি ৪২.২১ ডলারে লেনদেন করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ২০২৩ সাল নাগাদ ভাইরাস পূর্ব অবস্থার মতো সংখ্যায় আকাশপথে যাত্রী ভ্রমণ করার অনুমান করছেন তারা।
''জেট ইঞ্জিনের জ্বালানির দর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কখনও পৌঁছেছিল বলে আমরা মনে করি না। বরং এই জ্বালানি পণ্যটির দর প্রবৃদ্ধির অনেক সুযোগ আছে। আগামী এক দশকে এখানে দীর্ঘমেয়াদি সম্প্রসারণ লক্ষ্য করা যাবে'' বিশ্লেষণী নোটে উল্লেখ করা হয়। খবর বিজনেস ইনসাইডারের।
তবে ফলপ্রসূ টিকা আলোচিত সময়ে বাজারে না আসলে; ভ্রমণে কড়াকড়ি অব্যাহত থাকবে, যার ফলে উড়োজাহাজের জ্বালানির দর প্রবৃদ্ধির যে আশা করা হচ্ছে- তা বাস্তবে রূপ নেবে না। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আশা; আগামী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক বা মাঝামাঝি নাগাদ অবশ্যই একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আসবে। তারপর উড়োজাহাজের জ্বালানির দর বর্তমান অবস্থা থেকে আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ দৈনিক ৩৯ লাখ ব্যারেল বাড়বে।
বাণিজ্যিক বৈঠকের অধিকাংশই এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে- ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভ্রমণ কমে যাওয়ার প্রবণতা আগামীদিনে প্রভাব ফেলবে, বলে অনুমান স্যাক্সের। জেট ফুয়েলের আরও দর বৃদ্ধির হ্রাস টেনে ধরতে পারে এ প্রভাব।
ব্যাংকটির শীর্ষ পুঁজিবাজার গবেষণা বিশ্লেষক ক্যাথারিন ও'ব্রিয়েন এবং স্যাক্সের বৈশ্বিক বিমান পরিবহণ বাজার গবেষণা দল পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারমূল্য যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আকাশপথে যাত্রী পরিবহন সংস্থা; সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স, জেটব্লু এয়ারওয়েজ এবং আলাস্কা এয়ারগ্রুপ সংস্থার জন্য বেশি ঝুঁকির অনুমান করছে স্যাক্সের বিশ্লেষক দলটি। তবে এদের চাইতে বেশি ঝুঁকির অনুমান তারা করছেন; দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনের ব্যবসায় জড়িত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে, হাওয়াই হোল্ডিংস এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।