অরসিকে জানবে ক্যানে
ওয়ারী থেকে ঘোড়ার গাড়ি নিলেন শহীদুল্লাহ মাস্টার, সাথে গ্রামসম্পর্কের ভাগনে—মাতবরশ্রেণীর লোক যার লেখাপড়া নেই কিন্তু সহজাতবুদ্ধিতে বেড় পায় অনেককিছুর। এমনিতে ঢাকায় আসতে ওঁর ভাল লাগে না, ঢাকার লোকে কেবল আতপচাল রাঁধে, পেটে গিয়ে পাথর হয়ে যায় সেই চাল...আর শাদা ভাতে শাদা কিড়া নড়েচড়ে, খাওয়ার কষ্ট সাঙ্ঘাতিক। মন টানে না বলেই বড়মৌলবীসা'ব যখন সাধলেন (শান্তিনগরের) রাস্তার দুধারে ত্রিশ টাকায় বিঘাখানেক জমি কিনে রাখবার জন্য, শহীদুল্লাহ মাস্টার হাঁ হাঁ করে উঠলেন, "আমার বেতনই তো ত্রিশ টাকা, জমি কিনলে খাব কী!" মৌলবীসা'ব জবরদস্তি করলেন—মাসে মাসে কিস্তিতেও কি পরিশোধ করা যায় না? না, যায় না। আসলে যেখানে মন টেঁকে না, সেখানে কীসের ঘরবসত। গ্রামই তো ভাল, কেমন কাঁঠালগাছতলায় বসেই মুসাফির নিজে পেড়ে নিয়ে কাঁঠাল ভেঙে খায়, কাঁঠালগাছের মালিক বাড়িওয়ালাই এসে পানি দেয়, তেল দেয়, মুড়ি দেয়- এই তো দস্তুর। শহরে তা নেই, কথায় কথায় 'ক্যাচাইন' বাধে।
এহেন শহীদুল্লাহ মাস্টারের ঘোড়ার গাড়ি ওয়ারী থেকে এসে মতিঝিলের উত্তরদিকটায় এসে কাদায় আটকে গেছে, ঘোড়া যতই নড়েচড়ে—গাড়ির চাকা ততই দেবে যায়। ভাগনে তিতিবিরক্তমুখে বলে—আর যামু কি! খালি দেহি মোনকাডা (ময়নাকাঁটা?) আর উইয়ের ঢিবি!" কী করবে তবে? চলেন মামু যুদ্ধ লাগছে, প্লেন দেহি গিয়া!...বৃটিশরা রানওয়ে বানিয়েছে কুর্মিটোলায়, সেখানে উড়োজাহাজের ওঠানামা দেখতে চলে গেলেন শহীদুল্লাহ মাস্টার, সারাবেলা চিনাবাদাম খেলেন আর প্লেন দেখলেন। তারপর গ্রামে ফিরে গেলেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্র সংগ্রহ করে চেয়েচিন্তে জায়গা নিয়ে ইস্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন, দোহারে- কাজীরচরে এবং আরো অন্যান্য জায়গায়। করাতকল থেকে বাড়তি কাঠের গুঁড়ি যোগাড় করে তক্তার চাকতি বানানো হবে, মাটিতে বসে পড়ালেখা করা পড়ুয়াদের সামনে একটি করে চাকতি। ঐ প্লেনের উড়াল দেখে জমিন না কিনে ফিরে যাওয়া অদূরদর্শী- অমুখাপেক্ষী- অর্থনৈতিক বুদ্ধিহীন- অসফল লোকটা আমার দাদা, বাপেরও বাপ।
আমার গল্প সেখান থেকে শুরু হওয়া উচিত, কিন্তু বাঙালি মোসলমানের আত্ম-অন্বেষণের অতীতচারী পথে প্রচুর ময়নাকাঁটা আর উইয়ের ঢিবি...কেউ কিছু লিখে যায় না, কিছু এঁকে যাওয়া বারণ বলে এঁকেও যায় না, কেউ কিছু মনেও রাখে না। কাদায় চাকা আটকে যায় বারবার। তবু যা জোটে, তা স্মৃতিভ্রষ্ট পুর্বপুরুষদের বিরক্ত করে জুটিয়ে তোলা, হলফ করে কেউ কিছু বলতে পারে না। ফলে তাবে-তাবেঈনদের (যাঁরা রসুলকে দেখেনি, রসুলের সাহাবাদের দেখেনি, তবে তাঁদের যারা দেখেছে—তাঁদের সান্নিধ্য পেয়েছে) মতো মৌখিক ইতিহাসের উল্লেখমাত্র বলে নিতে হবে—সত্যাসত্য তিনিই (ওপরওয়ালা) জানেন!
শুধু বলতে পারি—ইস্কুলগুলো সত্যিই আছে, এখনো শিশুকন্ঠের কাকলিতে সেসব ইস্কুল প্রগাঢ় নিকুঞ্জ হয়ে আছে। অশিক্ষার প্রতি অসহনশীল দু'জন মানুষ (নানা এবং দাদা) আমার জীবনচিত্রের দুই বিলীয়মান বিন্দু (আপাতদৃষ্টে ব্যর্থ মানুষ দুজনই), ওখান থেকে রাশি রাশি রেখা টেনে টেনে আমার জীবনের পারস্পেক্টিভ গড়ে উঠেছে।
১.
খুব নাকি পথ চিনতাম আমি, টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়েই শুরু করেছিলাম প্রথম দৌড়। হামাগুঁড়ি দেইনি। শুরু থেকেই আমার খুব জলদি করবার তাড়া ছিল বুঝলেন। ঐরকম দৌড়ের এক বয়েসেই নাকি কাঁধে নিজের তোয়ালে নিয়ে বাড়ি থেকে নানাবাড়ি হেঁটে চলে এসেছিলাম, পথ চিনে চিনে। গাঁয়ের লোকে যেমন সূর্য দিয়ে দিক চিনতো, তেমন চিনতে পারতাম; উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে ঠিকানা বাতলে দিলেও ঠিকঠাক চিনে ফেলতাম। পথ চিনে চিনে একদিন পালিয়ে গেছিলাম কান ফুটো করতে আসা সুঁই-দিদিমণির হাত ছাড়িয়ে। এইসবই আমার জ্ঞাতিমুখে শোনা।
আমার মনে আছে সূর্যগ্রহণের একটি দিনের কথা, নানী বারবার বাড়ির ভেতর ডাকছে, গ্রহণের কালে আকাশে তাকাতে নেই...অন্ধ হয়ে যাবে—গ্রহণের আলো নাকি গায়েও লাগাতে নেই, কেন এরা সেটা বলবে না, বলবেই না... এদিকে আমি কুলগাছতলায় খেলছিই। চুরিয়ে সূর্য দেখে অন্ধত্ব পরীক্ষা করবো সেই অপসংকল্পও মনে মনে করা আছে, অস্বীকার করব না। সেই অপার্থিব আলোর কথা আমার মনে আছে, সুপারির মরাটে খোলের মতো রঙ, ঘোলা, ঝাপসা। সুঁই-দিদিমণির গায়েও ছিল মরাটে শাদা থান, মনে আছে আমার, গোল গোল সোনালি ফ্রেমের চশমা চোখে, হেলেদুলে হাঁটতো যেন যম আসছে... 'মানুষ মরবেই' এই অখন্ড বিশ্বাস বুকে নিয়ে মরণশীল মানুষকে রক্ষা করবার সুঁই হাতে করে এগিয়ে আসছে।
আমাদের বাড়িটাকে হাসিখুশি বাড়ি বললে খুব ভুল বলা হবে। আমার শৈশব নাগরিক শিশুর শৈশব। সেই নাগরিক শৈশবের জ্ঞানবৃক্ষে সাপ আর ময়ূর জড়িয়ে ছিল গায়েগায়ে, মানাটুকুই ছিল বিরাট হরফে...সবকিছুতেই মানা, সবেতেই সাপের বিষ আর ময়ূরের সর্বনাশ ছায়া ফেলে আছে। 'হরেক রকম বাজি ও বারুদের কারখানা' সেই বাড়ি। খুব কেজো সেই বাড়ির আবহ। আমার মা সে'বাড়িতে প্রায়ই স্বগতঃ আবৃত্তি করতো, "মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর/ মোর জীবনের রোজ কেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর", আমার দাদুমণি সে'বাড়িতে ভাঙা রেডিও আঁকড়ে চিনচিনে গলায় গান গাইতো, "তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়/ দুখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়।" মাসের অর্ধেক না যেতেই হাত খালি হয়ে গেলে আব্বা করিডোর ধরে গাইতো কে এল সায়গলের 'যব দিল হি টুট গয়া হাম জীকে কেয়া করেঙ্গে'। খালি মেজফুপ্পি মনের সুখে বুকে বালিশ আঁকড়ে 'কড়ি ও কোমল' খুলে উপুড় হয়ে ফুপ্পাকে মধ্যপ্রাচ্যে চিঠি লিখে পাঠাতো "অধরের কানে যেন অধরের ভাষা।" আমার এ বাড়িতে নিজেকে কেবল কারারুদ্ধ মনে হতো।
বড় হতে শুরু করবার যে কোনো ব্যথার বিপরীতে আমার ছিল স্বপ্ন, ঘর ছাড়বার স্বপ্ন। এই অতিষ্ট করে তোলা ঘর ছেড়ে নির্ঘাত একদিন পালিয়ে যাব। একলা যাব না, একার মুক্তি প্রকৃত মুক্তি নয়। প্রভাবিত করবার মতো হাতের কাছে আছে কেবল ছোটভাই। তবে, কবি বলেছেন 'ধনকে নিয়ে বনকে যাব সেথায় খাব কী, বিরলে বসিয়া চাঁদের মুখ নিরখি।', অর্থাৎ খিদে পেলে প্রিয়মুখের দিকে চেয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণার শোক ভুলতে হবে। দেখা গেল ছোটভাই এ বিষয়ে অত্যন্ত হঠকারী—'খাব কী' জিজ্ঞেস করে ধমক খেত আমার। একটা সিঙাড়া দৈনিক খেয়ে বুঝি থাকা যায় না? বুঝতাম, ওকে নিয়ে পালানো যাবে না, অভিমান করে যে একবেলা না খেয়ে থাকতে পারবে না পলায়ন তাকে দিয়ে সম্ভব নয়, একাই যা করার করতে হবে। আর কোনোমতে কোথাও একটা পেঁপের বিচি লাগিয়ে দিলেই গাছ হবে, সেখান থেকে অজস্র পেঁপে, পেঁপেগুলির প্রতিটিতে অসংখ্য বিচি...পেঁপে বেচে জীবন কাটাতে পারব না? অনেক পরে, মানে অনেকটা বড় হয়ে সাংঘাতিক বিস্ময়ে দেখি 'অক্ষয় মালবেরি'তে আমার স্বপ্নসখা আছে, মনীন্দ্র গুপ্ত ভাবছেন বাড়ি থেকে পালিয়ে এক কলাগাছ বুনবেন, সেখান থেকেই ক্ষেত, ফসল আর তরক্কি। এই যে আমি কেন পেঁপে বাছলাম আর মনীন্দ্রবাবু কলা বাছলেন, এ নিয়ে কোনো এঁড়ে তর্ক শুনতে চাই না ভাই।
অত যে মানা, অথচ সেসব বাড়িতে সকলি এত প্রকাশ্য, একখানা মশারীর কিউবয়েডের ভেতরে ছেলেপুলের সমস্ত সংসার, বাড়ির দুই কামরার মাঝখানেও তখন একটি বা দুটি করে কাঠের দরজা, বারান্দায় আর ছাদে উপচে পড়ছে পড়শীর বুভুক্ষু চোখ। হয়তো তাই শিশুর জন্যে অত নিয়মকানুন, অত বাধা। পুতুল খেলতেও মানা (যদি বিয়ের স্বপ্ন দেখে কেবল!), অতএব নিজের আঙুলগুলো নিয়ে পুতুল খেলতে খেলতে সারাবেলা গল্প বানাতাম আমি। সেই অচলায়তন থেকে মুক্তি নেই, মুক্তি নেই। বাপমায়ের সাথে ঘরের বাইরে যাবার বায়না করেও প্রত্যাখ্যানসজল হতে হয়েছে আমাদের। জীবনে একবার শিশুপার্কে গিয়ে অবাক হয়ে সবুজ ঝোপে ঢাকা কৃত্রিম টিলাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর লোহার দোলনা থেকে তড়াক করে নেমে কপালে ঘাই খেয়েছিলাম, এটা মনে আছে। মনে আছে ভাল লেগেছিল মেরি-গো-রাউন্ডে চড়ে। মনে আছে শিশুপার্কের শুরুতেই বাচ্চা ছেলেদের হাত ধরে বড়রা ফিসফিস করে বলছিল—'মালিশ লাগব মালিশ', বাড়িতে বড়রা কেউ সেকালে আমাদের সাথে