যে কৌশলে রুবলকে শক্তিশালী করছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রায় 'কোমা'য় চলে গেছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল—ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এভাবেই ব্যাখ্যা করছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির চ্যালেঞ্জকে। যদিও পশ্চিমাদের সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রকরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। তাদের হস্তক্ষেপে কিছুদিন আগের তুলনায় রুবল অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরেছে ।
প্রায় প্রতিদিন ওঠানামার নাটকীয় গতি দেখা যাচ্ছে রুবলের বিনিময় মূল্যে। কিন্তু, খাড়া পতনের পর এখন স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে দর। বর্তমানে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৯৯ রুবল কেনাবেচা চলছে। যদিও তা গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগের সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। তবে গত ৭ মার্চের রেকর্ড পতনের শিকার হয় রুবল, প্রতি ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার নামে ১৫১ রুবলে, বর্তমান হার তাই আগের চেয়ে অনেকটাই শক্তিশালী।
আমেরিকান আর্থিক খাতের তথ্য বিশ্লেষক কোম্পানি ফ্যাক্টসেটের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে জার্নালের প্রতিবেদন।
মুদ্রার বিনিময় হার শক্তিশালী হওয়া সাধারণত একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে এমন ইঙ্গিতই দেয়। তবে রাশিয়ার ক্ষেত্রে এমনটা মনে করার কারণ নেই। এখানে আছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুচতুর কৌশল।
এই কৌশলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে রুবল বিক্রি সীমিত করেছে, অন্যদিকে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির মাধ্যমে ক্রয় বৃদ্ধিতে উৎসাহ দিচ্ছে।
যেসব নাগরিকের বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার, ইউরো) ভিত্তিক ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তারা কী পরিমাণে সেখান থেকে উত্তোলন করতে পারবে তার সীমা বেঁধে দিয়েছে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের গ্রাহকদের কাছে আগামী ছয় মাস বৈদেশিক মুদ্রা না বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি গ্রাহকদের হাতে থাকা সিকিউরিটিজ বিক্রিতেও রুশ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব পদক্ষেপে কঠিন হয়ে পড়েছে রুবল বিক্রি। ফলে মুদ্রার মূল্যপতনের গতি কমানো গেছে।
রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলো দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী। তাদের হাত ধরেই দেশটিতে আসে ডলার বা ইউরোর বিপুল প্রবাহ। এবার রপ্তানিকারকদের তাদের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে রুবল কেনার আদেশ দিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। ফলে রুবলে কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি ফিরেছে।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস জার্নালকে বলেছেন, "রুবল বাজারদরে বিনিময় হচ্ছে না- এমন ব্যাখ্যাই যথার্থ। হস্তক্ষেপ মুক্ত মুদ্রাবাজারে উভয় প্রান্তে বিনিময় চললে আমরা আরো দুর্বল রুবল দেখতাম।"
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইউরোপিয় দেশগুলোর প্রতি রুবলের বিনিময়ে গ্যাস কেনার দাবি জানিয়েছেন। ইউরোপিয় ইউনিয়ন যদি তাতে সম্মতি দেয়, তাহলে মুদ্রা বিনিময়ের চিরায়ত স্রোতই বদলে যাবে। তখন গ্যাসের মূল্য পরিশোধে ইউরোপিয়দের রুবল কিনে তা আবার রাশিয়াকে দিতে হবে। এতে করে রাশিয়ার সব জ্বালানি বিক্রি আসলে রুবলকেই চাঙ্গা করে তোলার পেছনে সমর্থন দেবে বলে ব্যাখ্যা করেন জার্মানি-ভিত্তিক ডিজেড ব্যাংক গ্রুপের বিনিয়োগ অঙ্গঃপ্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ইনভেস্টমেন্ট এর স্থায়ী আয় শাখার প্রধান ক্রিস্টিয়ান কফ।
তবে তিনি এও মনে করেন, ইইউয়ের এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটি রাশিয়ার নিজ মুদ্রাকে চাঙ্গা করার চেষ্টাকে বিশ্বস্তরে তুলে ধরেছে।
- সূত্র: দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল