পেসারদের রাজত্বে রাজা হৃদয়-শুক্কুর
তার গায়ে রাজার ট্যাগটা এখনও জ্বলজ্বলে। চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বজয়ের যে মহাকাব্য লিখেছিল বাংলাদেশের যুবারা, সেখানকার অন্যতম সেনানী ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। কেবল বয়সভিত্তিক পর্যায়েই নয়, সীমানাটা তার আরও বড়। কয়েক মাসের মাথায়ই সেটা প্রমাণ করলেন ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে মাহমুদউল্লাহ একাদশের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে নাজমুল একাদশ যখন ধুঁকছিল, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন ম্যাচ সেরা তৌহিদ হৃদয়। সঙ্গে পেয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ ইরফান শুক্কুরকে। পেসারদের ছন্দময় বোলিংয়ের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করে দুজনই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। হৃদয়-শুক্কুরের ব্যাটে মাহমুদউল্লাহ একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নাজমুল একাদশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় মাহমুদউল্লাহ একাদশ-নাজমুল একাদশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে ১৯৬ রানে অলআউট হয় মাহমুদউল্লাহর দল। জবাবে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারালেও হৃদয় ও শুক্কুরের ১০৫ রানের জুটিতে ৪১.১ ওভারে জয় তুলে নেয় নাজমুল একাদশ।
পুরো মাচেই পেসারদের রাজত্ব দেখা গেছে। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, মকিদুল ইসলাম ধ্রুবদের তোপের মুখে ভালোই বেগ পেতে হয় মাহমুদউল্লাহর দলকে। ২টি করে উইকেট নেন তিনজনই। পরে নাজমুল একাদশকেও ভুগিয়েছেন মাহমুদউল্লাহর দলের ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন। ৩ উইকেট নেন তিনি। পেসারদের এমন দিনেও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল হয়ে হৃদয়-শুক্কুর।
১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না নাজমুল একাদশের। দলীয় ২৭ রানে থামেন ওপেনার সাইফ হাসান। ১৭ রান করে বিদায় নেন তিনি। এরপর সৌম্য সরকারও ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে রানখরায় থাকা মুশফিকুর রহিম এদিনও রানের দেখা পাননি। অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্প ভাঙে ১ রান করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের। শুরুর তিনটি উইকেটই নেন এবাদত।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এক পাশ আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতে থাকে। ৪ রান করে বিদায় নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ২৮ রান করা শান্ত ৭৯ রানের মাথায় ফিরলে বিপদেই পড়ে যায় নাজমুল একাদশ। এখান থেকে দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন হৃদয় ও শুক্কুর। গড়েন তোলেন ১০৫ রানের জুটি। এর মাঝে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হৃদয়।
এই জুটি ভাঙে ম্যাচ সেরা হৃদয়ের বিদায়ে। ফেরার আগে ৬৭ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রান করেন তিনি। বাকি কাজটুকু সেরেছেন ইরফান শুক্কুর ও নাঈম হাসান। ৭৮ বলে ৬টি চারে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন শুক্কুর। ছক্কা মেরে খেলা শেষ করা নাঈম ৪ বলে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। এবাদত ৪৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পান মাহমুদউল্লাহ, রাকিবুল হাসান ও আমিনুল ইসলাম বিল্পব।
এরআগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয় মাহমুদউল্লাহ একাদশের। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলায় বিরতি পড়তেই ছন্দ হারায় তারা। কয়েক মিনিটের বৃষ্টির পর মাঠে ফিরেই আউট হন নাঈম শেখ। রান আউট হয়ে থামতে হয় তাকে। চার রান পর বিদায় নেন লিটন কুমার দাস। তাসকিনের বলে ভাঙে তার স্টাম্প।
নাঈমকে হারিয়েই ওলট-পালট হয়ে যায় মাহমুদউল্লাহর দলের ইনিংস। লিটনের বিদায়ের পরের ওভারে মুমিনুল হকের স্টাম্প উপড়ে নেন আল আমিন হোসেন। ২১ রানেই ৩ উইকেট হারায় তারা। এমন সময় দলের হাল ধরেন ইমরুল কায়েস ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি থেকে ৭৪ রান পায় মাহমুদউল্লাহর দল।
ধীর-স্থিরভাবে খেলতে থাকা ইমরুল শট খেলতে গিয়ে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ দেন। ফেরার আগে ৫০ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রান করেন বাঁহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে এগোতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ১২৬ রানে রান আউটে কাটা পড়েন ১৪ রান করা নুরুল হাসান।
এরপর কিছুটা সময় ব্যাট চালিয়েছেন ইনিংসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০ রানের গন্ডি পেরনো মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৮২ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৫১ রান করেন। সাব্বির রহমান ২২, আবু হায়দার রনি ১৪* ও বিশ্বজয়ী যুব দলের সদস্য রাকিবুল হাসান ১৫ রান করেন।
অনুশীলন থেকে দারুণ বোলিং করে আসা তাসকিন আহমেদ প্রস্তুতি ম্যাচের পর এখানেও বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। ১০ ওভারে ৩৭ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন ডানহাতি এই পেসার। আল আমিন হোসেন ও মকিদুল ইসলাম মুগ্ধও ২টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া নাঈম হাসান ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৪৭.৩ ওভারে ১৯৬ ( লিটন ১১, ইমরুল ৪০, মাহমুদউল্লাহ ৫১, সাব্বির ২২, সোহান ১৪, আবু হায়দার ১৪*, রাকিবুল ১৫; তাসকিন ২/৩৭, আল আমিন ২/৪০, মুগ্ধ ২/৪৪, নাঈম ১/৩৯ ও সৌম্য ১/১)।
নাজমুল একাদশ: ৪১.১ ওভারে ১৯৭/৬ (সৌম্য ২১, শান্ত ২৮, হৃদয় ৫২, শুক্কুর ৫৬*; এবাদত ৩/৪৬, মাহমুদউল্লাহ ১/২৭)।
ফল: নাজমুল একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: তৌহিদ হৃদয় (নাজমুল একাদশ)
সেরা ব্যাটসম্যান: ইরফান শুক্কুর (নাজমুল একাদশ)
সেরা বোলার: তাসকিন আহমেদ (নাজমুল একাদশ)
সেরা ফিল্ডার: রিশাদ হোসেন (নাজমুল একাদশ)