খেলতো না, খেলনাগুলো বন্দী থাকতো কাঁচের শোকেসে। আব্বা আমাদের কোত্থাও বেড়াতে নিয়ে যেত না, আমরা ছিলাম শালগ্রামশিলার চেয়ে স্থানু। আমাদের বাড়িতে সচরাচর কেউ বেড়াতে আসতো না, শহরের কেন্দ্র থেকে বহুদূরে থাকতাম আমরা, যেসব বাড়িতে খুব মানুষজনের যাতায়াত থাকে সেসব বাড়ির ছেলেমেয়েদের নাকি পড়ালেখার নামগন্ধ থাকে না। ফলে আমাদের দু'ভাইবোনের গা দিয়ে ভুরভুর করে পড়ালেখার গন্ধ বের হতো। একাকীত্ব ছাড়া যেসব সুকুমারবৃত্তি গজিয়ে ওঠে না, সেইসব গজিয়ে উঠছিল আর কী। বাইরের দেশে এসে শুনেছি আঙুরের গাছে যত কম জল ঢালা হয়, গাছের কষ্টে নাকি আঙুর তত মিষ্টি হয়। অর্থাৎ আম্মা-আব্বা আঙুরচাষী হলে কল্পনার পেঁপেচাষীকে টেক্কা দিতে পারতো।
অতশত নিষেধাজ্ঞার ভেতরে এত্তটুকুন ফোঁকর ছিল আমার বইগুলো, মানে 'আউটবুক'। বাড়ির সেই সেন্ট হেলেনায় একমাত্র নিস্তার। পোশাকের দেরাজের ভেতর দিয়ে নার্নিয়ার মতো কোনো দেশে চলে যাওয়ার ল্যাবিরিন্থ। দিবারাত্রি নিঃশেষে ক্ষয় করবার একমাত্র মনোভূমি। একরকমের ছবিবোঝাই চীনা বই আসতো, পাতাজোড়া ছবির নীচে দুই লাইন করে লেখা। একটার নাম মনে আছে 'জীনহুয়া ও ভাল্লুক', বড় বোনের কাছে ছোটভাইকে জিম্মা করে দিয়ে মা গেছে খালার বাড়িতে, রাতে ভাল্লুক এসেছে জীনহুয়াদের খেতে, নাশপাতি গাছে চড়ে বর্শা ছুঁড়ে দিয়ে জীনহুয়া ভাল্লুককে মেরে ফেলছে, অর্থাৎ চীনা দর্শনেও 'সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই'। আমি মায়ের কাছে শুনে শুনে ওরকম অনেকগুলো 'আউটবুক' মুখস্ত করে ফেলেছিলাম অক্ষরজ্ঞান হবার আগেই, জায়গামতো পাতা উল্টাতাম অথচ অক্ষর চিনি না। ঐ যে বললাম খুব তাড়া ছিল আমার। প্রথম সন্তানের কাছ থেকে মায়ের প্রথম রোমহর্ষ সেটা। ইস্কুলের শুরুতে মানে নার্সারিতে আমার হিফজ দেখে শিক্ষকরা বিশ্বাস করলেন না যে আমি নিরক্ষর, ভাবলেন আম্মা বয়স ভাঁড়িয়ে বাচ্চা নার্সারিতে দিচ্ছে।
পাঠ্যবই আমি স্কুল শুরু হবার আগেই পড়ে শেষ করে ফেলতাম, ওতে তেমন রসদ থাকতো না। জীবন ঋদ্ধ হবে এমন সমূহ সম্ভাবনার চিন্তা করে আমার প্রবল পরাক্রমশালী বাপমা আমাকে পড়তে কখনো বাধা দেয়নি। বাধা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না, বরং নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও চেষ্টা করেছে। নিউমার্কেট থেকে আম্মা কত বই কিনে আনতো, আর সোভিয়েত প্রকাশনীগুলোর বই ছাড়া আমাদের প্রজন্মের শৈশবের কোনো কথা হবে না। তবে হ্যাঁ, বইয়ের মতো এত স্থবির কিছু মনকে এত জঙ্গম করে তুলতে পারে, 'নীরত্যাগপূর্বক ক্ষীরগ্রহণ'-এর সাহস যোগাতে পারে এমনটাও মা-বাপ ভাবেনি, ছোট ছোট কামরার চৌখুপীতে অতটা পরিবর্তনের সংস্থান হবে কী করে!
