তালেবানের নজরদারির মধ্যেই যেভাবে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের উদ্ধার করা হলো
কাবুলে অবস্থিত নিজ দূতাবাসে কর্মরতদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে গত রোববার (১৫ আগস্ট) ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বোয়িং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার সামরিক পরিবহন বিমান হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সঙ্গে আসে ভারতের অভিজাত বাহিনী ইন্দো-তিব্বতীয় বর্ডার পুলিশের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, অতি-সঙ্গোপনে ও প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে দূতাবাস কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হয়েছে ভারতকে। প্রথম থেকেই গোপন রাখা এ মিশনের বিস্তারিত তথ্য তারা এখন জেনেছে।
গণমাধ্যমটিকে সূত্রগুলি জানায়, বিমান পৌঁছালেও উদ্ধারের কাজ সহজ ছিল না। ১৫ ও ১৬ তারিখ রাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়, যার মধ্যে কোনোপ্রকার উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব ছিল না। তালেবানও কড়া নজর রাখছিল ভারতীয় দূতাবাসের ওপর।
এমনকি কাবুলের কূটনৈতিক এলাকা গ্রিন জোনেও তালেবানরা ঢুকে পড়েছিল। গোষ্ঠীটির সদস্যরা ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়াকরণকারী সাহির ভিসা এজেন্সিতে অভিযান চালায়।
তারমধ্যেই গতকাল সোমবার (১৬ আগস্ট) ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিমানে প্রথম ব্যচে ৪৫ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিমান বন্দরে আসার পথে ভারতীয় কর্মীদের তালেবান প্রহরীরা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এসময় কয়েক জন ভারতীয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কিছু জিনিস কেড়ে নেয় তালেবান। তবে তাদের বিমানবন্দরে যেতে দেয়।
তবে তালেবানের ভয়ে পালানো হাজার হাজার আফগান নাগরিক রানওয়েতে ঢুকে পড়ায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রথমে রওনা দেওয়া বিমানটিকে উড্ডয়নকালে কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল।
বিমানবন্দরগামী সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল বাদবাকি কর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাবুল ত্যাগ করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে ভারত সরকার।
সাহায্য চেয়ে রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন- এর সাথেও আলাপ করেন তাঁর ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্কর।
শুধুমাত্র ভারতীয়দের উদ্দেশ্য করেই তালেবান কারফিউ আরোপ করে বলে জানান সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সবাইকে একসাথে একদিনেই উদ্ধার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে ৮০ জন কর্মী বহনকারী দ্বিতীয় কনভয়কে বিমানবন্দরে আসতে দেওয়া হয়নি। এরপর, আমাদের ওপর কারফিউ দেওয়া হয়, যদিও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের চলাচলে কোনো বাধা ছিল না।
নিরাপদে কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনতে রুশ কর্মকর্তাদের সাথেও আলোচনা করেছে ভারত সরকার। সাহায্য চায় আফগানিস্তান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিদেশী এজেন্সির। এসব পক্ষ মিলে পরবর্তীতে তালেবানকে বোঝাতে সক্ষম হয় এবং শেষপর্যন্ত তাদের সদস্যরা ভারতীয় মিশনের কর্মীদের পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছে।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র ট্যান্ডনসহ মিশনের বাকি ১২০ জন সদস্য দ্বিতীয় ফ্লাইটে ওঠেন। বিমানটি নিরাপদে আফগান আকাশসীমা পাড়ি দিয়ে গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছে।
জামনগরে অবতরণের পর ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ)-কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র বলেছেন, "প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও উদ্ধার করে আনায় আমরা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের আগমন আজ এখানে উপস্থিত সকলের জীবন রক্ষা করেছে।"
জামনগরে জ্বালানি ভরে নিয়ে যাত্রীদের নিয়ে নয়াদিল্লি চলে যায় বিমানটি।
দূতাবাস বন্ধ হয়নি, ভিসা পেয়েছে ১,৫০০ আফগান:
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই দাবি করেছে, কাবুলে তাদের দূতাবাস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি এবং স্থানীয় কর্মীরা কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ১,৬৫০ জন আফগান নাগরিক ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলেও জানানো হয়।
- সূত্র: এনডিটিভি