কোহলির বিরাট ইনিংসে পাকিস্তানকে হারালো ভারত
লক্ষ্য খুব বেশি বড় ছিল না। কিন্তু সেই লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই দিকহারা ভারত। পাওয়ার প্লে পার না করতেই নেই প্রথম সারির চার উইকেট। এক পাশ আগলে লড়াই শুরু করলেন বিরাট কোহলি, সেই লড়াইয়ে যোগ দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৬.২ ওভার থেকে ১৯.১ পর্যন্ত চললো তাদের লড়াই, দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর সংগ্রাম। শেষের একটু আগে ফিরলেন পান্ডিয়া, কিন্তু অবিচল কোহলি। শেষ পর্যন্ত তার অনবদ্য ইনিংসেই রচিত হলো ভারতের দারুণ এক জয়ের গল্প।
রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সপ্তমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। এই জয়ে ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিলো রোহিত শর্মার দল। ৭ ম্যাচে ভারতের জয় ৫টিতে, পাকিস্তানের জয় এক ম্যাচে। একটি ম্যাচ টাই হয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে পাকিস্তান। শুরুটা ভালো না হলেও শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদের পর শেষ দিকে পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে দুঃস্বপ্নের শুরুর পরও ম্যাচসেরা কোহলি ও পান্ডিয়ার ব্যাটে লড়াই করে জয়ের পথে এগিয়ে যায় ভারত। শেষ ওভারের নাটকীয়তা জিতে পর রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় ভারত।
শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৪৮ রান। শাহিন আফ্রিদির করা ১৮তম ওভার থেকে কোহলির ৩ চারসহ ১৭ রান পায় ভারত। শেষ ১২ বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় ৩১ রান। হারিস রউফের করা ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা মারেন কোহলি, আসে মোট ১৫ রান। শেষ ওভারে সমীকরণটাও এমনই ৬ বলে ১৬ রান।
কিন্তু মোহাম্মদ নওয়াজের করা প্রথম বলেই তুলে মারতে গিয়ে সাজঘরে হার্দিক পান্ডিয়া। পরের বলে দিনেশ কার্তিক এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন কোহলিকে। তৃতীয় বলে ২ রান নেন তিনি। পরের ডেলিভারিট হাই-নো, দারুণ শটে বাতাসে ভাসিয়ে বল সীমানা ছাড়া করেন কোহলি। পরের বলটি ফ্রি-হিট, ওয়াইড দেন নওয়াজ। ফ্রি-হিট থেকে যায়।
এই বলে বোল্ড হন কোহলি, কিন্তু ফ্রি-হিট হওয়ায় বেঁচে যান। দৌড়ে তিন রান পূর্ণ করেন কোহলি-কার্তিক। ২ বলে যখন ২ রান দরকার, তখন স্টাম্পিং হন কার্তিক। এক বলে ২ রান তোলার দায়িত্ব পড়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাঁধে। এমন সময়ে ওয়াইড দেন নওয়াজ। এক বলে এক রান তোলার কাজটি ভালোভাবেই সেরে নেন অশ্বিন। মিড অফের উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে পূর্ণ করে নেন জয়সূচক রানটি।
শেষ ওভারের নাটকীয়তার মতো আগেও নাটকীয়তা ছিল ভারতের ইনিংসে। মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৩১ রানের মধ্যেই লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, সুর্যকুমার যাদব ও অক্ষর প্যাটেল। দিকহারা দলের হাল ধরে পঞ্চম উইকেটে ৭৮ বলে ১১৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন কোহলি-পান্ডিয়া, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে তৃতীয় সেরা জুটি।
এই জুটি গড়ার পথে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩৪তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অনিন্দ্য সুন্দর ব্যাটিং করা কোহলি। ৪৩ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা কোহলি ক্রমেই খুনে হয়ে উঠতে শুরু করেন। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন পান্ডিয়াও। তাদের ব্যাটে যখন জয়ের ছবি আঁকছে ভারত, তখনই বিদায় নেন পান্ডিয়া। ফেরার আগে ৩৭ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন তিনি।
চোখ জুড়ানো শটে দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ানো কোহলি ৫৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান শেষ ১০ বলে করেন ৩০ রান। পাকিস্তানের হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান নাসিম শাহ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তানকে শুরুতেই চেপে ধরেন ভারতের দুই পেসার ভুবনেশ্বর ও আর্শদীপ। ভুবনেশ্বরের করা প্রথম ওভার থেকে মাত্র এক রান পায় পাকিস্তান, সেটাও ওয়াইড থেক্ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই তোপ দাগেন আর্শদীপ, ফিরিয়ে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে। সুইংয়ে শুরু থেকেই ভুগতে থাকা রিজওয়ানও কিছুক্ষণ পর ফেরেন। ৪ রান করা ডানহাতি এই ওপেনারকেও ফেরান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা আর্শদীপ।
৪ ওভারে ১৫ রানে দুই উইকেট। ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানকে অবশ্য বেশি সময় এমন কঠিন অবস্থায় থাকতে হয়নি। মুহূর্তেই উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে লম্বা জুটি গড়েন শান মাসুদ ও ইফতিখার। তৃতীয় জুটিতে ৭৬ রান যোগ করেন এ দুজন। এ সময় ভারতের দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও অক্ষর প্যাটেলের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন ইফতিখার।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ৩৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫১ রানের মহাকার্যকর এক ইনিংস খেলেন আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইফতিখার আউট হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালান শান মাসুদ। যদিও তাকে সঙ্গ দিতে পারেন কেউ, অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজতেই থাকে। শেষের দিকে কেবল শাহিন আফ্রিদি কিছু রান করেন।
৪২ বলে ৫টি চারে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন শান মাসুদ। চোট কাটিয়ে দলে ফেরা শাহিন আফ্রিদি পেসার হয়েও এদিন ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। ৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৬ রান করেন তিনি। শান, ইফতিখার ও আফ্রিদি ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। ভারতের আর্শদীপ ও হার্দিক পান্ডিয়া ৩টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ভুবনেশ্বর ও মোহাম্মদ শামি।