সেকালে ইস্কুলে কিছু ইংরেজি সাপ্লিমেন্ট বুক পড়াতো, রাইমসের বই দিয়ে শুরু। সেই 'রাইড আ কক-হর্স টু ব্যানবুরি ক্রস'-এর হ্রেষারত শাদা ঘোড়ায় ভিক্টোরিয়ান রীতিতে একপাশে চড়া মেম, যার পায়ে রুপার ঘন্টা... এই ছবিটা আমার দারুণ লাগতো। 'মেরি মেরি কোয়াইট কনট্রারি হাউ ডাজ ইওর গার্ডেন গ্রো' তেও বাগানে রুপার ঘন্টা বাঁধা আর ঝিনুক...তার ভেতর আর্ট-ডেকো রীতিতে আঁকা 'কোয়াইট কনট্রারি' মেরি উদাসমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে...এই ছবিটাও, তখন কি আর জানতাম এই মেরি উদাস-বিধুর মেরি নয়, এ হলো সাক্ষাৎ হেনরী দ্য এইটথ-এর মেয়ে মেরি। আমি এইসব ছবি নকল করে আঁকতাম। আঁকতাম 'সকল জামাই খেয়ে গেল মেজজামাই কই'-এর জলরঙে আঁকা মেজজামাইকে, আঁকতাম 'ওখানে কে রে, আমি খোকা'-র দাঁতে পোকা ধরা খোকা আর তার মাথার আমের ঝাঁকা। বসে বসে লীলা মজুমদারের 'নতুন ছেলে নটবর' থেকে মধুমালতীর ছবি আঁকতাম, যার বর-জুটবার কপাল খানিকটা সিন্ডারেলার মতো কিন্তু রাজপুত্রের বদলে তার জোটে সার্কাসের মালিক।
আনন্দমেলায় চন্দ্রভানু ভরদ্বাজের 'ত্রিবেণী-দর্শন' হোক কী পূজাবার্ষিকীতে বুদ্ধদেব গুহর 'ঋভুর শ্রাবণ', এসবের সাথে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ইলাস্ট্রেশনগুলো আমার খুব প্রিয় ছিল, পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নকল করতাম, ঝর্ণাকলমের স্কেচ...তার সাথে ফেল্ট পেনের হ্যাচিং, কিংবা মোটা করে তুলির ছোপ। আম্মা নিউমার্কেট থেকে এনে দিয়েছিল প্রথম ইংরেজি গল্পের বই— 'রেলওয়ে চিল্ড্রেন' আর 'লিটল উইমেন'। পড়ে পড়ে লিটল উইমেনের চার কন্যার আলাদা আলাদা চারটি চেহারা আঁকতাম। লিটল উইমেনের জো'র মতো একদিন আমিও চিলেকোঠায় শাদা ইঁদুর পালবো আর প্রথম পান্ডুলিপির মুসাবিদা করবো, এইসব ভাবতাম।
কথা হচ্ছে— ইংরেজি রাইমসে যারা গরমকালে ব্যানবুরি ফেয়ারে যেত খড়বিচালি গরুঘোড়া ইত্যাদি বেচতে, তারা আমার দেশের কেউ নয়, তাদের আমি পথেঘাটে দেখিনি, বিলেতের পথঘাট থেকেও তারা শত বর্ষ আগে বিদেয় হয়ে গেছে। পাকা ফলারখেকো বামুনকেও আমি চর্মচক্ষে দেখি না, নটবর-টাইপ ছোকরাদেরও দেখি না। 'কোয়াইট কনট্রারি' সেই মেরির অদ্ভূত বাগানের মতন আমিও গজিয়ে উঠছি এমন সব শিখে যা সময়-পরিক্রমার মেশিনে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া দূরবর্তী অতীতের। যার সাথে সমকালের কোনো মিল নেই। যা আমাদের বাড়িতে 'ছুডো ডিম' বেচতে আসা জামালপুরের মেয়েটাকে ঠিক চিনিয়ে দেয় না। ফলে বাড়ির বাইরে এবং ইস্কুলে আমি যা হয়ে উঠছিলাম সেটা 'কোয়াইট কনট্রারি' মেরিই বটে।
সেসব বয়েসে এবং তারপরও অনেকদিন পর্যন্ত শুধু বই আমাকে অনেক কিছু বলতো যা বড়রা কেউ বলতো না। মনে আছে 'আনন্দমেলা' খুলে রতন সেনের হাত ধরে মানালির পাইনবন পার হয়ে হিড়িম্বা মন্দিরে যাচ্ছি, যার আরেক নাম ডুংরি মন্দির। যে শিল্পী এই অনুপম মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন তাঁর ডান হাত নাকি মন্দির-কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলে, যেন এই শিল্পী দ্বিতীয় আর কোনো মন্দির গড়তে না পারেন—
