১৪৫ বছরের ইতিহাসে জাকিরের এই কীর্তি মাত্র দ্বিতীয়
প্রথম ইনিংসটা নিয়ে আক্ষেপ হতে পারে জাকির হাসানের। শুরু পেয়েও অভিষেক ইনিংসটা রাঙানো হয়নি বাংলাদেশের বাঁহাতি এই ওপেনারের। চরম হতাশার ব্যাটিংয়ে দলের ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসে ৪৫ বলে ২০ রান করে থামতে হয় তাকে। সেই জাকিরই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে হয়ে উঠলেন ত্রাতা।
বিশাল লক্ষ্যে জাকির জয়ের আশা না জাগাতে পারলেও দলকে পথ দেখানোর মিশনে এমন এক ইনিংস খেললেন, তাতে ৪৭ বছরের পুরনো রেকর্ডে উঠে গেল তার নাম। গড়লেন আরেক কীর্তি, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে যা আগে ঘটেছে মাত্র একবার।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ ও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৪ বলে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় ১০০ রানের ইনিংস খেলেছেন জাকির। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তার আগে কেবল একজন ওপেনার সেঞ্চুরি করার স্বাদ পেয়েছেন।
সেটাও ৪৭ বছর আগের ঘটনা। ১৯৭৫ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার লিওনার্ড বাইচান। এতোদিন রেকর্ডটি তার দখলে ছিল। ৪৭ বছর পর এসে তার রেকর্ডে ভাগ বসালেন জাকির। ১৪৫ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো চতুর্থ ইনিংসে কোনো ওপেনারকে সেঞ্চুরি করতে দেখলো টেস্ট ক্রিকেট।
বাংলাদেশের চরম ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসেই ২৫৪ রানের লিড পায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা, বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১৩ রান। পাহাড় সমান এই লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব বাংলাদেশের জন্য। ৪১৮ রানের বেশি তাড়া করে যে টেস্ট জেতার নজিরই নেই।
আবার দুদিন ব্যাটিং করে ড্রয়ের পরিকল্পনা সাজানোরও সুযোগ নেই, দুদিন ব্যাটিং করতে পারলে বিশাল এই লক্ষ্যও হয়তো পাড়ি দেওয়া সম্ভব। সব মিলিয়ে চাপের বোঝা মাথায় নিয়েই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশ। আর চাপের সময়ই মেলে সঠিক পথ। উদ্বোধনী জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির। যা চতুর্থ ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা।
এই জুটি গড়ার পথে দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শান্ত ১৫৬ বলে ৭টি চারে ৬৭ রান করে থামলেও জাকির এগিয়ে যেতে থাকনে সেঞ্চুরির পথে, শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছান ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের প্রথম ওপেনার হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করলেন তিনি।
তবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার দিক থেকে জাকির বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান। তার আগে নিজেদের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করার নজির গড়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজু। ১০ বছর পর বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন।
আগের তিনটি অভিষেক সেঞ্চুরি বিশেষ বিশেষ কারণে মাইলফলক হয়ে আছে। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় নাম তোলেন বুলবুল। আশরাফুলের সেঞ্চুরিটি এখন অমর, অক্ষয়। ২০০১ সালে অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
আবুল হাসান রাজুর কীর্তিও অমিলন। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসেরই যা মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা। ২০১২ সালে খুলনাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই পেসার। তার আগে কেবল অস্ট্রেলিয়ার আলেক্সান্ডার ডাফের ছিল এই কীর্তি। তবে ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরা ইনিংসটা রাজুরই। জাকিরও অভিষেক সেঞ্চুরিতে ইতিহাসে নিজের নামটি খোদাই করে নিলেন।
দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে এবার বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নেন জাকির। কিছুদিন আগে কক্সবাজারে ভারত 'এ' দলের বিপক্ষে ১৭৩ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ব্যাটিং করে মোকাবেলা করেন ৪০২ বল। এর আগে জাতীয় লিগেও তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা বয়েছে। ৫৫.২৫ গড়ে করেছেন ৪৪২ রান, যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ।
গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগটা (বিসিএল) আরও মধুর কাটে জাকিরের। বিকেএসপি থেকে উঠে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজদের বয়সভিত্তিক পর্যায়ের এই সতীর্থ গত বিসিএলে ৯৯ গড়ে ৩৯৬ রান করেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও উজ্জ্বল ছিলেন তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার, ৪২.৪০ গড়ে করেন ৬৩৬ রান।