পেনাল্টি নাটকের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে ফ্রান্স
শেষ আটের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
কাতারের আল বাইত স্টেডিয়ামে হ্যারি কেইনের পেনাল্টি মিসের ফলে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো সমতা ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করে ইংল্যান্ড। এবারের টুর্নামেন্টে নিজের ৪র্থ গোল করে ফ্রান্সের জয়ের নায়ক অলিভিয়ের জিরু।
১৯৫৮ এবং ১৯৬২ বিশ্বকাপে টানা দুইবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর এই কীর্তি গড়তে পারেনি কোনো দল। এবার সেই অর্জনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ফ্রান্স। শেষ আটের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে মরক্কোর বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল লে ব্লুজরা।
১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর আর কখনো ফাইনাল না খেলা ইংল্যান্ডও এবার কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ছিলো। কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারল না থ্রি লায়ন্সরা।
ম্যাচের প্রথমার্ধের শুরুতে দুই দলই ধীর গতিতে খেলতে থাকে। আক্রমণ সাজানোর স্পৃহা দেখায়নি কেউই। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসতে থাকে ফ্রান্স। যদিও কিলিয়ান এমবাপ্পে তেমন সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
দুই দলই যেন ডি-বক্সের কাছে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছিল। তাই ডি-বক্সের বাইরে থেকেই চেষ্টা করলেন ফ্রান্সের মিডফিল্ডার চুয়ামেনি। ১৭ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে তার দুর্দান্ত শট ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ডেকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যায় জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
এরপর বক্সের মধ্যে হ্যারি কেইনকে ফেলে দেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার উপামেকানো, তবে পেনাল্টি দেননি রেফারি। ভিএআর চেকেও বহাল থাকে রেফারির সিদ্ধান্ত। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছুটা চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালায় ইংল্যান্ড, তবে ফ্রান্সের রক্ষণ কোনো বিপদ ঘটতে দেয়নি। গোল করার পর ফ্রান্সের আক্রমণেও তেমন ধার ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল শোধ করার মানসিকতা নিয়ে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। বেশ কয়েকবার ফাউলের স্বীকার হন সাকা, যার মধ্যে একটি করে বসেন ফ্রান্সের গোলদাতা চুয়ামেনি। বক্সের মধ্যে সাকাকে ফেলে দেওয়ার সাথে সাথেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘদিন একসঙ্গে খেলা ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিস ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং পেনাল্টি টেকার হ্যারি কেইনের খুঁটিনাটি বেশ ভালো করেই জানতেন। তাই শট নেওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে দেখা গেল কেইনকে।
কিন্তু চাপ সামলে দুর্দান্ত কিকে সমতা ফেরান তিনি, এই গোলের সাথে সাথে ওয়েইন রুনির সমান ৫৩ গোল করে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় কেইন এখন শীর্ষে।
পুরো ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে থাকা ফ্রেঞ্চ আক্রমণভাগ এরপর যেন কিছুটা ডানা মেলল। আর সেই সুবাদেই ম্যাচের ৭৭ মিনিটে গ্রিজমানের ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে বল জালে জড়ান অলিভিয়ের জিরু। কদিন আগে ফ্রান্সের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যাওয়া জিরুর এটি কাতার বিশ্বকাপে ৪র্থ গোল।
ম্যাচ জেতার জন্য এরপর আর ১০ মিনিট ইংল্যান্ডের আক্রমণ সামলালেই হয়ে যেতো ফ্রান্সের। কিন্তু সে আর হলো কই! বক্সের ভেতর অযথাই মাউন্টকে কাঁধের ধাক্কায় ফেলে দিলে হার্নান্দেজ। প্রথমে পেনাল্টি না দিলেও ভিএআর চেকের পর সিদ্ধান্ত বদলে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ দেন রেফারি।
ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিট বাকি থাকতে দ্বিতীয়বারের মতো স্পটকিক থেকে সমতা ফেরানোর সুযোগ আসে হ্যারি কেইনের সামনে, সেইসাথে রুনিকে ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার হাতছানিও ছিল তার সামনে।
তবে এবার আর পারেননি কেইন, প্রথম শটের মতো দ্বিতীয়টিও একইদিকেই মারেন তিনি। কিন্তু জোর বেশি হওয়ায় বল বারের বেশ উপর দিয়েই চলে যায়।
এরপর চেষ্টা করেও গোলের দেখা পায়নি ইংলিশরা। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিক পায় থ্রি লায়ন্সরা। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব পড়ে রাশফোর্ডের উপর, যিনি ইতোমধ্যে অসাধারণ ফ্রি-কিক গোল করেছেন কাতার বিশ্বকাপেই।
কেইনের মতো ব্যর্থ হলেন তিনিও, আর তার শট গোলপোস্টের নেটের উপরে গিয়ে পড়তেই সময় শেষ হয়ে গেল ম্যাচেরও।
তাই আরেকবার বিশ্বকাপের নক-আউট থেকে বিদায় নেওয়ার যন্ত্রণায় পুড়তে হল ইংল্যান্ডকে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা ধরে রাখার দিকে আরেকটু এগিয়ে গেল ফ্রান্স।