"কিন্তু শিল্পীর রক্তে ছিল শিল্প। তাই শিল্পীর বাঁ হাতও হয়ে ওঠে সমান দক্ষ। একদিন তাঁর ডাক পড়ে চাম্বা উপত্যকায়। সেখানে তৈরি হয় ত্রিলোকনাথের মন্দির। এই মন্দির যেন কথা বলে। হার মেনে যায় ডুংরি। ভয় পায় ত্রিলোকনাথের কর্তৃপক্ষ। যদি এই শিল্পীর হাতে তৃতীয় কোনো মন্দির আরো সুন্দর হয়ে ওঠে! এই আশঙ্কায় সেই মহান শিল্পীর বাঁ হাত না কেটে একেবারে মাথাটাই কেটে ফেলে তারা।"
ভারতের আনন্দমেলার অনুকরণে তখন বের হচ্ছে এদেশের কিশোরজগত, কিন্তু সেটা অসম প্রতিযোগিতা। কী করে? হোমিও ল্যাবরেটরির জ্যাবোরান্ডি কেশতেলের বিজ্ঞাপনে কার্টুনে দশমাথাওয়ালা রাবণের দশখানা মাথায় চকচকে টাক, আর তেল মাখবার পর মাথাবোঝাই চুল, সাথে ছড়া—
'রাবণ রাজার টাক ছিল/ পরচুলোতে ঢাকছিল।। জ্যাবোরান্ডি মেখে মাথায়/ চুল এলিয়ে হাসছিল।।'
আজ অব্দি ভুলিনি সেই তেলের নাম কিংবা ছড়া।
প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত, অতুল সুর, শ্রীপান্থ, পূর্নেন্দু পত্রী তখন শিশুদের জন্য লিখছেন কলকাতার পত্তনের ইতিহাস নিয়ে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখছেন 'কালো পর্দার ওদিকে' কিংবা 'জঙ্গলগড়ের চাবি', সমরেশ বসু লিখছেন গোগোলকে নিয়ে 'টেলিফোনে আড়ি পাতার বিপদ', মাঝে মাঝে লীলা মজুমদারের 'উটকো আর ফেলনা'। আর তখন নিয়মিত বের হচ্ছে ফেলুদার 'অম্বর সেন অন্তর্ধান রহস্য', সাথে পাতাজোড়া সত্যজিত রায়ের অতুলনীয় অলংকরণ।
ম্যাগাজিনের সাথে আসছে গাদা গাদা বিজ্ঞাপন, সেগুলোতেও আমার অসহ্য কৌতূহল উপচে পড়ছে। রিয়া লেবুসাবানে টিনা মুনিমের ছবি, নিউট্রামুল শক্তিবর্ধক, বাপী হোসিয়ারির জাঙ্গিয়া, রবিনসন্স বার্লি, দুলালচন্দ্র ভড়ের তালমিছরি, মর্টন টফি, বিনাকা ফ্লুরাইড টুথপেস্ট, তন্তুশ্রীর শাড়ি। 'দেশ'-এ জন্মনিরোধকের বিজ্ঞাপনে লেখা 'বানভাসির সময়েও নিশ্চিত সুরক্ষা', এই বানভাসি কী বস্তু? ক্রিকেটে জয়-পরাজয় আর টারজানের (জনি ওয়াইজমুলার, তাঁকে দেখে আমার ছোটবেলায়ও গা শিরশির করতো) সচিত্র মৃত্যু সংবাদ। নিউমার্কেটে তখন ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনে দেখা বেশ কিছু জিনিস পাওয়া যেত, যেমন বোরোলিন, কেয়ো-কার্পিন। বেঙ্গল কেমিক্যালের অ্যাকোয়া টাইকোটিস পাওয়া যায় কি না মনে নেই। শুধু যদি রুপির দাম টাকার দ্বিগুণ না হতে অতিগরবিনী 'জিনাত বুক ডিপো' থেকে কত বই যে কিনতে পারতাম! সলিম আলির পাখি বিষয়ক বইটায় শুধু হাত দিয়েছিলাম বলে কী বকলো সেই বইয়ের দোকানদার লোকটা। (অবশ্য আর ক'দিন পরে অ্যান্টেনায় এলুমিনিয়ামের সরা জুড়ে দিয়ে আকাশপথে বাঙালি উড়িয়ে আনবে দূরদর্শনের 'রামায়ণ' আর 'মহাভারত'! রামানন্দ সগরের 'রামায়ণ'এর শুরুতে আমরা সারি ধরে বসে গাইব 'সীতারাম চরিত অতি পাবন'। আহা গান্ধীজি দেখে গেলেন না, টিভি সিরিয়াল 'সকলি সমান করে'...)
তখন বাতাসে অনেক নাম ভাসছে, সেসবই একনায়কদের কেলেঙ্কারি-ময় নাম। ফিলিপাইনের ফার্দিনান্দ মার্কোস, তারপর আসবে রুমানিয়ার নিকোলাই চসেস্কু, অদূর ভবিষ্যতে সবার নাম ডুবে যাবে বাংলাদেশের একনায়ক এরশাদের নামের তলায়। এসবের আগে অবশ্য পামেলা বর্দেসের সচিত্র যৌন কেলেঙ্কারি ছাপা শুরু হবার পর থেকে খবরের কাগজ দরজার তলা দিয়ে বাড়িতে এলেই লুকিয়ে ফেলা হবে...
যে বাড়িতে নোবেলজয়ী আইরিশ কবি শেমাস হিনি শৈশব কাটিয়েছিলেন, সে'বাড়ির পাশ দিয়ে রেললাইন গেছিল, রেলপথ বরাবর গেছে টেলিগ্রাফের তার, বৃষ্টির দিনে সেই টেলিগ্রাফের তার ধরে জলের ফোঁটা বয়ে যেত, আর ছোট্ট হিনি ভাবতেন টেলিগ্রামগুলো আসলে বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় বাহিত হয়ে আসে। এভাবেই হয়তো জীবনে দেখা প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের কাছে আলাদা মানে হয়ে আসে, দেয়ালে প্রথম বৃষ্টির ঝাপটায় সৃষ্টি হয় অজস্র আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। একরকমের কৌতূহল আর বিস্ময় ছিল আমার— যা কিছু ঘটমান ছিল প্রাকৃতিক আর সামাজিক পরিবেশে তাই নিয়ে। বইয়ের জগতে অনেক কিছু ঘটতো, অনেক গর্হিত, অনেক উল্লেখ্য, অনেক উল্লেখের অযোগ্য। সেইসব টানাপোড়েন বাস্তবের জগতের সাথে মেলাবো, এমন উপায় ছিল না... প্রশ্ন করলেই খেউখেউ করে উঠতো বড়রা। যেমন— মালঞ্চমালা কেন রেঁধে দিত কিন্তু বেড়ে দিত না (কিশোর স্বামী যেন প্রমাদবশে 'মা' না ডাকে...কিন্তু ডাকলেই কি কেউ অপরিবর্তনীয়ভাবে মা হয়ে যায়? পৃথিবী উল্টে পড়ে গেলেও কি রূপবান তার কিশোর স্বামীর মা হতে পারে?)?
তার চেয়ে বিড়লা একাডেমি অভ আর্ট অ্যান্ড কালচারে অগুস্ত রঁদ্যার প্রদর্শনী নিয়ে লিখছেন অহিভূষণ মালিক, তাই পড়া কত উপাদেয়! রঁদ্যা নাকি সাংঘাতিক ভাস্কর, কিন্তু ওঁর 'থিংকার'-এর মতো একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকেও তো চিন্তা করতে দেখি না, মাথা ঘামাতেও দেখি না আজেবাজে কথা বলবার আগে। নানী-দাদীদের যেমন থাকে, তেমনি ছিল আমার নানী-দাদীদের পরকালপরায়ণ মুখ; সেই মুখে এন্তার গল্পকথায় কেবলি একদিন নিশ্চিহ্ন নাস্তিতে মিশে যাবার নিশ্চয়তা, মনকে ঝিমিয়ে তুলবার অব্যর্থ আফিম। অথচ বইয়ের কাগজগুলো এমন এক পৃথিবী রচনা করে দিত যা অবিনশ্বর। কীসব দেশ দেখাতো— মানুষ দেখাতো, রান্নার বই আর মানচিত্রের বই, ইতিহাসের বই, ইস্কুল- লাইব্রেরির গল্পের বই আর মায়ের বিয়েতে উপহার পাওয়া বই। বই এমন এক ক্যালাইডোস্কোপ আমার চোখের সামনে ধরে দিয়েছিল, যার ভেতরকার রঙিন ঘূর্ণিতে চোখ রেখে আমি ভুলে গেছিলাম আমি আসলে অন্য কোনো দেশই দেখিনি, দেখিনি নিজের দেশটুকুও ঘুরেফিরে। ঘরে যেসব ঘরের মানুষ আমাকে নিয়ে সমষ্টি রচনা করে তাদের বাইরে আমি এমনকি মানুষও দেখিনি। এই বইগুলি ছিল আমার কাছে পরিব্রাজকের ভ্রমণকথা, দেশভ্রমণের আকাশবাহন। বাইরের আঘাত যত প্রবল হয়েছে, ততই বইয়ের বিপত্তারণ রজ্জু এঁটে বসেছে আমার বুকে।
তেতলার ঘরে গড়িয়ে গড়িয়ে অলস বেলা পার করতাম বই নিয়ে, কাপড়ের আলনার আড়ালে চলে গিয়ে চুপটি করে পড়তাম বই। পুরনো দেরাজ থেকে বের করে নেড়েচেড়ে দেখতাম বেলা দে'র বই আর সেকালের অচেনা এক মহিলার লেখা চীনা রান্নার বই, তাতে লেখা ভাতকে মাড়ের সাথে মিলিয়ে লেই গড়ে চীনারা কেমন তাতে যোগ করে শ'খানেক বছরের পুরানো ডিম আর নোনা মাছ। কী করে 'সব্জী তেল' সহযোগে 'ছত্রাক' এবং 'বাঁশের মঞ্জরী'র ফ্রায়েড রাইস তৈরি করতে হয়, 'সয়াবিন-ছানা' (তোফু) ভাজতে হয়, কিংবা ভাপে-সেদ্ধ ভাতে গর্ত করে সেই গর্তে একটু চর্বি ফেলে তার ওপর একেকটি ডিম ভেঙে দিতে হয়। তারপর লিচু আর চন্দ্রমল্লিকার পাঁপড়ি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হয়...এইসব।
পড়তাম আর সিমেন্টের মেঝেয় উপুড় হয়ে শুয়ে কান পেতে শুনতাম নীচতলার ঘরের লোকদের জীবনের আওয়াজ পাওয়া যায় কি? নাকি স্টিলের আলমারিতে কান পাতলে নীচতলার ঘরের কথোপকথন শোনা যায়? চিত হয়ে শুলেই পাখার ঘুর্ণি, প্রায়ই মনে হতো একটা কিউবের মতো যদি ঘরটা উলটে যায় আমি কি পাখাটার পাশ দিয়ে হেঁটে যাব? লাল সিমেন্টের মেঝেয় কাঁচা অবস্থায় দড়ি পেতে সরলরেখা এঁকে তৈরি কালো সিমেন্টের পাড়, উত্তাল পাখার তলায় সেই মেঝের ওপর প্রতিদিনকার ঘর মোছার দাগ শুকায়, এর আরেক নাম পেটেন্ট স্টোনের মেঝে, হিম হয়ে থাকে সেই মেঝে, সেখানে বিভোর হয়ে শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবাই যায়। গ্রামের মাটির উঠান সে তুলনায় আরো ব্যঞ্জনাময়, ফকফকে ঠনঠনে শাদা আর মাটির ঘরের মেঝে সজল বার্ন্ট অ্যাম্বার... সেই ঘরের মেঝেয় শুয়ে দেখলে আরেক দৃশ্য, কমলা কমলা আলোর রেখা বেড়ার ঘরের সব ফুটো দিয়ে গলে আমার গায়ে এসে একটা শ্বাপদের মতো করে তোলে, আমিও গুঁড়ি মেরে বসে থাকি, খাটের তলার ঝুনো নারকেল- টোল পড়া কাঁঠাল- গুটানো পাটি- ইঁদুরকল- দড়ি- ছিকা- ভাঙা যন্ত্রপাতি সব দৃশ্যমান, যে কোনো শিকার দেখলেই লাফ দেব। কিছুই কি আমার কপালে নেই? লাকড়িঘর থেকে পালিয়ে আসা একটা সাপ কিংবা অদ্ভূত ভঙ্গিতে দৌড়ে পালানো তেলতেলে আর্জিনা? সেই অপেক্ষার কালেও আমার সঙ্গী আছে, 'কড়ি দিয়ে কিনলাম', বাচ্চুকাকার বৌ চাপকল চাপা থামিয়ে ভেজা হাত পাছার দু'ধারে মুছতে মুছতে এসে দিয়ে গেছে হাতে— "আউটবই পড়ো, তুমি বুলে ভালবাসো!" গ্রাম অভিনব, গ্রামের মেঝেয় অপেক্ষা করাটা অনেক বর্ণাঢ্য।
বড়রা চাইলেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জীবনপাঠের সুযোগ দিতে পারতো, বিশেষত পরিণতবয়স্কারা (মেয়েশিশু হবার সুবাদে আমার কাছে খোলামেলা হতেই পারতো), কিন্তু ওরা খুব লুকোত। লুকিয়ে কাঁদত, কাঁদতে কাঁদতে মরিচ বাটতো আর সেই বাটা মরিচেই শাদা ফ্যাকফ্যাকে ভাত লাল করে গড়ে খেয়ে ফেলত, চোখের জল দুঃখের না ঝালের আর বোঝা যেত না, লুকিয়ে ফিচফিচ করে হাসতো, 'লুকিয়ে ভালবাসবো তারে'ও ছিল। পাতের চারপাশে এঁটো ভাতের কাঁই, তার পেছনে কত সজল মানুষ, তারা কত কাঁদে অথচ কত কী না ভেবেই জীবন পার করে দেয়... আর সেইসব ভাত-তরকারি এঁটো হতে থাকা দুপুরে দাঁড়কাকগুলো ধাতবকঠিন ঠোঁটে করে এক আঁজলা জল নিজের পিঠ বরাবর ছুঁড়ে দিয়ে স্নান করে ছাদের অর্ধসমাপ্ত চৌবাচ্চায়।
(প্রকাশিতব্য বই 'ডাল বরাবর'এর একাংশ)